আজঃ বৃহস্পতিবার | ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
Home / ফকির উয়ায়ছী / প্রবন্ধ / রাছুল সা. মনোনীত ইমামতের প্রথম প্রধান ইমাম

রাছুল সা. মনোনীত ইমামতের প্রথম প্রধান ইমাম

লিডার পিসফকির উয়ায়ছী-Fokir:

অনেক দিন যাবৎ ভাবচ্ছি ১২ ইমাম সম্পর্কে কিছু লিখার কথা। লিখতে গেলেই মনে ভীতি জন্ম হয় কি লিখবো কিভাবে শুরু করবো না জানি কি ভুল হয়ে যায় কোন বেয়াদবি হয়ে যায় মনের অজান্তে। কিন্তু না লিখতে পারলে যে মনের অশান্তি রয়ে যাবে সেটা মিটাতেও পারবো না। যা হোউক আজ সাহস করে লিখতে শুরু করছি ভুল ত্রুটি ধরা পরলে যে যদি কেউ সতর্ক করে কৃতজ্ঞ হবো।১২ ইমামের প্রথম নামটি সকলেরই জানা তবুও আমাকে তো উল্লেখ করতেই হবে। যিঁনি একাধিক উপাধিতে ভূষিত আমাদের রাছুল সা. তিঁনাকে আবু তৌরাব (মাটির পিতা) বলেই ডাকতেন।
ইমামতের প্রমথ ইমাম
নাম: হযরত আলী
পিতা: আবু তালিব ইবনে আব্দুল মোত্তালিব
মাতা: ফাতিমা বিনতে আসাদ
জন্মস্থান: মক্কায় কাবা ঘরের ভিতর।
জন্ম: ১৩ই রজব।
মৃত্যু(ওফাত): ৪০ হিজরীর ২১ রমজান।
মাযার: ইরাকের নাজাফে।
হযরত আলী আ. জন্ম হয় কাবা ঘরের ভিতরে। ভুমিষ্ট হওয়ার দিন কাবা ঘর পরিষ্কার করার দ্বায়ীত্ত্ব পরেছিলো ফাতিমা বিনতে আসাদ (আলী মাতা) এর উপর। পরিষ্কার করে বের হবে এমন সময় লু-হাওয়া উতপ্ত বালির ঝড় শুরু হয়। আলী আ. এর মাতা আটকা পড়েন সেখানেই প্রসব বেদনা উঠে আলী আ. ভুমিষ্ট হয়। ভুমিষ্ট হওয়ার পর শিশুটি কাউকে ধরতে দিচ্ছিল না। শিশুটির হাতের নখ ছিলো খুব ধারালো যেই কোলে নিচ্ছিল তাকেই খামছি দিচ্ছিলো। রাছুল সা. এর কাছে খবর পৌচ্ছায়। রাছুল সা. আসেন এসে কোলে নেয় শিশুটি চোখ খুলেই প্রথমে রাছুল সা. এর মুখ দর্শন করেন। রাছুল সা. আলী মুখে নিজের জিহবাটি দিলে লালা চুষে নেয়।

নবীর আহলে বায়াত বা ১২ ইমাম সম্পর্কে কোন কথা বললেই লোকে শিয়া বলে এবং তিরষ্কার করে। সে তিরষ্কার লোকে গালি মনে করলেও সেটা আমি কষ্ট নেই না কারণ আমি বুঝে নেই যারা বলছে শিয়া শব্দটির প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা তারা জানে না। শিয়া শব্দটির অর্থ অনুসারী। যারা শিয়া বলে তিরষ্কার করছেন তারাও তো কার না কারো অনুসারী এবং তারাও শিয়া সেটা বুঝেই না। যাই হোউক আমি সুন্নি এবং শিয়া মাজহাবের মধ্যে নিজেকে সুন্নি বলতেই গর্ভবোধ করি। কারণ আমার পূর্ব পুরুষগন নিজেদের সুন্নি বলে পরিচয় দিয়ে গেছেন। তবে একটি কথা না বললেই নয়। আমি আল্লা এবং রাছুল সা. সুন্নত পালনকারী হিসাবেই সুন্নি বলতে গর্ভবোধ করি। হযরত আলী আ. সম্পর্কে নবী এত সুন্দর কথা রাছুল সা. বলেছেন যা অন্য কোন সাহাবা সম্পর্কে বলেন নাই। আর আল্লা কোরআনে বলেছেন “রাছুল নিজ থেকে কিছুই বলেন না”।-সূরা নযম ৫৩:৩-৪। আল্লা যখন রাছুল সা. এর প্রতি সূরা আশ-শুয়ারা ২৬:২১৪# “আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন”। এই আয়াত নাজিলের পর রাছুল সা. কুরায়েশদের একে একে তিন দিন ভুড়ি ভোজন করিয়ে নবীর সাথে ইসলামের জন্য সাথ দেওয়ার আহবান জানালেন। প্রথম দিন আহবানের পর খেয়ে সবাই চলে গেলো। হযরত আলী দাড়িয়ে বললেন আমি প্রস্তুত আছি। হাজিরানা মজলিসে আলী ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক। দ্বিতীয় দিন একই ভাবে দাওয়াত দেওয়া হলো সেদিন একমাত্র হযরত আলী ছাড়া কেউই উঠে দাড়ায় নাই সবাই চলে গেলো। রাছুল সা. এর আদেশে তৃতীয়দিন আবার দাওয়াত দেওয়া হলো। সেদিনও হযরত আলী উঠে দাড়ালেন রাছুল সা. এর সাথ দেওয়ার জন্য আর সকলেই চলে গেলেন। তৃতীয় দিন রাছুল সা. হযরত আলীকে বায়াত পরিয়ে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য রাছুল সা. এর সঙ্গী করলেন এবং একসাথে নামায আদায় করলেন। ইসলাম গ্রহন করার সময় হযরত আলী আ. এর বয়স ছিলো ৮ বৎসর। ছোট বেলা থেকেই হযরত আলী ছিলো অসম সাহসী। খন্দকের যুদ্ধের সময় কাফেরদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা আমর ইবনে আবদ রাছুল সা. সামনা সামনি যুদ্ধ করার জন্য ব্যঙ্গ করছিলেন। সেখানে উপস্থিত বড় বড় সাহাবা ছিল সবার মাঝেই রাছুল সা. বলেছিলেন এখানে এমন কি কেউ নেই যে আমরের মুখ বন্ধ করতে পারে। হযরত আলী বলেছিলেন আমাকে অনুমতি দেন। রাছুল সা. হযরত আবু বকরকে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানায়। এরপর হযরত ওমরকে বললেন তিনি উত্তরে বললেন আমি ওর সামনে দাড়ানো সাহস রাখি না আমাকে মেরে ফেলবে। এবারও হযরত আলী বললেন আমাকে অনুমতি দেন। রাছুল সা. হযরত ওসমানকে বললেন তিনি বললেন আমি কোনদিন যুদ্ধ করিনি আমি কিভাবে তার সামনে যাবো? তখনও হযরত আলী বললেন আমাকে অনুমতি দেন। অত:পর রাছুল সা. অনুমতি দিলেন যেতে। হযরত আলী যখন আমরের সামনে উপস্থিত হলো তখন আমর ব্যঙ্গ করে বলছিলো মুহাম্মদ তোমাদের কারই সাহস নাই এই বালককে পাঠিয়েছো আমার সাথে লড়তে জবাবে হযরত আলী বললেন তুমি আমাকে দেখো না তলোয়ার দেখো এবং তুমি তোমার তলোয়ার চালাও। খুব্ধ আমর তলোয়ার চালালো হযরত আলী সেটা প্রতিহত করে তলোয়ার চালালো আমর দ্বিখন্ডিত হয়ে মাটিতে পরলো। হযরত আলী সোজা রাছুল সা. সামনে দাড়ালে হযরত ওমর বলছিলেন আমরের শরীরে অনেক স্বর্ণালংকার ছিলো। উত্তরে হযরত আলী বলেছিলেন, সেদিকে আমার লক্ষ ছিলো না। রাছুল সা. ভিন্ন ভিন্ন নামে হযরত আলীকে ডাকতেন। মক্কা হিজরতের সময় সময় আলীকে রাছুল সা. এর বিছানায় শুতে বলেছিন। হযরত আলী জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি এখানে শুলে আপনি নিশ্চিন্ত হবেন। রাছুল হ্যাঁ বলেছিলেন। আলী আ. তখন বলেছিলেন আজ আমি শান্তিতে ঘুমাবো। অনেক কিছুই হযরত আলী সম্পর্কে আপনারাই হয়তো আমার চেয়ে ভাল জানেন। আমি কিছু কিছু উল্লেখ করছি মাত্র। আল্লা বলেছেন নবী নিজ থেকে যেহেতু কিছুই বলতেন না। সেহেতু মা ফাতেমার বিবাহ দান সেটাও আল্লার সম্মতিতেই দিয়েছেন রাছুল সা.। গাদিরে খুমে ভাষনে রাছুল সা. বলেছিলেন হাদিসে পাওয়া যায়। “আমি যার মওলা, এই আলীও তার মওলা”। “মুনাফেক ব্যতীত আলীকে কেউ গালি দেয় না; আর মুমিন ব্যতীত আলীকে কেউ ভালবাসবেনা”। রাছুল সা. এর ওফাতের পর সাহাবাগন যখন রাছুল সা. লাশ ফেলে চলে গিয়েছিলেন লুটের মাল বন্টনের স্থান বনি সাইদায় খেলাফতের গদ্দি হাসিলের জন্য প্রায় তিনদিন পর ফিরে আসে সাহাবাগন। এসে দেখে হযরত আলী আ. দাফন করে ফেলেছেন। সে দলের লোক সকল এসে বলছিলো নবী লাশ মুবারক উঠিয়ে আবার জানাযা করবেন। তখন হযরত আলী নবীর কবরের উপর দুই পা দুদিক দিয়ে খালি শরীরে খোলা তরবারী নিয়ে বলেছিলো যে এক পা সামনে বাড়াবে তার ঘাড়ের উপর মাথা থাকবে না। তখন নব্য খলিফা হযরত আবু বকর সকলকে বাধা দিয়ে বলেন। আমার মনে পরছে মুহাম্মদ বলেছিলো আলী যদি নাঙ্গা বদনে (খালি শরীরে) খোলা তরবারী হাতে মাটির ঘোড়ায় সওয়ার হয় তখন তোমরা কেউ তার সামনে যেও না কেউ রেহাই পাবে না। মুহাম্মদ যে এই মাটির ঘোড়ার কথা বলেছিলো সেটা বুঝতে পারি নাই। তোমরা সকলেই পিছিয়ে যাও এবং কবর সামনে নিয়েই জানাযার নামায আদায় করো। খেলাফতের দ্বায়ীত্ত্ব সকলেই ইচ্ছাতেই গ্রহন করেছে। কিন্তু হযরত আলীকে বাধ্য হয়েই খেলাফতের দ্বায়ীত্ত্ব নিতে হয়েছিলো। তারপরও হযরত আলী শর্ত দিয়েছিলো তালহা এবং যুবায়ের যদি আমার হাতে বায়াত গ্রহন করে তবেই সে খেলাফতি গ্রহন করবো। সেখানের মানুষ ধরে এনে তাদের বায়াত গ্রহনে বাধ্য করে। তালহা যুবায়ের মওলা আলীর হাতে বায়াত হয়েছিলো। বায়াত হওয়ার পর পরই চলে যায় মুয়াবিয়া চক্রান্তকারীদের সাথে হাত মিলাতে। শামিল করে নবী পত্নী হযরত আয়েশাকেও এবং জঙ্গে জামালের যুদ্ধে হযরত আলীর বিপক্ষে যুদ্ধ করে। খেলাফতের আনুমানিক পাচ বছর পার হলে ১৯শে রমযান ফযর নামাযের সময় আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম সেজদারত অবস্থা হযরত আলীর ঘাড়ে কোপ দেয় ২১শে রমযান ৬৩ বৎসর বয়সে মওলা আলী আ. মাটির উপর থেকে প্রস্থান করেন।

About Fokir Owaisi

আরও দেখুন

এজিদের রক্ত বংশের অনুসারীদের খুশি উৎযাপনের মাস মহরম। পর্ব-১

এজিদের রক্ত বংশের অনুসারীদের খুশি উৎযাপনের মাস মহরম। পর্ব-১ ====================================================== ফকির উয়ায়ছী: আগামী ২১লা সেপ্টেম্বর …

৩ comments

  1. shotto lekhoni,allah apnar mongol koruk .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *