ফকির উয়ায়ছী:
উম্মতে মুহাম্মদির জন্য ব্যক্তি বিশেষের কথা কতটুকু মুল্যায়িত হতে পারে? সেটাই জ্ঞানীগনদের বিবেচনা করা উচিৎ। বইটি পছন্দের বলেই সতর্ক করার জন্য খন্ডাকারে প্রচার করছি। তবে, আল্লা যাদের মহর মেরে দিয়েছেন তারা আল্লা রাছুল সা. এর কথা উপেক্ষা করে ব্যক্তি বিশেষের কথায় দৌড়াবে। তারা এতই অজ্ঞান আল্লা রাছুল সা. হুকুম অমান্য কররে যে আমল কোন কাজে আসবে না। ইবলিশ তাদের এটাও ভাবতে দেয় না। আল্লা ক্ষমা করুণ আমি এই পথের সংঙ্গী ছিলাম কোন এক সময়।
সতর্ক করার মত অনেক চেষ্ট করেছি আমার আল্লা এবং রাছুল সা. এর বাণী প্রচারের মাধ্যমে। আমার প্রচারণায় কাজ হবে না জেনেও রাছুল সা. এর ইসলামের কাজ নিজ দ্বায়ীত্ত্ব মনে করেই করছি। আল্লা যাদের চোখ, কান, অন্তর মহর মেরে দিয়েছেন। তাদের চোখ, কান খোলা বড় কঠিন। যদি নিজের চেষ্টা না করে। এই জন্যই আল্লা বলেছেন পবিত্র কোরআনে আমি তাকেই হেদায়েত করি যে আমার অভিমুক্ষী হয়। প্রথম অংশ দিয়েছিলাম ২য় পর্ব প্রকাশের মাধ্যমে সতর্করণ শেষ করলাম। নিন্মে ২টি আয়াত নবীজির শেষ ভাষন থেকে
৫:৬৭#হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
৫:৩# “আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”
এই আয়াতের পরে যত সংযোজন হয়েছে, হচ্ছে বা হবে সবই বেদাত। পরিনাম উল্লেখ রয়েছে বুখারী শরীফের হাউজে কাউসার অধ্যায়ে।
ইলিয়াছ মেওয়াতীর ‘মালফুজাত’প্রসঙ্গ ও তাঁর জবাব পর্ব- শেষ
৬। উক্ত কিতাবের ১১১ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “আম্বিয়া আলাইহিচ্ছালামগণ যদিও মাছুম (বেগুনাহ), মাহফুজ (সংরক্ষিত) এবং এলেম ও শিক্ষা-দীক্ষা সরাসরি আল্লাহর তরফ হতে লাভ করেছেন- তথাপিও তাঁরা যখন তালিম ও হেদায়েতের তাবলীগের জন্য সাধারণ লোকদের সাথে মেলামেশা করতেন তখন তাদের অন্তরসমূহে সেই সাধারণ লোকদের অন্তরের ময়লা ও আবর্জনা প্রতিফলিত হত।”
জবাব: এ উক্তি দ্বারা নবীগণের প্রতি অবমাননা প্রকাশ পেয়েছে। নবীগণ তো অন্যের অন্তরের ময়লা দূর করেন। তাদের অন্তরে আবার কেমন করে ময়লা ও আবর্জনা প্রতিফলিত হবে? এ ধরণের কুফুরী আকিদা যে ব্যক্তি পোষন করবে তার অন্তরই ময়লা ও আবর্জনা তথা কুফুরীতে ভরা। সেই দৃষ্টিতে ইলিয়াছ মেওয়াতীর অন্তরই কুফুরীতে পরিপূর্ণ। তা নাহলে সে কিভাবে নবীদের প্রতি এমন ধারণা করতে পারে? নবীগণ হেদায়েত দেওয়ার জন্য দুনিয়াতে আসছেন, হেদায়েত নেওয়ার জন্য নয়।
৭। উক্ত কিতাবের ১১৩নং মালফুজাত (৪) এ ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “জাকাত ও সদকা তো পাতিলের ময়লা ও দূষিত অংশের মত, উহা বের করে ফেলা জরুরী। হাদিয়া হলো তৈরি খাবারে খুসবু সুগন্ধি ঢেলে দেয়া।”
জবাব: যাকাত হলো ইসলামী পঞ্চবেনা তথা ৫টি ভিত্তির একটি। ইহা ফরজ অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরজ। যাকাত না দিলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে হাদিয়া হলো মোস্তাহাব, না দিলে কোন গুনাহ হবে না। অথচ ইলিয়াছ মেওয়াতী ফরজ যাকাতকে ময়লা ও আবর্জনার সাথে তুলনা করেছেন অর্থাৎ তার মতে ফরজ (যাকাত) হলো ময়লা ও আবর্জনা (নাউযুবিল্লাহ)। এজন্যই ইলিয়াছ মেওয়াতী তার ৬টি উসুলের মধ্যে যাকাত কে বাদ দিয়েছে। যে ব্যক্তি ফরজকে ময়লা ও আবর্জনার সাথে তুলনা করে, সে বেঈমান অর্থাৎ তার ঈমান বলতে কিছুই নাই যদিও সে লেবাছধারী। কাদিয়ানীরাও লেবাছধারী কিন্তু মুসলিম নয়।
৮। উক্ত কিতাবের ১১৩ নং মালফুজাত (৩) এ ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “তাবলীগী কাজে বের হওয়া হলো হিজরত।”
জবাবঃ তার কথায় বুঝা যায় যে, প্রিয় নবী (সা.) এর মদীনা হিজরত করা আর তাবলীগ জামাতীদের মসজিদে মসজিদে অবস্থান করা এক সমান সওয়াব। ইলিয়াছ মেওয়াতীর এ ধরণের উক্তি ইসলাম ও নবীজি (সা.) এর প্রতি কটাক্ষ ছাড়া কিছুই নয়। কেননা হিজরত কাকে বলে তিনি জানেন না। নবীজি (সা.) কে যখন মক্কায় কাফেরগণ হত্যা করার পরিকল্পানা করছিল, তখন মহান আল্লাহর হুকুমে নবীজি (সা.) মদীনায় হিজরত করলেন। কোথায় নবীজি (সা.) এর হিজরত আর কোথায় তাবলীগ জামাতীদের মসজিদ ভ্রমন। হিজরত আর ভ্রমন কি এক হয়? হায়রে ভন্ড ইলিয়াছ! নবীজি (সা.) কাফেরদের অত্যাচারে হিজরত করেছেন, আর তাবলীগ জামাতের লোকজন পরিবারের ভোরণ-পোষনের ভয়ে মসজিদ ভ্রমন করেন। আবার কিছু আসামী পুলিশের ভয়ে তাবলীগ জামাতে গিয়ে সামিল হয়। আরও কিছু বিদ্বান লোক (নিজেদের মতে) সত্যের মানদন্ডে বিচার না করে সওয়াবের আশায় বুক বেঁধে তাবলীগের ভ্রমনে বের হয়। কোথায় হিজরত আর কোথায় ভ্রমন! কোথায় হিজরত আর কোথায় আসামীর পলায়ন?
আরও উল্লেখ্য যে, যেদিন মক্কা বিজয় হয়েছে সেদিন থেকে হিজরত বন্ধ হয়ে গেছে। প্রমানস্বরূপ দেখুন বুখারী শরীফের কিতাবুল জিহাদের ‘বাবু লা হিজরাতা বা’দাল ফাত’ই পরিচ্ছেদ (জিহাদ অধ্যায়ের ‘বিজয়ের পর হিজরতের দরকার নেই’ পরিচ্ছেদ)। পাঠকগণের সুবিধার্থে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বুখারী শরীফের ৫ম খন্ড ২৭৬ পৃষ্ঠা জিহাদ অধ্যায়ের ‘বিজয়ের পর হিজরতের দরকার নেই’ পরিচ্ছেদ হতে ২টি হাদিস শরীফ উল্লেখ করছি।
২৮৬১ নং হাদিস: হযরত মজাশি’ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুজাশি’ তাঁর ভাই মুজালিদ ইবনে মাসউদ (রা.) কে নিয়ে নবী (সা.) এর নিকট এসে বললেন, ‘এ মুজালিদ আপনার কছে হিজরত করার জন্য বাইয়াত করতে চায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। কাজেই আমি তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে বাইয়াত নিচ্ছি।’
২৮৬২ নং হাদিস: হযরত আতা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাইদ ইবনে উমাইর (রা.) সহ আয়িশা (রা.) এর নিকট গমন করি। তখন তিনি সাবীর পাহাড়ের উপর অবস্থান করছিলেন। তিনি আমাদের বললেন, ‘যখন থেকে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর নবী (সা.) কে মক্কা বিজয় দান করেছেন, তখন হিজরত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’
বুখারী শরীফের উপরোক্ত ২টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মক্কা বিজয়ের পরে আর কোন হিজরত নেই। তাই তাবলীগ জামাতের মসজিদ সফর কোন হিজরত নয়। ইলিয়াছ মেওয়াতির উক্তি “তাবলীগী কাজে বের হওয়া হলো হিজরত” ইহা সম্পূর্ণ মনগড়া ও হাদীস বিরোধী উক্তি। এ ধরণের উক্তি করা ভন্ডামীর লক্ষণ বৈ কিছু নয়।
৯। উক্ত কিতাবের ১৪০ নং মালফুজাতে বলেন-“তাবলীগের কাজে তিন দিন দাও, পাঁচদিন দাও অথবা সাতদিন দাও-এসব কথা ছেড়ে দাও। শুধু এ কথাই বলতে থাক যে, ইহাই একমাত্র রাস্তা, যে যত বেশি করবে, ততই বেশি পাবে। এর কোন সীমা নাই শেষ নাই।”
জবাব: ইলিয়াছ মেওয়াতী এ কথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তার আবিষ্কার করা তাবলীগই একমাত্র রাস্তা বা সঠিক পথ। এখন যারা প্রচলিত তাবলীগ করে না তারা কি মুসলমান নয়? হযরত হাসান বসরী (রহ.), বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.), খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.), শাহ জালাল (রহ.) প্রমুখ আউলিয়ায়ে কেরামগণ এই তাবলীগ করেননি। তাঁদের সময় এই তাবলীগ ছিল না। তাহলে তারা কি ভ্রান্ত ছিলেন? (নাউযুবিল্লাহ)। এজন্যই কি তাবলীগ জামাতের সদস্যরা মসজিদে মসজিদে ঘুরে তাবলীগ করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন মুসলমান বানানোর জন্য? ইলিয়াছ মেওয়াতীর কথায় বোঝা যায় যে, তার তাবলীগী রাস্তা সঠিক আর সাহাবা ও আউলিয়ায়ে কেরামের রাস্তা ভ্রান্ত (নাউযুবিল্লাহ)।
১০। উক্ত কিতাবের ২০৯ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব আমার নিকট বর্তমানে এত জরুরী যে, যদি কোন ব্যক্তি নামাজরত অবস্থায় দেখে যে, একজন নতুন মানুষ আসছে এবং ফিরে যাচ্ছে, পুনরায় তাকে পাবার সম্ভাবনা নেই। তবে আমার মতে মধ্যখানে নামাজ ভেঙ্গে ঐ ব্যক্তির সাথে দ্বীনি কথাবার্তা সেরে নেয়া উচিত।
জবাব: ইসলামী শরিয়তে দ্বীনের কথা বলার উদ্দেশ্যে নামাজ ভেঙ্গে ফেলার কোন অনুমতি নাই। ইহা একটি মনগড়া আকিদা যা, ইলিয়াস মেওয়াতী নিজেও স্বীকার করেছেন। কেননা তিনি নিজেই বলেছেন ‘আমার মতে’অর্থাৎ ইসলামী মত তথা নবীজি (সা.) এর মতে নয়। যারা ইলিয়াছ মেওয়াতীর এ কথা বিশ্বাস করবে তারা নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বাদ দিয়ে ইলিয়াছকেই নবী বানিয়ে নিবে (নাউযুবিল্লাহ)। আর নামাজের মধ্যে একাগ্রতা থাকলে তথা হুজুরী কলবে নামাজ হলে কে আসলো বা গেলো তা বোঝা যাবে না। নামাজের মধ্যে একাগ্রতা না থাকলে কি নামাজ হবে?
উপরের উক্তি ও তার জবাব হতে প্রতীয়মান হয় যে, তাবলীগ জামাতীরা ইসলামী মতবাদ বাদ দিয়ে নিজেদের তথা ইলিয়াছের মতবাদ অর্থাৎ বদমাযহাব গ্রহণ ও প্রচার করছে। শক্ত হাতে ইহা প্রতিরোধ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ঈমানী দায়িত্ব। বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক হযরত ইমাম গাজ্জালী (রহ.) ‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’কিতাবে মন্তব্য করেন যে, কোন বদমাযহাবীকে ওয়াজ করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ওয়াজ বন্ধ করার নির্দেশ দিবে। অনুরূপভাবে বদমাযহাবীদের ওয়াজ মাহফিলে গমন করা ঈমানদার মুসলমানদের জন্য জায়েজ নেই। তবে তার বদমাযহাব খন্ডন করা বা তার সাথে বাহাছ করার উদ্দেশ্যে তার মাহফিলে গমন করা বৈধ।
আল্লামা ইমাম তাহতাবী বলেন, বদমাযহাবী আলেমের ওয়াজ শ্রবণ করা জায়েজ নাই। এরূপ আলেমকে দিয়ে ইমামতির দায়িত্ব অর্পন করাও নাজায়েজ। ভুলবশত: যদি তার পিছনে নামাজ আদায় করা হয়, তবে সেই নামাজ পুনরায় পড়তে হয়। তাই ভ্রান্ত তাবলীগ জামাতের অনুসারী আলেমের ওয়াজ শুনা হতে এবং তাদের পিছনে নামাজ আদায় হতে বিরত থাকুন। কেননা তাবলীগ জামাতীগণ বদমাযহাব অনুসরণ করে। আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার তাওফিক দান করুণ এবং সঠিক পথে পরিচালনা করুণ। আমিন!
Shothik shotto o shundor quran hadis dara proman koray apnake dhonnobad.hoyto ei lekha pore kew shotto o shothik poth pabe.