ফকির উয়ায়ছী:
আগামী ২৭শে জুন ২০১৬ ইং রোজ সোমবার আরবী ২১শে রমজান এই দিনটির কথা আলেমগন নাজাতের প্রথম দিন হিসাবেই মনে করে। তাতে আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আফসোস লাগে। এই দিনটি আল্লার রাছুল সা. এর ইহকাল এবং পরকালের ভাই আত তাহীর= ‘মহা পবিত্র’, ‘সমস্ত ধার্মীকদের ইমাম’= ইমামুল মোত্তাকীন, ‘রাছুল সা এর সাহায্যকারী’= নাছিরে রাছুলুল্লাহ, ‘রাছুল সা. এর জীবন চরিত্র’= নফসে আর রাছুলুল্লাহ, ‘ঈমানের স্তম্ভ’= মানারুল ঈমান, ‘হেদায়েতের নিশান’= বায়াতুল হুদা, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী’= ফারুকে আযম, ঈমামতের প্রমথ এবং প্রধান ঈমাম মাটির পিতা= আবু তৌরাব, ‘সমস্ত ধার্মীকদের প্রভু’= ওয়ালীউল মোত্তাক্বীন দুনিয়ার মায়া ত্যাজ্ঞ করে চলে গিয়েছেন। ৪০ হিজরীর ২১ রমজান মৃত্যু(ওফাৎ)। জন্ম: ১৩ই রজব। জন্মস্থান মক্কার কাবা ঘরের ভিতর হলেও মাযার: ইরাকের নাজাফে। পিতা: আবু তালিব ইবনে আব্দুল মোত্তালিব। মাতা: ফাতিমা বিনতে আসাদ। আপনার অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন আমি সমস্ত বিস্বাসীদের প্রধান= আমীরুল মোমেনীন, হযরত আলী আবু তালিব আ. এর কথাই বলছি।
তিঁনি ছিলেন সর্বাধিক এবাদতকারী= আল আবিদ, অশেষ জ্ঞানী= আল আনজাউল বাতিন, হেদায়েতকারী= আল হাদী, শ্রেষ্ঠ সঠিক পথ অর্জনকারী= আল মাহদী, বিশ্বাসীদের বাদশা= ইয়াছুবুল মোমেনীন হযরত আলী আ. জন্ম হয় কাবা ঘরের ভিতরে। ভুমিষ্ট হওয়ার দিন কাবা ঘর পরিষ্কার করার দ্বায়ীত্ত্ব পরেছিলো মহা সত্যবাদী= আস ছাদিকের এর মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ এর উপর। পরিষ্কার করে বের হবে এমন সময় লু–হাওয়া উতপ্ত বালির ঝড় শুরু হয়। আল্লার অনুমোদিত= আল মর্তুজা এর মাতা আটকা পরেন। সেখানেই প্রসব বেদনা উঠে এবং আল্লার সিংহ= আসাদ উল্লাহ ভুমিষ্ট হয়। ভূমিষ্ট হওয়ার পর শ্রেষ্ঠ বন্ধু= আল হাবীব কাউকে ধরতে দিচ্ছিল না। শিশুটির হাতের নখ ছিলো খুব ধারালো যেই কোলে নিতে চেষ্টা করছিলো তাকেই খামছি দিচ্ছিলো। রাছুল সা. এর কাছে খবর পৌচ্ছায়। রাছুল সা. আসেন এসে কোলে নেয় দোজাহানের ভাইকে চোখ খুলেই প্রথমে রাছুল সা. এর মুখ দর্শন করেন। রাছুল সা. হযরত আলী মুখে নিজের জিহবাটি দিলে লালা চুষে নেয়। রাছুল সা. এর কাছে হযরত আলী ছিলেন মুসার কাছে হারুন যেমন। রাছুল সা. এর উজির= উজীরে রাছুলুল্লাহ।রাছুল সা. এর জুতা সেলাইকারী= খাসিফুল নাল, রাছুল সা. এর খলিফা= খলিফায়ে রাছুলুল্লাহ হযরত মওলা আলী ছিলেন ‘সদা সত্যবাদীদের শ্রেষ্ঠ’= সিদ্দিকুল আকবর।
আর রা–কে= ‘সবচেয়ে বেশী রুকুকারী’ মওলা আলী আহলে বায়াত বা ১২ ইমাম সম্পর্কে কোন কথা বললেই লোকে শিয়া বলে এবং তিরষ্কার করে। সে তিরষ্কার লোকে গালি মনে করলেও সেটা আমি কষ্ট নেই না। কারণ আমি বুঝে নেই যারা বলছে; শিয়া শব্দটির প্রকৃত অর্থের ব্যাখ্যা তারা জানে না। শিয়া শব্দটির অর্থ অনুসারী। যারা শিয়া বলে তিরষ্কার করছেন তারাও তো কার না কারো অনুসারী এবং তারাও শিয়া সেটা বুঝেই না। যাই হোউক আমি সুন্নি এবং শিয়া মাজহাবের মধ্যে নিজেকে সুন্নি বলতেই পছন্দ করি। কারণ আমার পূর্ব পুরুষগন নিজেদের সুন্নি বলে পরিচয় দিয়ে গেছেন। তবে একটি কথা না বললেই নয়। আমি আল্লা এবং রাছুল সা. সুন্নত পালনকারী হিসাবেই সুন্নি বলে তৃপ্তি পাই।
মিছালে হারুন= ‘হারুনের উপমা’ হযরত আলী আ. সম্পর্কে নবী এত সুন্দর কথা রাছুল সা. বলেছেন যা অন্য কোন সাহাবা সম্পর্কে বলেন নাই। আর আল্লা কোরআনে বলেছেন “রাছুল নিজ থেকে কিছুই বলেন না”।–সূরা নযম ৫৩:৩–৪। আল্লা যখন রাছুল সা. এর প্রতি সূরা আশ–শুয়ারা ২৬:২১৪# “আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন”। এই আয়াত নাজিলের পর রাছুল সা. কুরায়েশদের একে একে তিন দিন ভুড়ি ভোজন করিয়ে নবীর সাথে ইসলামের জন্য সাথ দেওয়ার আহবান জানালেন। প্রথম দিন আহবানের পর খেয়ে সবাই চলে গেলো। আস সাজিদ =‘সবচেয়ে বেশী সেজদাকারী’ হযরত আলী দাড়িয়ে বললেন আমি প্রস্তুত আছি। হাজিরানা মজলিসে আল ওয়াসী= ‘সমস্ত প্রশাসকদের একক প্রশাসক’ হযরত আলী ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক। দ্বিতীয় দিন একই ভাবে দাওয়াত দেওয়া হলো সেদিন একমাত্র আল আমীন= ‘বিশস্ততম ব্যক্তি’ হযরত আলী ছাড়া কেউই উঠে দাড়ায় নাই; সবাই চলে গেলো। রাছুল সা. এর আদেশে তৃতীয়দিন আবার দাওয়াত দেওয়া হলো। সেদিনও আল কোরাম= ‘পুরুষ সিংহ’ হযরত আলী উঠে দাড়ালেন রাছুল সা. এর সাথ দেওয়ার জন্য আর সকলেই চলে গেলেন। তৃতীয় দিন রাছুল সা. এবং ইমামুল আউলিয়া= ‘সমস্ত আউলিয়াগনের ইমাম’ হযরত আলীকে বায়াত পরিয়ে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য রাছুল সা. এর সঙ্গী করলেন। এবং ওয়ালী উল্লাহ= ‘আল্লার বন্ধু’ নিয়ে একসাথে সন্তুষ্টির সেজদা দিলেন। ইসলাম গ্রহন করার সময় ছায়ফুল্লাহ= ‘আল্লার খোলা তলোয়ার’ হযরত আলী আ. এর বয়স ছিলো ৮ বৎসর। ছোট বেলা থেকেই কোবাব আয়নুল ফীতনা=‘ সৃষ্ট ঝগড়াঝাটি রোধকারী’ হযরত আলী ছিলো অসম সাহসী। খন্দকের যুদ্ধের সময় কাফেরদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা আমর ইবনে আবদ রাছুল সা. সামনা সামনি যুদ্ধ করার জন্য ব্যঙ্গ করছিলেন। সেখানে উপস্থিত বড় বড় সাহাবাগন। সবার মাঝেই রাছুল সা. বলেছিলেন এখানে এমন কি কেউ নেই যে আমরের মুখ বন্ধ করতে পারে। মিছালে ঈসা= ‘ঈসা আ. এর উপমা’ হযরত আলী বলেছিলেন আমাকে অনুমতি দেন। রাছুল সা. হযরত আবু বকরকে বললেন বকর অস্বীকৃতি জানায়। এরপর বললেন হযরত ওমরকে তিনি উত্তরে বললেন আমি ওর সামনে দাড়ানোর সাহস রাখি না ও আমাকে মেরে ফেলবে। এবারও আস শহিদ= ‘আল্লার রাস্তায় আত্মদানকারী’ হযরত আলী বললেন আমাকে অনুমতি দেন। রাছুল সা. হযরত ওসমানকে বললেন তিনি বললেন আমি কোনদিন যুদ্ধ করিনি আমি কিভাবে তার সামনে যাবো? তখনও খাইরুল ওয়াছীয়ীন= ‘সমস্ত প্রশাসকদের শ্রেষ্ঠতম’ হযরত আলী বললেন আমাকে অনুমতি দেন। অত:পর রাছুল সা. অনুমতি দিলেন যেতে। খাতামুল ওয়াছীয়ীন= ‘সমস্ত প্রশাসকদের সীল মহর’ হযরত আলী যখন আমরের সামনে উপস্থিত হলো তখন আমর ব্যঙ্গ করে বলছিলো মুহাম্মদ তোমাদের কারোরই সাহস নাই। এই বালককে পাঠিয়েছো আমার সাথে লড়তে। জবাবে ওয়ারীশে রাছুলুল্লাহ= ‘রাছুল সা. এর উত্তরাধিকারী’ হযরত আলী বললেন তুমি আমাকে দেখোনা; তলোয়ার দেখো এবং তুমি তোমার তলোয়ার চালাও। খুব্ধ আমর তলোয়ার চালালো আল মোমিন= ‘সঠিক বিশ্বাস স্থাপনকারী’ হযরত আলী সেটা প্রতিহত করে তলোয়ার চালালো আমর দ্বিখন্ডিত হয়ে মাটিতে পরলো। আস সাফা= ‘সবচেয়ে পছন্দনীয়’ হযরত আলী সোজা রাছুল সা. সামনে ফিরে এসে দাড়ালে হযরত ওমর বলছিলেন আমরের শরীরে অনেক স্বর্ণালংকার ছিলো। উত্তরে আমীরুল নাহেল = ‘মৌমাছির রাজা’ হযরত আলী বলেছিলেন, সেদিকে আমার লক্ষ ছিলো না। রাছুল সা. ভীন্ন ভীন্ন নামে হযরত আলীকে ডাকতেন। তার মধ্যে ৫০টি নাম এই পোষ্টে উল্লেখ করেছি।
মক্কা হিজরতের সময় সময় হযরত আলীকে রাছুল সা. এর বিছানায় শুতে বলেছিন। আস শাহিদ= ‘সাক্ষ্যদানকারী’ হযরত আলী জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি এখানে শুলে আপনি নিশ্চিন্ত হবেন। রাছুল হ্যাঁ বলেছিলেন। জুল উজনুল ওয়ারী= ‘প্রখর সৃতিমক্তি সম্পন্ন কান’ আলী আ. তখন বলেছিলেন আজ আমি শান্তিতে ঘুমাবো। হযরত আলী সম্পর্কে আমার জ্ঞান আপনাদের তুলনায় অতি নগন্য। আল্লা বলেছেন নবী নিজ থেকে যেহেতু কিছুই বলতেন না। সেহেতু মা ফাতেমার বিবাহ দান সেটাও আল্লার সম্মতিতেই রাছুল সা. করেছিলেন ইমামুল বারারাহ= ‘নিস্পাপীদের ইমাম’ এর সাথে। গাদিরে খুমে ভাষনে রাছুল সা. বলেছিলেন হাদিসে পাওয়া যায়। “আমি যার মওলা, এই আলীও তার মওলা”। “মুনাফেক ব্যতীত আলীকে কেউ গালি দেয় না; আর মুমিন ব্যতীত আলীকে কেউ ভালবাসবেনা”। রাছুল সা. এর ওফাতের পর সাহাবাগন যখন রাছুল সা. লাশ ফেলে চলে গিয়েছিলেন লুটের মাল বন্টনের স্থান বনি সাইদায় খেলাফতের গদ্দি হাসিলের জন্য প্রায় তিনদিন পর ফিরে আসে সাহাবাগন। এসে দেখে খায়রুল বাশার =‘মানবকুলের শ্রেষ্ঠ মানব’ হযরত আলী আ. দাফনের কাজে শেষ করেছেন। সে দলের লোক সকল এসে বলছিলো নবী লাশ মুবারক উঠিয়ে আবার জানাযা করবেন। তখন হযরত আলী নবীর কবরের উপর দুই পা দুদিক দিয়ে খালি শরীরে খোলা তরবারী নিয়ে বলেছিলো যে এক পা সামনে বাড়াবে তার ঘাড়ের উপর মাথা থাকবে না। তখন নব্য খলিফা হযরত আবু বকর সকলকে বাধা দিয়ে বলেন। আমার মনে পরছে মুহাম্মদ বলেছিলো আলী যদি নাঙ্গা বদনে (খালি শরীরে) খোলা তরবারী হাতে মাটির ঘোড়ায় সওয়ার হয় তখন তোমরা কেউ তার সামনে যেও না কেউ রেহাই পাবে না। মুহাম্মদ যে এই মাটির ঘোড়ার কথা বলেছিলো সেটা তখন বুঝতে পারি নাই। তোমরা সকলেই পিছিয়ে যাও এবং কবর সামনে নিয়েই জানাযার নামায আদায় করো। জাব্বাতুল জান্নাত= ‘বেহেস্তের চার পায়া’ হযরত আলী বাধ্য হয়েই সকলের ইচ্ছাতে খেলাফতের দ্বায়ীত্ত্ব নিয়েছিলেন। তারপরও আল জাহীদ= ‘শ্রেষ্ঠ ধার্মীক’ হযরত আলী শর্ত দিয়েছিলো তালহা এবং যুবায়ের যদি আমার হাতে বায়াত গ্রহন করে তবেই সে খেলাফতি গ্রহন করবো। সেখানের মানুষ তালহা যুবায়েরকে ধরে এনে বায়াত গ্রহনে বাধ্য করায়। তালহা যুবায়ের আল ক্বারী= ‘শ্রেষ্ঠ কোরান তেলোয়াতকারী’ মওলা আলীর হাতে বায়াত হয়েছিলো। বায়াত হওয়ার পর পরই চলে যায় মুয়াবিয়া চক্রান্তকারীদের সাথে হাত মিলাতে। শামিল করে নবী পত্নী হযরত আয়েশাকেও এবং জঙ্গে জামালের যুদ্ধে হযরত আলীর বিপক্ষে যুদ্ধ করে হযরত আয়েশা সহ। খেলাফতের আনুমানিক পাচ বছর পার হলে ১৯শে রমযান ফযর নামাযের সময় আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম সেজদারত অবস্থা আছ সাকী= ‘হাউজে কাওসারের সরাব পান করাইবেন যিঁনি’ হযরত আলীর ঘাড়ে কোপ দেয় ২১শে রমযান ৬৩ বৎসর বয়সে আস শহিদ= ‘আল্লার রাস্তায় আত্মদানকারী’ মওলা আলী আ. মাটির উপর থেকে প্রস্থান করেন।
ভালোবাসা অবিরত, এ লেখার উত্তম প্রতিদান তিনিই দিবেন।
ধন্যবাদ। শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিবেন আশা রাখি। সাইটটা সম্পর্কে মানুষ জানুক। ভালবাসা আপনার প্রতিও অবিরত।