ফকির উয়ায়ছী:
উম্মতে মুহাম্মদির জন্য ব্যক্তি বিশেষের কথা কতটুকু মুল্যায়িত হতে পারে? সেটাই জ্ঞানীগনদের বিবেচনা করা উচিৎ। বইটি পছন্দের বলেই সতর্ক করার জন্য খন্ডাকারে প্রচার করছি। তবে, আল্লা যাদের মহর মেরে দিয়েছেন তারা আল্লা রাছুল সা. এর কথা উপেক্ষা করে ব্যক্তি বিশেষের কথায় দৌড়াবে। তারা এতই অজ্ঞান আল্লা রাছুল সা. হুকুম অমান্য কররে যে আমল কোন কাজে আসবে না। ইবলিশ তাদের এটাও ভাবতে দেয় না। আল্লা ক্ষমা করুণ আমি এই পথের সংঙ্গী ছিলাম কোন এক সময়।
সতর্ক করার মত অনেক চেষ্ট করেছি আমার আল্লা এবং রাছুল সা. এর বাণী প্রচারের মাধ্যমে। আমার প্রচারণায় কাজ হবে না জেনেও রাছুল সা. এর ইসলামের কাজ নিজ দ্বায়ীত্ত্ব মনে করেই করছি। আল্লা যাদের চোখ, কান, অন্তর মহর মেরে দিয়েছেন। তাদের চোখ, কান খোলা বড় কঠিন। যদি নিজের চেষ্টা না করে। এই জন্যই আল্লা বলেছেন পবিত্র কোরআনে আমি তাকেই হেদায়েত করি যে আমার অভিমুক্ষী হয়। কাজেই শেষ পর্বের আজ প্রথম অংশ দিলাম। পরবর্তি ২য় পর্ব প্রকাশের মাধ্যমে সতর্করণ থেকে বিদায় নিবো।
ইলিয়াছ মেওয়াতীর ‘মালফুজাত’প্রসঙ্গ ও তাঁর জবাব পর্ব-(ক)
ইলিয়াছ মেওয়াতীর ‘মালফুজাত’তারই অনুসারী ভক্ত মৌলভী মনজুর নোমানী সংগ্রহ ও সংকলন করে প্রকাশ করেছেন। ‘মালফুজাত’প্রকাশ হলে ইলিয়াছ মেওয়াতীর আসল রূপ ও উদ্দেশ্য বের হয়ে যায়। কেননা সত্যকে কোনদিন চেপে রাখা যায় না। সত্য প্রকাশ হবে এবং মিথ্যা ধ্বংস হবেই। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,
“সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল”(সূরা বনী ইসরাইল-৮১)। ‘মালফুজাত’নামক কিতাবে ঈমান বিধ্বংসী আকিদা রয়েছে, যা মুসলমানের জন্য খুবই মারাত্মক। এ রকম কিছু প্রসঙ্গ ও তার জবাব পাঠকদের সম্মুখে তুলে ধরছি।
১। উক্ত কিতাবের ৪২ নং মালফুজাতের ভেতরে আছে “মুসলমান দুই প্রকার। তৃতীয় কোন প্রকার নাই। প্রথমত: যারা আল্লাহর রাস্তায় (তাবলীগে) বাহির হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত: যারা তাদের সাহায্য করবে।”
জবাব: তাদের নিকট মুসলমান হওয়ার জন্য দুটি শর্ত। একটি হলো তাবলীগে যাওয়া এবং অন্যটি হলো তাদের সাহায্য করা। এ দুটি কাজে যারা সম্পৃক্ত নয়, তাদের মতে তারা মুসলমান নয় (নাউযুবিল্লাহ)। তাহলে বুঝা যায় যে, ইলিয়াছ মেওয়াতীর পিতা মুসলমান ছিলেন না। কেননা ইলিয়াছ মেওয়াতীর তাবলীগ আবিস্কারের আগেই তার পিতা মারা গেছেন। ফলে তিনি ইলিয়াছের তাবলীগ করতেও পারেননি এবং সাহায্য করতেও পারেননি। এমনকি নবীজি ও সাহাবায়ে করোমগণও ইলিয়াছি তাবলীগ করেননি। তাহলে তাঁরাও মুসমলাম নন? যে ব্যক্তি নবী ও সাহাবীদের মুসলমান বলে না, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে কাফের। ইলিয়াছ মেওয়াতী পরোক্ষভাবে নবী ও সাহাবায়ে কেরামগণকে মুসলমান স্বীকার না করে কাফেরে পরিণত হয়ে গেছে। যারা এই ইলিয়াছ কাফের এর অনুসারী হবে তারাও কাফের হয়ে যাবে।
২। উক্ত কিতাবের ৫০ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “তোমরা নবীদের মত মানুষের উপকার করার জন্য প্রেরিত ইহয়াছ।”
জবাব: উপরোক্ত কথা দ্বারা ইলিয়াছ মেওয়াতী উম্মতকে নবীদের সাথে তুলনা করেছেন যা, সম্পূর্ণ কুরআন-হাদীস অর্থাৎ ইসলাম বিরোধী। যে ব্যক্তি ইহা বিশ্বাস করবে, সে বেঈমান হয়ে যাবে। কারণ উম্মতের সাথে নবীর কখনও তুলানা হতে পারে না। নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, ‘লাসতুকা আহাদিম মিনকুম’ অর্থাৎ আমি তোমাদের কারো মতই না। নবীজি (সা.) যেখানে নিজেকে কারো সাথে তুলনা করতে নিষেধ করেছেন, সেখানে ইলিয়াছ মেতওয়াতী তাবলীগ বাহিনীকে নবীর সাথে তুলনা করেছেন। যার অন্তরে চুল পরিমান ঈমান আছে, সে কখনও এই কথা মেনে নিবে না। এ কথা জানা সত্বেও যারা ইলিয়াছী তাবলীগ করবে, তারা নিঃসন্দেহে বেঈমান, যদিও তারা নামাজী হয়। কেননা নবীজির লাশ মুবারক চুরি করতে যারা গিয়েছিল, তারা সকলেই নামাজী ছিল, কিন্তু তাদের ঈমান ছিল না তারা ছিল ইহুদী।
৩। উক্ত কিতাবের ৫১ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “যাকাতের মর্যাদা হাদিয়ার নিচে, এ কারণেই হুজুর পাক (সা.) এর জন্য সদকা হারাম ছিল, হাদিয়া হারাম ছিল না।”
জবাবঃ যাকাত হলো ইসলামী পঞ্চবেনা তথা ৫টি ভিত্তির একটি। ইহা ফরজ অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরজ। যাকাত না দিলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে হাদিয়া হলো মোস্তাহাব, না দিলে কোন গুনাহ হবে না। অথচ ইলিয়াছ মেওয়াতী ফরজ যাকাতকে মোস্তাহাব হাদিয়ার নিচে স্থান দিয়েছে, যা ইসলামী শরিয়ত বিরোধী। এজন্যই হয়তো ইলিয়াছ মেওয়াতী তার ৬টি উসুলের মধ্যে যাকাত কে বাদ দিয়েছে। যে ব্যক্তি যাকাতকে (ফরজকে) হাদিয়ার (মোস্তাহাব) নিচে স্থান দেয়, সে ব্যক্তি কোন প্রকৃতির মুসলমান তা আপনাদের বিচারে ছেড়ে দিলাম।
৪। উক্ত কিতাবের ৫৬ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “তাবলীগের তরিকা হবে আমার আর তালীম হবে মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর।”
জবাবঃ উপরোক্ত উক্তি দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, মৌলভী ইলিয়াছ মেওয়াতীর আবিস্কৃত তাবলীগ ইসলাম বহির্ভূত। কারণ তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, তাবলীগের তরিকা তার নিজের অর্থাৎ ইসলামী আকিদার নয়। কেননা ইসলামী তাবলীগের তরিকা ও তালীম হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সরাসরি আল্লাহ হতে প্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু ইলিয়াছি তাবলীগের তরিকা হলো ইলিয়াছ মেওয়াতীর এবং তালীম হলো মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর।
৫। উক্ত কিতাবের ৯৩ নং মালফুজাতে ইলিয়াছ মেওয়াতী বলেন, “জিহাদ ফি সাবিল্লিাহে শাহাদত বরণ করা হতে তাবলীগ জামাত উত্তম। আল্লাহর রাস্তায় হানাহানী-যুদ্ধের কষ্ট এবং প্রাণহানীর ভয় থাকে। তাবলীগ জামাতের চিল্লায় এসব দ্বন্দ হানহানী নেই।”
জবাব: উপরোক্ত উদ্দেশ্যমূলক কথা কুরআন-হাদীস বিরুদ্ধ। পাক কালামে জিহাদ ফি সাবিল্লিাহে আত্মত্যাগ ও কষ্ট স্বীকারের অনেক মর্যাদা বর্ণিত আছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
“নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জেহাদ করেছে; তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহ্র কাছে আর তারাই সফলকাম।”(সূরা তাওবা-২০)
এ হলো জিহাদের গুরুত্ব। স্বয়ং আল্লাহ বললেন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ উত্তম। আর ইলিয়াছ মেওয়াতী বললেন তাবলীগ উত্তম। এখানেও তিনি আল্লাহর কালামের বিরোধীতা করলেন। ইলিয়াছ মেওয়াতীর মনগড়া বক্তব্য আল কুরআনের বিরোধী। কোথায় জিহাদ, আর কোথায় ইলিয়াছ মেওয়াতীর মসজিদ সফর। ভন্ডামীর একটা সীমা আছে, কিন্তু ইলিয়াছ মেওয়াতীর ভন্ডামী সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ইলিয়াছি তাবলীগীদের আসল চেহারা উন্মোচন হয় সূরা তাওবার ১০৭ নং আয়াত দ্বারা। তাবুকের যুদ্ধে কিছু মুনাফিক যুদ্ধে (জিহাদ) না গিয়ে মসজিদে কুবার নিকট মসজিদে জেরা নির্মাণ করেছিল। নবীজি (সা.) যখন তাবুক যুদ্ধে জয়লাভ করে ফিরছিলেন। তখন সেই মুনাফিকেরা নবীজির সামনে এসে বললো ইয়া! রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমরা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি, আপনি আসুন এবং সালাত আদায় করুণ। মুনাফিকদের ইচ্ছা ছিল তারা নবীজি (সা.) কে দিয়ে মসজিদ উদ্বোধন করাবে। কিন্তু সাথে সাথে আল্লাহ পাক ওহি নাজিল করলেন।
“আর যারা নির্মাণ করেছে মসজিদ জিদের বশে এবং কুফরীর তাড়নায় মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।”(সুরা তাওবা-১০৭)
উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার সাথে সাথে নবীজি (সা.) সাহাবাদেরকে মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিলেন। সাথে সাথে মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হলো। বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থের ৫ম খন্ডে এ ঘটনা বিস্তারিত উল্লেখ আছে। সেখানে উল্লেখ আছে, মুনাফিকদের ইচ্ছা ছিল তারা মসজিদে কুবার মুসল্লীদেরকে দ্ইু ভাগে বিভক্ত করবে। বর্তমানে তাবলীগ জামাতিরা বিভিন্ন স্থানে মসজিদ তৈরি করছে। দেখা গেছে আশেপাশে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও তারা মসিজদ তৈরি করছে এবং তার নাম দিচ্ছে মারকাজ মসজিদ। এভাবে এলাকার মুসল্লীদের মধ্যে মসজিদ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে এবং মুসল্লী বিভক্ত হচ্ছে, যা কিনা মসজিদে জেরার সমতুল্য। অধিকাংশ মারকাজ মসজিদ জিদের বশবর্তী হয়ে তৈরি করা। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ঐ সমস্ত মারকাজ মসজিদে তাবলীগ জামাতের লোক ব্যতিত অন্য কেউ নামাজ আদায় করতে যায় না। তাই মারকাজ মসজিদ আর মসজিদে জেরা একই। উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার সাথে সাথে জিদের বশবর্তী হয়ে তৈরি করা মসজিদে জেরা ভেঙ্গে ফেলা হলো। তাই উক্ত আয়াত হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যে সমস্ত মসজিদ জিদের বশবর্তী হয়ে এবং মুসল্লীদেরকে বিভক্ত করার জন্য তৈরি করা হয়, সে সব মসজিদে নামাজ পড়া জায়েজ নাই, তা ভেঙ্গে ফেলা উচিৎ। এরকম অনেক মসজিদ আছে যা অন্যের জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে। দখলকারী নিচ তলায় মার্কেট, দ্বিতীয় তলায় মসজিদ এবং তৃতীয় তলা থেকে বসবাস করার এ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেছে। দখলকারী চিন্তা করেছে যে, যেহেতু মসজিদ আছে তা কেউ ভাঙ্গতে পারবে না। এভাবে সারাজীবন অন্যের সম্পদ ভোগ করতে পারবো। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা ঐ সমস্ত মসজিদও ভেঙ্গে ফেলা যাবে।
———————————————————————চলবে-২ পর্বে শেষ হবে।