ফকির উয়ায়ছী:
উম্মতে মুহাম্মদির জন্য ব্যক্তি বিশেষের কথা কতটুকু মুল্যায়িত হতে পারে সেটাই জ্ঞানীগন বিবেচনা করা উচিৎ। আল্লা পাক পবিত্র কোরআনে বলেই রেখেছে নবী তোমাদের প্রানের চেয়েও প্রিয় এবং নবী তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা। বিধায় নবী সা. এর বিধান মেনে চলাই উম্মতে মুহাম্মদির কর্তব্য। একটি কথা কথা উল্লেখ করতেই হয় দুর্গন্ধ সবসবই বেশী ছড়ায়। সে জন্যই বিপথগামীর দল বড় ভারী হওয়াই স্বাভাবিক। অনেকে এমনও আছে দল বড় দেখেই দৌড়ে লেবাস দেখে তারা আমলেই বিশ্বাস করে। গ্রামে একটি প্রবাদ বচনে বলে গাদা গাদা বই নিয়া ঘুরলে যেমন ভাল ছাত্র হওয়া যায় না। ঠিক তেমনি দাড়ি, টুপি,
পাগড়ি, তসবি হাতে থাকলেই ঈমানদার হওয়া যায় না। তাবলিগ আমলের দাওয়াত দেয় ঈমানের নামে ঠনঠন আর অধিকাংশই তাবলিগী জানেই না তাবলিগের জনক সম্পর্কে। জানে না ইলিয়াস আলিকে দিল্লির মেওয়াত শহর থেকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাড়িয়েছে স্বপ্নে পাওয়া তাবলিগ শুরু করার কারণে। সত্য বলতে যারা না বুঝে দলে ভিরে তাদের তারা বলে ঈমান হলো কচু পাতার পানি। যারা এই ধরনের কথা বলে প্রকৃত পক্ষে তারা তো মুসলমান বলার হকই রাখে না। বড় দলে বিভ্রান্ত বলেই এই জন্য আল্লা সূরা আন-আমের ৬:১১৬#“আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে”। কে মানবে না মানবে সেটা তার বিষয় আমি একটি কিতাব থেকে তাবলিগের বিভাজন তুলে ধরছি নিন্মে:
ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াছি তাবলীগ
ক্র: নং | ইসলামী তাবলীগ | ইলিয়াছি তাবলীগ |
১. | ইসলামী তাবলীগের প্রবক্তা হলেন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। ইসলামী তাবলীগ শুরু হয়েছে হেরা গুহা হতে। | বর্তমানে প্রচলিত যে তাবলীগ আমরা দেখতে পাই তার প্রবক্তা হলো মৌলভী ইলিয়াস মেওয়াতী। এই ইলিয়াছি তাবগীল শুরু হয়েছে ভারতের মেওয়াত নামক স্থান হতে। |
২. | ইসলামী তাবগীলের উসুল বা ভিত্তি ৫টি। যথাঃ কালিমা, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ্ব । | ইলিয়াছি তাবলীগে উসুল হলো ৬টি। কালিমা, নামাজ, এলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত (সহীহ নিয়ত) ও নফর ফি সাবিলিল্লাহ (তাবলীগ)। |
৩. | ইসলামী তাবলীগের ৫টি ভিত্তি আল্লাহর রাসূল (সা.) ওহীর মাধ্যমে পেয়েছেন। ওহী আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়। এখানে কোন মনগড়া কথা নেই। আল্লাহর রাসূল (সা.) এর ঘোষনাকৃত ৫টি উসুল যদি কেহ বিশ্বাস না করে বা তার মধ্যে সংযোজন বা বিয়োজন করে তবে সে মুসলমান থাকতে পারে না। এ বিষয়ে সকল উলামায়ে হক্কানীগণ এক মত। | ইলিয়াছি তাবলীগের ৬টি ভিত্তি ইলিয়াছ মেওয়াতী স্বপ্নে পেয়েছেন। আর স্বপ্ন কখনও ইসলামের দলিল নয়। ইলিয়াছি তাবলীগের ৬টি উসুলের মধ্যে রোজা, হজ্ব ও যাকাত বাদ দেয়া হয়েছে। নবীজি (সা.) যেখানে ইসলামের ৫টি ভিত্তি ঘোষনা করেছেন, যেখানে ইলিয়াছ মেওয়াতী ৬টি ঘোষনা করেছেন, তার মধ্যে আবার নবীজির ঘোষনাকৃত ৩টি উসুল বাদ দিয়ে নিজের মনগড়া ৩টি উসুল ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে ইলিয়াছ মেওয়াতী ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। যারা ইলিয়াছের আবিস্কৃত ৬ উসুলি তাবলীগ করবে বা বিশ্বাস রাখবে তারাও ইলিয়াছের মত ইসলাম হতে বের হয়ে যাবে। |
৪. | ইসলামী তাবলীগের ৫টি উসুল বা ভিত্তি কুরআনে আছে, হাদীসে আছে, ইজমায় আছে এবং কিয়াসেও আছে। | ইলয়াছি তাবলীগের ৬টি উসুল কুরআনে নাই, হাদিসে নাই, ইজমায় নাই এবং কিয়াসেও নাই। অর্থাৎ ইসলামী শরিয়তের ৪টি দলিলের কোথাও ৬ উসুলি তাবলীগের কোন অস্তিত্ব নাই। তাই ৬ উসুলি তাবলীগ নাজায়েজ। |
৫. | ইসলামী তাবলীগের লক্ষ্যস্থল হলো কাফির, মুশরিক। নবীজি (সা.), সাহাবায়ে কেরামগণ এবং আউলিয়ায়ে কেরামগণ কোন মুসলমানকে মুসলমান হওয়ার জন্য দাওয়াত দেননি, কেবলমাত্র অমুসলিমকে ইসলামের তথা মুসলমান হওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। | ইলিয়াছি তাবলীগের লক্ষ্যস্থল হলো মুসলমান এবং মসজিদ দখল। তারা যদি শুনে এটা হিন্দু এলাকা বা খ্রীষ্টান এলাকা তাহলে তারা সেখানে যায় না। তারা মুসলমানদেরকে দাওয়াত দেয় তাদের আক্বিদায় বিশ্বাসী করাতে, যা ইসলামী তাবলীগের পরিপন্থী। |
৬. | ইসলামী তাবলীগে ঘরে ঘরে, রাস্তায়- রাস্তায় লাইন বেঁধে গাশত করার কোন দলিল নেই। | ইলিয়াছি তাবলীগে লাইন বেঁধে গাশত করা হলো সদস্য সংগ্রহের মূল ফাঁদ ও বেড়াজাল। |
৭. | ইসলামী তাবলীগে হাড়ি, পাতিল, চুলা, লোটা, কম্বল, লাকড়ী, ডেকচী ইত্যাদি সাথে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। | ইলিয়াছি তাবলীগে হাড়ি, পাতিল, চুলা, লোটা, কম্বল, লাকড়ী, ডেকচী সবই সাথে নেওয়া মোটামুটি বাধ্যতামূলক। |
৮. | ইসলামী তাবলীগে মসজিদকে বাসস্থান বা থাকার হোটেল বানানো জায়েজ নেই। | ইলিয়াছি তাবলীগে মসজিদ হলো আবাসিক হোটেল। |
৯. | ইসলামী তাবলীগের উদ্দেশ্য হলো অমুসলিমকে মুসলমান বানানো। | ইলিয়াছি তাবলীগের উদ্দেশ্য হলো মুসলমানকে তাদের আকিদা তথা ওহাবী আকিদায় বিশ্বাসী বানানো। |
১০. | ইসলামী তাবলীগ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা যা, আল্লাহ নবীজি (সা.) কে শিক্ষা দিয়েছেন। | ইলিয়াছি তাবলীগ হলো স্বপ্নে পাওয়া করাত কল। যার সাথে কুরআন-হাদীসের কোন সামঞ্জস্য নেই। |
১১. | ইসলামী তাবলীগের শিক্ষা হলো উম্মত কখনও নবীর সমতুল্য হতে পারে না। | ইলিয়াছি তাবলীগের শিক্ষা হলো তারা নবীদের সমকক্ষ। (দেখুন ইলিয়াছের মালফুজাত নং ৫০)। সেখানে তিনি বলেন, ‘তোমরা নবীদের মত মানুষের উপকার করার জন্য প্রেরিত হইয়াছ। (নাউযুবিল্লাহ) |
১২. | ইসলামী তাবলীগ শিক্ষা দেয় নবীগণের কাজ সাধারণ মানুষ তথা আম জনতা করতে পারে না। | ইলয়াছি তাবলীগের শিক্ষা হলো তারা নবীওয়ালা কাজ করে থাকে। তাবলীগীদের প্রায়ই বলতে শোনা যায়, আমরা নবীওয়ালা কাজ করি। (দেখুন তাবলীগ জামাত প্রসঙ্গে ১৩ দফা, ১৪ পৃষ্ঠা, লেখক-মুহাম্মদ মুযাম্মিল হক) |
১৩. | ইসলামী তাবলীগের শিক্ষা হলো নবীগণের অন্তর কুফরী ও শিরকের দাগ হতে মুক্ত। | ইলয়াছি তাবলীগের শিক্ষা হলো নবীজির হৃদয়ে কাফেরদের ময়লার দাগ লেগে যেতো, তাই তিনি রাত্রির ইবাদতের দ্বারা ঐ দাগ পরিস্কার করতেন। (দেখুন মালফুজাত ৭ম কিস্তি, ১১১ নং মালফুজাত) |
১৪. | ইসলামী তাবলীগের শিক্ষা হলো আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত হচ্ছে ফরজ ইবাদত। যেমন- যাকাত। | ইলিয়াছি তাবলীগের শিক্ষা হলো ফরজ যাকাতের মর্তবা নফল হাদিয়ার চেয়ে কম। (দেখুন মালফুজাত ৫১ নং) |
১৫ | ইসলামী তাবলীগ মতে যাকাত পাবে এতিম, গরীব, মিসকীন। | ইলয়াছি তাবলীগ বলে ‘আমার তালিকামতে ৪০ জন তাবলীগ কর্মীকে যাকাত দেওয়া উত্তম, কেননা তাদের মধ্যে লোভ-লালসা নেই। (দেখুন মালফুজাত ৬২নং) |
১৬. | ইলসামী তাবলীগের শিক্ষা হলো প্রথমে নিজের মধ্যে ইসলামের আলো জ্বালিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে হবে। তারপর পরিবারের সবাইকে জাহান্নাম হতে বাঁচাতে হবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেন, কু আনফুসিকুম আহলিকুম নার (সূরা তাহরীম-৬) অর্থাৎ জাহান্নাম হতে আগে নিজে বাঁচ পরে পরিবাবর্গকে বাঁচাও। | ইলিয়াছি তাবলীগের শিক্ষা হলো নিজের ঘর ও পরিবারের দায়িত্ব বাদ দিয়ে চিল্লাহর নামে বাইরে চলে যাওয়া। নিজে জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবে কিনা বা পরিবারবর্গ মুক্তি পাবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই, অথচ বাড়ী হতে অনেক দূরে চলে যায় দাওয়াত দেওয়ার জন্য, যা কিনা আল্লাহর হুকুমের বিরোধী। যারা আল্লাহর হুকুমের বিরোধীতা করে, তারা মুসলমান কিনা আপনারাই বিবেচনা করবেন। |
১৭. | ইসলামী তাবলীগ বলে ‘কিয়ামতের দিন সমস্ত নবীগণ আখেরী নবী (সা.) এর ঝান্ডার ছায়াতলে থাকবেন। | ইলিয়াছি তাবলীগ বলে ‘নবীগণ নাফসী নাফসী বলে ভয়ে চিৎকার করতে থাকবেন, আর তাবলীগী মুজাহিদ বান্দাগণকে আল্লাহ সম্পূর্ণ ভয়শূণ্য অবস্থায় শান্তির ছায়াতলে রাখবেন। (দেখুন-দাওয়াতে তাবলীগ ১ম সংস্করণ, ১ম খন্ড ৫৪ পৃষ্ঠা- লেখক- আম্বর আলী) |
১৮. | ইসলামী তাবলীগের আকিদা হলো আরাফাতের জামায়েত বা ইজতিমা হলো বিশ্ব মুসলিম ইজতিমা। | ইলিয়াছি তাবলীগের দাবী হলো টঙ্গীর ইজতিমা হচ্ছে বিশ্ব ইজতিমা। |
১৯. | ইসলামী তাবলীগ বলে আরাফাতের সমাবেশ হলো অতুলনীয়, একক এবং ফরজ। | ইলিয়াছি তাবলীগ দাবী করে টঙ্গীর ইজতিমা দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ব ইজতিমা। (আরাফাতের সমাবেশের বিকল্প মনে করা বেদ্বীনি কাজ) |
২০. | ইসলামী তাবলীগের শিক্ষা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ হলো পূর্ণ কালিমা। যে কলেমা আরশে মুয়াআল্লা লেখা ছিল সব নবীগনই দেখেছেন। | ইলিয়াছি তাবলীগের শিক্ষা হলো ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ কালিমার অংশ নয়। (দেুখন- ইলিয়াছ মেওয়াতীর প্রথম কাতারের অনুসারী মৌলভী হাসান আলীর ‘চৌদা মাসায়েল’) |
২১. | ইসলামী তাবলীগে দ্বীনের দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করতেন হুজুর পাক (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামগণের মধ্যে যারা দ্বীন সম্পর্কে বিজ্ঞজন। | ইলিয়াছি তাবলীগে সাধারণ ও মূর্খ ব্যক্তিগণও দ্বীনের দাওয়াতের দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে। একজন আমীর অথচ সে আলেম নয়, মূর্খ। আমি অনেক আমীর কে ইসলাম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম তারা উত্তর না দিয়ে বলে মারকাজ মসজিদে (তাবলীগের মসজিদ) চলুন ইমাম সাহেব উত্তর দিয়ে দিবেন। যদি ইমাম সাহেবের নিকট উত্তর শোনার জন্য যাওয়া লাগে তাহলে আপনাদের তাবলীগ করে কি ফায়দা হলো? |
তাবলিগ সম্পর্কে জানতে ইলিয়াস মেওয়াতির মালফুজাত বইটি পড়ুন ডাউনলোড করে।
https://www.dropbox.com/s/m6n5ye0v4evgcha/Bangla-Book-Malfuzat%20(2)-signed.pdf?dl=0&fb=1&fb_action_ids=391379027722836&fb_action_types=dropboxdropbox%3Aadd
জ্ঞানীগন বিচার করার জন্য তাবলিগ সম্পর্কে এই বইটি ডাউনলোড করুন:
https://www.dropbox.com/s/793gmi1rgo9p9s7/1%20Tablig%20Jamater%20Gomor%20Fus.pdf?dl=0&fb=1&fb_action_ids=449785908548814&fb_action_types=dropboxdropbox%3Aupdate
Bajan, Ya Ali Modod. Excellent article for us.
অসাধারণ লেখনি দাদা , এই রকম একটা পোস্ট এর জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাজা দান করুক ।