ফকির উয়ায়ছী-Fokir:
আগামী ২৩শে অক্টোবর শুক্রবার সারা দেশে পবিত্র আশুরা অর্থাৎ ১০ই মহরম। একটি হাদিসের কথা মনে করিয়েই শুরু করছি। রাছুল সা. বলেছিলেন “নবী সা.কে যতক্ষন প্রানের চেয়েও প্রিয় মনে করতে না পারবে ততক্ষন সে ব্যক্তি মুসলমান হতে পারবে না।”– হাদিস। আর আমার মতে রাছুল সা. এর পছন্দই উম্মতে মুহাম্মদির পছন্দ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে কতই না শোক দিবস পালন হয়। মিডিয়ার বদৌলতে মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলিম অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের প্রানের চেয়েও প্রিয় নবী সা. এর বংশ ইয়াজিদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা হওয়ার পর আমাদের দেশের মিডিয়ার লোকজন সেটা প্রচারে বিরত থাকে কি করে সেটা বোধগম্য নয়? পুরা অগাস্ট মাস জুড়েই টিভি পর্দায় কালো পতাকা দেখা যায়। তাতে কোন কোন দলের মানুষের আপত্তি দেখা যায় কিন্তু মহরম শোকের মাস হিসাবে শোকের চিহ্ন ব্যবহারে কোন মুসলমান সেটায় বিরোধী করার থাকবে না ইয়াজিদের অনুসারী ছাড়া। তারা হয়তো ভুলেই গেছেন যে তারাও যখনই আল্লার দরবারে হাত উঠায় বেহেস্তের জন্য দোয়া করে। কিন্তু বেহেস্তের সর্দার এবং তিঁনার ৬ মাসের মাসুম শিশু আলী আজগর সহ গোটা পরিবার সহ ৭২জনকে যারা হত্যা করেছে তাদের (হত্যাকারী) কথা বেশী বেশী করে মানুষদেরকে জানানো দরকার। এই ঘৃনীত লেবাসধারী দাড়ি, টুপি, জুব্বা পরিহিত নামাজী নামধারী মুসলমান ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকারীদের নাম যেন প্রতিটি মুসলমানের জানা থাকে সে ব্যবস্থা করা উচিৎ। এই বরবর পাষন্ড হত্যাকারীর দল বলেছিলো তারাতাড়ি হুসাইনের কল্লা কাইটা আনো আসরের নামায যেন কাজা না হয়।
ঐ জাহেলের দল চিন্তাও করে নাই নামায পড়ে তাড়া কোন বেহেস্তের আশায়! হ্যায়রে নামাজী। চিন্তায় আসে নাই বেহেস্তের সর্দারের ওখানে স্থান মিলবে কিনা? ঐ জাহেলদের অন্যায় লোক সমাজের সামনে তুলে না ধরে গোপন রাখলে বেহেস্তের সর্দারদের রৌশানল থেকে রেহাই পাবেন না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১০ই মহরম, এই দিনটি যে কি দিবস হিসাবে পালন করা দরকার। বা এই দিনটিতে কি করণীয়। এমনকি কি হিসাবে পালন করা হচ্ছে। সে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষেরই জানা নাই। যারা এই দিনটি সম্পর্কে অবগত তাদের মধ্যে কেউ কেউ শোক পালনের উদ্দেশ্যে রোযা রাখে মাছ, গোস্ত খায় না। খায় শুধু দেহের চাহিদা পুরনের জন্য আমিশ বিহীন খাদ্য। আবার একদল আছে যারা রোযা রাখে এবং ভাল ভাল খাবার খেয়ে খুশী উৎযাপন করেন। হ্যায় কোনটা যে সঠিক আগত দিনের ভবিষ্যত বাসীরা কি করে বুঝবে? সেটার তাদের বিবেচনা করবে চিন্তা করবে আশা নিয়েই লিখছি।
প্রকৃত নবীর উম্মত যারা তারা কিভাবে এই দিনে খুশির দিন হিসাবে পালন করে সেটা বড় নেক্কারজনক বিষয়? কারণ সকলেই জানেন এই দিনেই রাছুল সা. এর চেহারা শাদৃশ্য তিঁনার প্রানপ্রিয় নাতী রাছুল সা. যাদের সন্তান বলে সব সময়ই ডাকতেন। বেহেস্তবাসী পুরুষগনদের সর্দার হযরত হুসাইন আ. এর কল্লা কেটে হত্যা করেছে নামধারী দাড়ি, টুপি, জুব্বা ওয়ালা নামাযী মুসলমানের দল। এই দলের যারা অনুসরনকারী তারা তো খুশি বানাতেই পারেন এমন কি তাদের নেতারাও ১০ই মহরম কারবালার ময়দানে হুসাইন আ. এর মস্তক নিয়ে খেলায় মত্তই ছিলেন।
এক দল আছে শুধু জামাতে নামায আদায় করার দাওয়াত দেওয়াতেই ব্যস্ত অথচ যিঁনি এই নামায আনয়নকারী তিঁনার পছন্দের কর্ম গুলির দিকে মোটেও দৃষ্টিপাত করেন না। শুধু মুসলমানদেরকেই দিনের দাওয়াত দিয়ে বেড়ান নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেরকমই থাকুক সেগুলি বাছ বিচার করার কোন প্রয়োজনই মনে করেন না। এমনকি নিজ পরিবারের কথা যেন একেবারেই ভুলে যান। দাওয়াত যে তার নিজ ঘরেই বেশী প্রয়োজন তা না করে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তারানোই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। এত সোয়াব নিয়ে যে তারা কোন বেহেস্তে যাবে সেটাই প্রশ্ন? বেহেস্তের সর্দারগন যে একে অপরের খুবই ঘনিষ্ট ভাই এবং মা হুসাইন আ. এর। আল্লা পবিত্র কোরআনে একাধিকবার বলেছেন “যার যার বোঝা তাকেই বহন করতে হবে”। তাহলে দাওয়াতের সওয়াব কই যদি সে নিজের আকিদা পরিবর্তন করতে না পারেন। সরকারী চাকুরীজীবি ঘুষ খাওয়া ছাড়া চলতে পারেন না তাহলে জামাতে নামায আদায় করে কি ফায়দা? ব্যবসায়ী ভেজাল দিতে দিতে এই অবস্থায় দাড়ায় যে ভেজাল না দিলে ব্যবসাই করতে পারেন না। তাহলে এই নামাযের ফায়দা কি? ইসলাম প্রচারের জন্য মৌলানা সাহেবগন ফ্রীতে তো কোন কাজ, কোন অনুষ্ঠান/ ওয়াজ মাহফিল এমনকি মুরদার যানাজাও পড়ায় না। তবে এই দাওয়াত নামাযের ফায়দা কি? এখানে একটি হাদিস মনে করে দেওয়া প্রয়োজন মুসনাদে আহমদ হাদিস পুস্তকে উল্লেখিত শক্তিশালী হাদিস “উম্মু দারদা রা. বলেন, একদিন আবূদ দারদা রা. রাগাম্বিত অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে আপনাকে রাগালো? তিনি বললেন “আমি এদের মধ্যে (তাঁর সমসাময়িক মানুষদের মধ্যে) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন নিয়ম-রীতি দেখতে পাচ্ছি না। শুধু এতটুকু দেখতে পাচ্ছি যে, এরা জামাতে নামায আদায় করে।”
রাছুল সা. বলেছেন হুজুরিল কাল্ব ছাড়া নামায নাই। তাহলে এই সব অবৈধ পয়সার অধিকারীদের কাল্ব কিভাবে “হুজুরিল কাল্ব” হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নামায তো পড়া হয় আল্লাকে সেজদা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। নামাযে দাড়িয়ে সূরা ফাতেহায় আমরা বলি (ইয়া’কা না’বুদু, ওয়া ইয়া কানা’সতাইন) অর্থ- “আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” আল্লা তৎক্ষনাত কিছু বলেননা তাই প্রতি ওয়াক্তে ওয়াক্তে আল্লার সাথে প্রত্যারনা করা হচ্ছে।
একবার চিন্তা করেন দেখবেন আপনার অধিনস্ত কোন মানুষ কিছু চুরি করার পর মাফ চায় আপনি কতবার মাফ করবেন। অপরাধিকে আপনি এই প্রশ্ন কি করবেন না যে, আর কতবার মাফ করবো? আল্লা জিজ্ঞাসা করে না এবং সাথে সাথে কোন বিচার করে না বিধায় প্রতি ওয়াক্তেই প্রত্যারনার সাহস পায় মানুষ।
রাছুল সা. এর মেরাজের আগে ১০ই মহরমের রোজা ফরজ ছিল। মেরাজে রমজানের ৩০ রোজা ফরজ হওয়ার পর এই রোজাটা নফল হিসাবে রাছুল সা. পালন করতেন ওফাতের আগ পর্যন্ত। ১০ই মহরমের একটি রোজার পরিবর্তে ৩০ রোজা ফরজ হয়েছে অর্থাৎ মহরমের ১রোজা সমান ৩০রোজার সোয়াব বুঝানোর জন্য সেটা বললে ভুল হবে কি? যখন ১০ই মহরমের রোজা ফরজ ছিলো। এটা নফল হওয়ার পরও এই রোজার সোয়াবের কম হওয়ার কোন সুযোগ নেই আমার বিশ্বাস।
১০ই মহরম এর দিন যারা ভাল ভাল খেয়ে খুশী উৎযাপন করেন তাদেরও অধিকাংশই জানেন না যে কেন রোযা রাখছেন এবং কেন ভাল ভাল খাচ্ছেন। যারা খাচ্ছেন তাদের দোষ কি তারা সঠিক ঘটনাটা শুনেন নাই এই জন্য জানার চেষ্টাও করেন নাই। নবী সা. বংশ যারা নিধন করেছেন তারা প্রচার করেছে এই বলে যে আজকের দিনে মুসা আ. ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন সেই খুশীতে খাবেন এবং তাদেরও খাওয়াবেন। আরে সাধারন ভাবেই চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন সাড়াদিন কষ্ট করে ভাল খেতে হবে কেন? ঈদুল আযহার দিনে তো রোযা রেখে ভাল খেতে হয় না এমনিতে সকলেই ভাল খায়। তবে কেন রাছুল সা. যেদিন ফরয রোজা হিসাবে পালন করেছেন মেরাজের আগ পর্যন্ত সেদিন কেন খুশি পালন করবেন? এই দিনটিতে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ শোক পালন করার উদ্দেশ্যে রোযা রাখে মাছ গোস্ত খায় না শুধু শরীরের প্রয়োজনে আহার করে তাদেরকে ইয়াজিদের অনুসারীরা শিয়া নামে ভূশিত করেছেন। এই শিয়া নামের খেতাবটি বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সা. এর এবং নবীজীর বার্তা বাহক জিব্রাইল আ. এর জানা ছিল না এমনকি আল্লা এই মুসলমানদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেন নাই। যদি করতো তবে অবশ্যই কোরআনের কোথাও শিয়া হওয়ার জন্য মানুষকে বলতেন। যারা এই নাম করণ করেছেন তারা আল্লা এবং রাছুলের চেয়েও বড় ইমানদার হওয়ার চেষ্টায় আছেন বলেই মনে হয়।(নাউজুবিল্লাহ্)। এই কথা মনে হওয়ার কারণ নবী পরিবারের পক্ষে কেউ কোন মন্তব্য করলেই এই ইয়াজিদের অনুসারীরা এক কথায় শিয়া বলে অবহিত করেন।
১০ই মহরহ এই দিনটিতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আলোচনা করলেই বিচক্ষন ব্যক্তিগন সত্য উদঘাটন করতে সুবিধা হবে এবং সেই মতে এই বৎসর আশুরা পালন করতে সুবিধা হবে। ১০ই মহরম তারিখে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা প্রবাহ নিম্নে:
১/ এই দিন আদম আ. কে আল্লা সৃষ্টি করলেন এবং এরকম মহরমের এই দিনে ‘মা’ হাওয়ার সঙ্গে মিলিত হন আদম আ. এবং এইরকম একটি দিনেই আল্লা আদম আ. এর তওবা কবুল করেছিলেন।
২/ এই দিনেই নূহ আ. এর জাহাজ জুদি পর্বতে (কারবালা প্রান্তরে) এসে থেমে যায়।
৩/ এই দিনেই ইব্রাহিম আ.কে নমরুদ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেন এবং ইব্রাহিম আ. রক্ষা পায়।
৪/ এই দিনেই মুসা আ. বনি ইসরাইল বাসীদের নিয়ে নীল নদী পাড়ি দেন এবং মুসা আ.কে তারা করা ফেরাউন দল বল সহ নীল নদীতে ডুবে মরে।
৫/ এই দিনেই নবী পরিবারের আখেরী নিশান হযরত হুসাইন আ. তার দুধের শিশু সহ এজিদের হাতে নিমর্মভাবে শহীদ হন।
৬/ ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
৭/ হাদিসে এরকমও শুনা যায় যে ১০ই মহরমেই এই দুনিয়া ধ্বংস হবে।
উক্ত ঘটনাগুলি সবই ১০ই মহরম তারিখেই সংঘঠিত হয়েছে এবং এমন আরো কত কিনা ঘটেছে এবং ঘটবে।
ভালভাবে চিন্তা করে এখন থেকে সামনের বছর গুলিতে বেহেস্তর সর্দারদের উদ্দেশ্যে পালন করে বেহেস্তের অংশীদার হতে চেষ্টা করবেন নাকি তাঁদের রৌশানলে পরার মত করে দিনটি পালন করবেন।
আল্লা কোরআনে “মুসলমান না হয়ে মরতে নিষেধ করেছেন” একাধিক আয়াতে। সুন্নি বা শিয়ার কথা বলেন নাই। যে বা যারা স্বার্থ হাসিলের জন্য বা যে গরজে শিয়া সুন্নী ভাগ করে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন হাশরের ময়দানে তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি তাদের অনুসারীরাও রেহাই পাবেন না। বিশ্বনবীকে অনুসরন করে যে বা যারাই ইসলামের জন্য সত্য সঠিক কাজ করবেন সেটাই মুসলমানের কাজ হবে সুন্নি বা শিয়া হওয়ায় কিছু যায় আসবে না আল্লা বা রাছুল সা. এর। কারণ আবারও বলছি আল্লা রাছুল শিয়া সুন্নি ভাগ করেন নাই। একজন ঘুশখোর সুন্নি আর একজন নির্অপরাধ শিয়া বা বিধর্মী জ্ঞানীদের বিচারে কে উত্তম? ভুলে গেলে চলবে না হাশরের ময়দানে স্বার্থনেশীদের ফতোয়া কারোরই কোন কাজে আসবে না। যার যার হাত পা এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গই স্বাক্ষী দিবে। এবং যারা নামায পড়েন তাদেরও মনে রাখা উচিৎ যখন নামায পড়েন তখন রাছুল সা. এর পরিবারের উপর দরুদ সালাম এবং ইব্রাহিম আ. এর উপর দরুদ সালাম পেশ না করলে নামাযই হয় না। সেখানে ১০ই মহরম এইসব পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে মুসা আ. জন্য খুশী পালন করেন। এই সকল কর্মকান্ডের জন্য মানুষ মুনাফেকে পরিনত হয়। এইসব বিভ্রান্ত কর্ম করে তারা আবার বেহেস্ত আশা করে নোংরা স্বজনপ্রীতি করে বেহেস্তে যেতে চান। তারা ভুলে যান সেই বেহেস্তের সর্দাদের অনুমতি ব্যতীত ঢুকবেন কিভাবে? তাও মনে শান্তি হতো যদি মানুষ মুসা আ. এর কথা না বল খুশির জন্য বলত দুনিয়া সৃষ্টি বা আদম আ. এর জন্মের খুশিতে মহরম পালন করছেন অথবা ইব্রাহিম আ. এর অগ্নি হতে রক্ষা পাওয়ার খুশী পালন করছেন তাতেও মনকে প্রবোধ দেওয়া যেত। যেহেতু ইব্রাহিম আ. মুসলমানের জাতির পিতা। এবং আল্লা আদেশ করেছেন ২২:৭৮#“তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক”। আমার ধারনা মুসা আ. নবীর কোন বংশধর যদি থাকতো তবে আমাদের আখেরী নবীর বংশধরের শোকেই শোক পালন করতেন।