আজঃ বৃহস্পতিবার | ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
Home / অন্যান্য বিষয়াদী / রাছুল সা. এর প্রকৃত উম্মতদের সতর্ক জন্য পর্ব-৪

রাছুল সা. এর প্রকৃত উম্মতদের সতর্ক জন্য পর্ব-৪

ফকির উয়ায়ছী:

উম্মতে মুহাম্মদির জন্য ব্যক্তি বিশেষের কথা কতটুকু মুল্যায়িত হতে পারে? সেটাই জ্ঞানীগনদের বিবেচনা করা উচিৎ।বইটি পছন্দের বলেই সতর্ক করার জন্য খন্ডাকারে প্রচার করছি।

তাবলীগ কাদের জন্য?

তাবলীগ অর্থ প্রচার করা বা দাওয়াত দেওয়া। কিসের দাওয়াত? দ্বীনের দাওয়াত অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ। এখন প্রশ্ন হতে পারে তাবলীগ কি সবাই করতে পারবে? এর উত্তর পবিত্র কোরআন এর মাঝেই বিদ্যমান। তাবলীগ সকলের জন্য নয়। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআন সুরা আলে ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলেন, অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে একদল এমন হওয়া উচিৎ যারা কল্যাণ বা ইসলামের দিকে লোকদেরকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে। আর তারাই হচ্ছে কামিয়াব বা সফলকাম।” (সুরা আলে ইমরান-১০৪)

উপরোক্ত আয়াতেও তোমাদের মধ্যে একদল লোক’ এই কয়টি শব্দ দ্বারা ইহাই পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, দাওয়াত বা তাবলীগ করার নির্দেশ সমস্ত মুসলমানদের উপর নয় বরং মুসলমানদের মধ্যে একদল অর্থাৎ আলেম সম্প্রদায়ের উপর ফরজ করা হয়েছে। এই আয়াতে নির্দেশিত তাবলীগ ইসলামের প্রথম যুগ হতে অদ্যাবধি ওলামায়ে কেরামগণ ও ওলি আল্লাহগণ এবং হাক্কানী পীর মাশায়েখগণ করে আসছেন এবং করবেন এই ধরার বুকে যতদিন মানুষের আবির্ভাব ঘটবে।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে বায়জাভী’তে বলা হয়েছে-“ আয়াতে مِنْكُمْ (মিনকুম) এর ﻤﻥ ‘মিন’ শব্দটি কতক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা সৎ কাজের নির্দেশ দান করা ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা কিছু সংখ্যক লোকের উপর ফরজ, যাকে ফরজে কেফায়া বলে। কারণ এ কাজ সম্পাদনের জন্য যে শর্তাবলী রয়েছে, যেমন- শরিয়তের বিধি-নিষেধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া, এলমে মারেফত সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, আহকাম বা বিধি-নিষেধের তাৎপর্য এবং এগুলি প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা বা বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত হওয়া ইত্যাদি। অথচ এ সমস্ত শর্ত সকলের মধ্যে পাওয়া যায় না।”

আল্লামা আবু আবদিয়াহ মুহাম্মদ বিন আহমদ আনসারী (রহ.) তদ্বীয় ‘কুরতুবী শরীফ’ এর জুজে বাবে ১৬২ পৃষ্ঠায় উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-

“আয়াতে উল্লেখিত مِنْكُمْ (মিনকুম) এর ﻤﻥ ‘মিন’ শব্দটি ‘তাবঈজ’ বা কতক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এর মর্মাথ হলো-নিশ্চয়ই উল্লেখিত বিষয়সমূহ (কল্যাণের দিকে আহবান, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ) উলামায়ে কেরামের উপর ওয়াজিব কেননা প্রত্যেক লোক আলেম নহে। কারণ নেক কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ ফরজে কেফায়া।

এতে সহজেই বুঝাযায় যে, তাবলীগ ফরজে কেফায়া। যেমন- জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লোক আদায় করলে সকলের আদায় হয়ে যায়। তেমনিভাবে তাবলীগও ফরজে কেফায়া। কিছু সংখ্যক লোক তথা ওলামায়ে কেরামগণ ও ওলি আল্লাহগণ এবং হাক্কানী পীর মাশায়েখগণ আদায় করলে সকলের আদায় হবে যাবে।

তাফসীরে জালালাইন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, “উক্ত আয়াতের ﻤﻥ ‘মিন’ শব্দটি দ্বারা কিছু সংখ্যক লোককে বুঝানো হয়েছে, কেননা তাবলীগে দ্বীন সম্পাদন করা ফরজে কেফায়া অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লোকের উপর ফরজ। এ নির্দেশ সকল উম্মতের প্রতি নয়। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি এ কাজের যোগ্য নয়। যেমন-জাহিল বা মূর্খ ব্যক্তি।”

উপরোল্লেখিত তাফসীর হতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, যারা সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎ কাজের নিষেধ করার যোগ্য, কেবলমাত্র তারাই তাবলীগের দ্বায়িত্ব সম্পন্ন করবেন। যারা কোরআন সুন্নাহর ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। ঈমানী ও আমলী মাসয়ালা সম্পর্কে অবহিত নয়, তাদের জন্য তাবলীগ করা হারাম। তবে যারা হাক্কানী উলামায়ে কেরামের সোহবতে থেকে ঈমানী ও আমলী যে সমস্ত মাসয়ালা সঠিকভাবে শিখতে সক্ষম হয়েছেন, শুধুমাত্র এ সমস্ত মাসয়ালা অন্যের নিকট প্রচার করতে পারবে।

অনেকে বলতে পারেন, এত লক্ষ লক্ষ মানুষ তাবলীগ করছে, নামাজ পড়ছে, সুন্নতী লেবাস পড়ছে তারা কি ভ্রান্ত?  জবাবে বলতে চাই কাদিয়ানীরাও নামাজ পড়ে, কালিমা পড়ে, সুন্নতী লেবাস পড়ে, তাই বলে কি তারা সঠিক? তা কি করে হয়? এখানে তিরমিজি শরীফের একটি হাদিস মনে করিয়ে দিতে চাই “আল্লাহ আদম আ. কে বললেন জাহান্নামের ফৌজ তৈরী কর, আদম আ. জিজ্ঞাসা করলেন কাকে বা কয়জনকে জাহান্নামে দিবো? আল্লাহ বললেন প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামে ১ জন জান্নাতে”। আল্লাহর হিসাব থেকে বাইরে তো আমরা নই। আর আল্লাহর হিসাবের হাজারে ১জন হওয়াই তো কাম্য। কাদিয়ানীদের গুরু গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সরাসরি অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে নবী দাবী করেছে তাই কাদিয়ানী বা তার অনুসারী ভ্রান্ত যদিও কালিমা-নামাজ পড়ে। তেমনিভাবে ইলিয়াছ মেওয়াতীও পরোক্ষভাবে নবী দাবী করছে বিধায় ইলিয়াছ মেওয়াতী এবং তার অনুসারী তাবলীগ জামাতীগণও ভ্রান্ত যদিও তারা কালিমা-নামাজ পড়ে। কেননা ইলিয়াছ মেওয়াতী স্বপ্নে এই তাবলীগ পেয়েছেন এবং নবীজি (সা.) প্রণিত ৫ উসুল বাদ দিয়ে ৬ উসুল আবিষ্কার করেছেন। তার ৫০নং মালফুজাত খুব মনোযোগের সহিত পাঠ করলেই আসল উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসবে। নবীজি (সা.) এর স্বপ্ন ওহীরূপে গণ্য হয়, কিন্তু অন্য কোন ব্যক্তির স্বপ্ন ওহী হিসেবে গণ্য হবে না। কিন্তু ইলিয়াছ মেওয়াতী তার স্বপ্নকে নবুওয়াতের অংশ বানাতে চায় (মালফুজাত নং ৫০)। বোঝার ইচ্ছা থাকলে অল্প কথায় সমাধান হয়ে যায়।

ইসলাম বহির্ভূত দল সম্পর্কে নবীজির ভবিষ্যতবাণী

নবী (সা.) এর ওফাতের পর ইসলাম বহির্ভূত দল আসবে। সে সম্পর্কে নবীজি আগেই জানতেন। বিভিন্ন হাদিস শরীফে এ সম্পর্কে প্রমান পাওয়া যায়। এখানে সেরকম কয়েকটি হাদিস শরীফ পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

১.    নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, “শেষ জামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে, যারা হবে অল্প বয়স্ক যুবক, নির্বোধ। তারা সৃষ্টির সব চাইতে শ্রেষ্ঠতম কথা (কুরআন) থেকে আবৃত্তি করবে। অথচ ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়।”  (বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, ৬৪৬১ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

২.    নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, “উম্মতের মধ্য থেকে একটি দল বের হবে। যাদের নামাজের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাজকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পড়বে বটে কিন্তু তা তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়।” (বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, ৬৪৬২ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

৩.    নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে এক সম্প্রদায় বের হবে যারা তুচ্ছ মনে করবে তোমাদের নামাজকে তাদের নামাজের মুকাবিলায় এবং তোমাদের রোজাসমূহকে তাদের রোজার মুকাবিলায় এবং তোমাদের আমলসমূহকে তাদের আমলসমূহের মুকাবিলায়। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের গলদেশের নিচে যাবে না। তারা ধর্ম হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায়।” (মুয়াত্তা শরীফ, ১ম খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

৪.    নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, “পূর্বাঞ্চল থেকে একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, তবে তাদের এ পাঠ তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসবে না, যে পর্যন্ত তীর ধনুকের ছিলায় না আসে। বলা হল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, তাদের আলামত হলো মাথা মুন্ডন (মাথা ন্যাড়া করা)।” (বুখারী শরীফ ১০ম খন্ড, ৭০৫২ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ দল আরবের পূর্বাঞ্চল তথা ভারত হতেই আবির্ভূত হয়েছে। অধিকাংশ আলেম উলামাদের মতামত হলো- উক্ত হাদিস খানা বর্তমান তাবলীগ জামাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা বর্তমান তাবলীগীদের মধ্যে যুবকদের সংখ্যা বেশী এবং বেশিরভাগ তাবলীগ জামাতের লোকেরা মাথা ন্যাড়া করে রাখে। এটা কে তারা সুন্নত হিসেবে চালিয়ে দিতে চায়।

উপরোক্ত হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, ইলিয়াছি তাবলীগ একটি নতুন ফিতনা। আরবের পূর্ব দিক (ভারত) হতে এ ফিতনা আবির্ভূত হবে, এ সম্পর্কে রাসূলে কারীম (সা.) পূর্বেই ভবিষ্যত বাণী করেছেন। বুখারী শরীফে এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে দেখেছি, তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করে বলেছেন, ‘সাবধান! ফিতনা এখানেই। সাবধান! ফিতনা এখানেই। যেখান হতে শয়তানের শিং উদিত হবে।’ (বুখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, ৩০৪৯ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী (সা.) কে বলতে শুনেছি, ফিতনা এদিক থেকে আসবে। তিনি পূর্ব দিকে ইশার করলেন।’ (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, ৪৯১৪ নং হাদিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

About Fokir Owaisi

আরও দেখুন

সরণের যুক্তিকতা

ফকির উয়ায়ছী: মানুষের দ্বীন ইসলামের জন্য নিন্মোক্ত ৪:১৩৫ আয়াতটা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। আখেরাত নিজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *