আজঃ শুক্রবার | ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
Home / ফকির উয়ায়ছী / প্রবন্ধ / লাইলাতুম মুবারাকাত অর্থাৎ কল্যানময় রাত্রী (শবে বরাত)

লাইলাতুম মুবারাকাত অর্থাৎ কল্যানময় রাত্রী (শবে বরাত)

ফকির উয়ায়ছী-Fokir:

‘শব’ শব্দটির ফার্সী ভাষা যার অর্থ রাত্র/রজনী। ‘বরাত’ শব্দটি আরবী থেকে গৃহীত। বাংলায় ‘বরাত’ শব্দটি ‘ভাগ্য’ বা ‘সৌভাগ্য’ অর্থে ব্যবহৃত হলেও আরবী ভাষায় এ শব্দটির অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আরবী ভাষায় ‘বারাআত’ শব্দটির অর্থ বিমুক্ত, মুক্ত হওয়া, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া। ফার্সী ‘শবে বরাত’ ও আরবী ‘লাইলাতুল বারাআত’ অর্থাৎ ‘বিমুক্তির রজনী’। আর এই বিপদ মুক্তিতাকেই সৌভাগ্য বলে ধরে নিতে পারি আমার মত পাপী বান্দা।

একটি অতি পরিচিত কিতাবের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করবো। এই কিতাবটি যে কোন মহিলা আমলকারীদের ঘরে নাই সেটা চিন্তার বিষয়। কিতাবটির নাম ‘মোকছুদুল মোমিনীন বা বেহেশতের পুঞ্জী’ রচনাকারী “অধ্যক্ষ মাওলানা মো:শামছুল হক”। এই কিতাবটি যারা পড়েন তারাও যদি শবে বরাতের দিনটি এই কিতাব অনুযায়ী মেনে চলতেন তবে কতই না উপকার করতেন নিজেদের। ‘চৌধুরী এন্ড সন্স থেকে সেপ্টেম্বর-২০০৫ সালে প্রকাশিত কিতাবটির ২৮৪ পৃষ্ঠা শবে বরাতের আমল অধ্যায় থেকে উল্লেখ করছি তৃতীয় বন্ধনীতে’

{হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাছুল সা. এরশাদ করেছেন, হে মু’মিনগণ! তোমরা শাবান মাসের মধ্যম ১৪ তারিখে দিবাগত রাতে জাগরিত থাক। কেননা, এ রাত অতিশয় বরকতময় রাত। এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাহগনকে বলতে থাকেন, হে আমার বান্দাহগন! তোমাদের মধ্যে কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব।

রাছুল সা. অন্য হাদীসে এরশাদ করেছেন, এ রাতে (শবে বরাতে) ইবাদতকারীদের যাবতীয় গুনাহ আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেন, তবে যাদুকর, গনক, কৃপন, মদ পানকারী, ব্যভিচারী এবং মাতা-পিতাকে কষ্টদানকারীকে মার্জনা করেন না।

রাছুল সা. অন্য হাদীসে এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ রাত্রে (শবে বরাতে) একশত রাকাত নফল নামায আদায় করবে তার জীবনের সমস্ত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করা হবে এবং তার জন্য দোযখ হারাম হয়ে যাবে।}

আরো অনেক আছে এমন। কথা হচ্ছে আপনারা যখন শবে বরাত সম্পর্কে এই মাওলানা সাহেবকেও বর্জন করেন নব্য কিছু বড় বড় টাইটেল ধারীদের কথা শুনে তখন আমার বলতে ইচ্ছে হয় ছুড়ে ফেলাই উচিত হবে আমলের এই কিতাব। এই হাদীস গুলি সাথে একটি আয়াত পেশ করলাম।

৩৯:৫৩:“ইয়া ইবাদিইয়াল্লাযীনা আসরাফু আ’লা আনফুসিহিম লা-তাক্বনাতূ মিররাহমাতিল্লাহি; ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ যূনুবা জামী’আ ইন্নাহ হুওয়াল গফুরুর রহীম।”

অর্থাৎ-“হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, আমার নির্ধারিত সীমা লংঘন করে পাপের পথে প্রবেশ করেছ, তারা আমার রহমত হতে নিরাশ হউও না।”

অথচ খেয়াল করে দেখবেন নব্য আলেমগন বর্তমান মানুষদের কিভাবে এই ফজিলতপূর্ণ বরকতমত রাত্রি থেকে দুরে রাখার জোর প্রচেষ্টা করছেন। তারা বলেন শবে বরাত বলতে আলাদা কিছু নাই। বিজ্ঞ আলেম সমাজ আমল থেকে গুনাহ ক্ষমা করানোর রাত্রটি থেকে দুরে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন। আপনাদের ঘরে ঘরে টিভি আছে দেখবেন কেমন করে তারা মিথ্যাচার করে বলে শবে বরাত আর শবে কদর মূলত একই রাত্র এটার মধ্যে কোন আলাদা কোন কিছু নাই। আল্লা এই ব্যপারে কোরআনে কি বলেছেন সেটা পরে আলোচনা করবো। আগে যারা কোরআন পরতেও জানেন না অন্তত্য যাদের দৃষ্টি সচল এবং দুইটা পা সালামত আছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনারাই চিন্তা করে দেখবেন। শবে বরাতে রাত্রির আকাশটি দেখবেন পূর্ণ জোসনা ঝলমলে। জোসনা থাকারই কথা কারণ চাঁদের তারিখ অনুযায়ী ১৪ তারিখ শবে বরাত আর শবে করদ চাঁদের মাসের শেষ দিকে কাজেই কদরের রাত্রটি ঘুট ঘুটে অন্ধকার। যেহেতু বাহ্যিক দৃষ্টিতেই দেখা যাচ্ছে ভিন্নতা কদরের রাত্রি অন্ধকার আর শবে বরাতের রাত্রিতে আলো ঝলমলে তবে কেন হুজুরদের অবাস্তব কথা মেনে নিয়ে নিজেদের ঈমান নষ্ট করছেন। চেষ্টা করুন আলেম সাহেবদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে; যারা অন্তত্য আপনাদের থেকে নামায পড়িয়ে টাকা নিচ্ছেন। আল্লা তো আপনাদের চোখ, কান এবং বিবেক দিয়েছে এই সব যারা কাজে লাগায় না তাদের তো আল্লা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন।-৭:১৭৯ আয়াত। কাজেই কান কথায় বিশ্বাস না এনে নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাজে লাগিয়ে বিশ্বাস দৃঢ় করুণ এবং বিরোধী না করে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকুন।

সূরা:৪৪- আদ দোখান

حم       (1-“হা-মীম।”

Ha-Mim. 

وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ    (2-“অলকিতা বিল মুবীন”।

শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।       

By the Book that makes things clear;-     

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ      (3-“ইন্না আনজাল নাহু ফি লাইলাতিম মুবারাকাতিন ইন্না কুন্না মুনজিরীন।”

আমরা একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।      

We sent it down during a Blessed Night: for We (ever) wish to warn (against Evil).

এই সূরার আয়াতে স্পষ্ট করেই বলেছেন আল্লা ‘হা-মীম’ এই লাইলাতুম মুবারাকাতের নিদৃষ্ট রজনীতেই নাজিল করেছেন। কিন্তু বড় বড় টাইটেলধারী আলেমগন কি করে বলেন কদরের রাত্র আর শবে বরাতের রাত্রির মধ্যে কোন তফাৎ নাই!

শবে কদরের রাত্রিটি কোন ভাবেই নিদৃষ্ট নয় খুজে নিতে হয় রমজান মাসের ২০ রোযার পর থেকে বেজোর রাত্রি। যেহেতু মাঝে মাঝে ২৯ দিনে মাস শেষ হয় সে কারণে ২৭শের রাত্র শেষ বেজোর রাত্র হিসাবে মুসলমানগন মেনে নিয়ে শবে কদর পালন করেন। ইতেকাফ করেন হাজার হাজার লোক কেউ তো ২১,২৩,২৫,২৯ তারিখ বলেছেন শবে কদর এমন তো দেখা যায় না। ঈমানের জোর কম আমাদের তাই খুজে পাই না সঠিক শবে কদরের রাত্রি। লোক দেখানো ইতেকাফ করি সবাই মিলে ২৭ রমজানই কদর পালন করি। আর এই কদরের অনিদৃষ্ট রাত্রির কথাই আল্লা বলেছেন ৯৭:১# আয়াতে “ইন্না আনজালনাহু ফি লাইলাতিল কদরি”- অর্থ নিশ্চয়ই আমরা উহা মহিমাম্বিত রাত্রিতে নাজির করেছি। সহজেই বুঝা যায় কোরআনে শবে কদরের রাত্রিতেই নাজিল করেছেন। সেটা ২০শে রমযান বেজোর কোন এক অনিদৃষ্ট রাত্রিতে। গুজামিল দিয়ে যথন মিলাতে পারে না তখন আলাদা দুই ভিন্ন মাসের দুই তারিখকে এক করে ফেলেছেন নিজের জ্ঞান জাহেরীর করার প্রয়াসে। আল্লা থেকে তাদের গরজই বেশী। একবার শাবান মাসে একবার মহরম মাসে একই জিনিষ কিভাবে ভিন্ন দুই রাত্রিতে নাজিল হতে পারে? বিবেকবান মানুষদের চিন্তা করার আহবান করছি। অথচ আল্লা শাবানের ১৪ তারিখটিকে নিদৃষ্ট করেছেন তাও আমাদের মানতে কষ্ট হয় কেন? মনে রাখতে হবে হাশরের ময়দানে আল্লার সামনে তথাকথিত বিজ্ঞ আলেমদের কথা বলে বাচা যাবে না।

এই দিনে কি করণীয় রাছুল সা. হাদীসে দেখা যাক।

অনুরূপভাবে হযরত আলী রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আসে, তখন তোমরা রাতে (সালাতে-দুআয়) মশগুল থাক এবং দিবসে সিয়াম পালন কর। কারণ ঐ দিন সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোন রিযিক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিযিক প্রদান করব। কোন দূর্দশাগ্রস্থ ব্যক্তি আছে কি? আমি তাকে মুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।’-{সুনানে ইবনু মাযাহ, হাদীস-১৩৮৮}

সিহহা সিততার এই হাদিসগুলি বিজ্ঞ আলেমগন উৎখাত করে দিবেন এটার অপেক্ষাতেই থাকতে হবে আমাদের। এই হাদিসগুলি স্বমূলে শেষ হলে তাদের কথাই ঠিক মানতে হবে।

এই চিন্তা চেতনা থেকেই এ বিষয়ে লেখার চেষ্টা। মানুষের মনে যদি আমার মত চেতনার উদয় হয় কোনটা সঠিক বা কি সঠিক নয়? তবে তো যারা জানেন এই সব বিষয়াদী তাদের কাছে যেত হবে জানার জন্য।

আল্লাহর পবিত্র কোরআন অনুযায়ী চাঁদ যেহেতু দিন সময় নির্ধারনের জন্য। ২:১৮৯# “তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম।” আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল চাঁদ দেখেই দিনটি নির্ধারন করবেন শবে বরাত আর শবে কদর একই হতে পারে কিনা? আর যারা আমার আল্লার কোরআন এবং নির্দশন না দেখে তথাকথিত আলেমদের বিশ্বাস করবেন মনে রাখবেন হাশরের ময়দানে আল্লা আপনাদের সামনে পাবেন না সোজা দোযখের রাস্তাই পাবেন। আল্লা পবিত্র কোরআনে বলেছেন সূরা বাকারার আয়াত ২:৪২# “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না।”

এই শবে বরাত সম্পর্কে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞজনদের কোরআনের তাফসির পড়ে দেখলাম সকলেই শবে বরাতকে শবে কদর বলেই চালাতে যে কি বৃথা চেষ্টা করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। মনে হলো ইচ্ছা করেই ২:৪২ আয়াতটা অদেখা করে তাদের ওহাবী খারেজি নেতাদেরই সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন আল্লার কথা ভুলে।

আসছে ২রা জুন পবিত্র শবে বরাত আপনারা কে কিভাবে পালন করবেন সেটা আপনাদের উপরই থাকলো। প্রকৃত উয়ায়ছী তরিকতের লোকজন আল্লার কতৃক নিদৃষ্ট দিনটিতে দিনের বেলায় রোযা পালন করেন। সেহেরীতে কোন রকম আমীস (মাছ, গোস্ত, ডিম) জাতিয় খাবার গ্রহন করে না এমনকি ইফতারের সময়ও সব ধরনের আমীসযুক্ত খাওয়া বর্জন করে রোযা পূর্ণ করেন। কিছু রুটি হালুয়া/পায়েশ নরম খাবার বানিয়ে গরীব দু:খি মানুষের মাঝে বিতরন করা হয়। রাত্রে যথা সাধ্য আলোচনা এবং নফল ইবাদতের মধ্যে দিয়ে রাত্রি শেষ করা হয়। এই দিনে রুটি হালুয়ার প্রচলন অনেক পূর্ব থেকে থাকলেও বর্তমান আলেম সাহেবগন এর বিরোধীতা করেন। এই ব্যপারে লিখলে অনেক বড় হয়ে যাবে পাঠকগনে জানার আগ্রহ থাকলে উল্লেখ করবেন। যথাসাধ্য জানাতে চেষ্টা করবো।

About Fokir Owaisi

আরও দেখুন

এজিদের রক্ত বংশের অনুসারীদের খুশি উৎযাপনের মাস মহরম। পর্ব-১

এজিদের রক্ত বংশের অনুসারীদের খুশি উৎযাপনের মাস মহরম। পর্ব-১ ====================================================== ফকির উয়ায়ছী: আগামী ২১লা সেপ্টেম্বর …

৪ comments

  1. প্রতি রাতের শেষ রজনিতে আল্লাহ নিকট বর্তী আকাশে চলে আসে.
    আর ডাকে কে আছ কার কি প্রয়োজন বল.
    এটা আবার ১৪ তারিখ কেন হল.

    • ঠিকই বলেছেন আল্লার কাজ আল্লা করে বান্দাই যে ঠিক মত চেয়ে খুশি করে আল্লার কাছ থেকে নিতে পারে না। কোরআনে ১৪ই শাবানের কথা আল্লা যে কেন বলেছে আল্লাকে জিজ্ঞাসা করলে তিঁনিই সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। আমার তো চোখে সমস্যা তাই হয়তো দেখি না। প্রতি রাত্রেই যখন আসেন আপনি দেখলে জিজ্ঞাসা করবেন দয়া করে।

  2. Sahih International
    The month of Ramadhan [is that] in which was revealed the Qur’an, a guidance for the people and clear proofs of guidance and criterion. (2/185)

    Yusuf Ali
    Ramadhan is the (month) in which was sent down the Qur’an, as a guide to mankind, also clear (Signs) for guidance and judgment (2/185)
    Shakir

    The month of Ramazan is that in which the Quran was revealed, a guidance to men and clear proofs of the guidance and the distinction; therefore whoever of you is present in the month, he shall fast therein, and whoever is sick or upon a journey, then (he shall fast) a (like) number of other days (2/185)

    Please explain this ayat. Your comment will be highly appreciated

    • সালাম দাদা,

      ধন্যবাদ আপনার প্রশ্ন করার জন্য তবে সঠিক উত্তর শরিয়তের আলেম থেকে নিলেই আপনার মন পুত হবে। শুধু এটকুই বলতে চাই রোযা বা সংযম না থেয়ে থাকা নাম নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *