ফকির উয়ায়ছী:
তাবলীগ জামাতের কার্যকলাপ
আমি তাবলীগ জামাত করেছি। তাই এ সম্পর্কে আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত জন্মেছে তা পাঠকদের সাথে আলোচনা করতে চাই। আমার নিকট কয়েকজন তাবলীগ ভাইয়েরা বললো, তিন চিল্লাহ দিলে নাকি জান্নাতে যাওয়া যাবে। অনেক তাবলীগ ভাইদের ধারণা তিন চিল্লাহ দিলে জান্নাত অবধারিত এবং হজ্বে যেতে না পারলে বিশ্ব ইজতিমায় গেলইে চলবে (নাউযুবিল্লাহ)। তিন চিল্লাহ দিলে যদি জান্নাতে যাওয়া যায় তাহলে পাপীদেরকে আরও সুবিধা করে দেয়া হলো। কারণ পাপী ও অসৎ ব্যক্তি মনে মনে বলবে সারাজীবন পাপ করে জীবনে তিনটি চিল্লাহ দিব, তাহলেই সব পাপ খতম। আমার জানা মতে অনেকেই তিন চিল্লাহ দিয়েছে কিন্তু চরিত্র এখনও ঠিক হয়নি, চিল্লাহ দেয়া পর্যন্তই শেষ। যেদিন চিল্লাহ শেষ করে বাড়ীতে আসছে সেদিন হতে উর্দ্ধে সাতদিন নামাজ পড়ছে। তারপর যা ছিল তাই হয়েছে। আমার পরিচিত এক লোক তিন চিল্লাহ দিয়ে আসছে। লম্বা আলখেল্লা পরিধান করে এবং লম্বা দাড়ি রেখেছে। কিন্তু পনের দিন পর দেখলাম তার মুখের দাড়ি নেই, ক্লিন সেভ করেছে। নামাজ পড়া ছুটে গেছে। সে হয়তো মনে মনে ভাবছে তিন চিল্লাহ যখন দিয়েছি তাহলে তো আমি জান্নাতি। আমার আর ইবাদতের দরকার নেই (নাউযুবিল্লাহ)
আমার কাছে যৌক্তিক হওয়ায় একটি কিতাবের কিছু অংশ তুলে ধরছি আপনাদের জন্য কারণ ইস্তেমা শুরু হয়েছে।
তাবলীগ ভাইয়েরা আরও একটি ধর্মের নামে অধর্ম করছে। তা হলো হজ্বে যেতে না পারলে বিশ্ব ইজতিমায় গেলেই হবে (নাউযুবিল্লাহ)। কোথায় হজ্ব আর কোথায় ইজতিমা। কোথায় মক্কা-মদীনা আর কোথায় টুঙ্গির তুরাগ নদীর পাড়। ইসলামী শরিয়তে তিনটি স্থানে সমাবেশ করা নিষেধ। যথা:
১. নদীর পাড়ে ২. কূপের ধারে এবং ৩. অগ্নি কুন্ডলীর নিকটে।” কারণ এই তিনটি স্থান বিপজ্জনক। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। টঙ্গির তুরাগ নদীর পাড়ে সমাবেশ করা আর গঙ্গা তীরে জড়ো হওয়া একই কথা। হিন্দুদের যত শশ্মান ঘাট আছে সবই নদীর তীরে অবস্থিত। এছাড়া হিন্দুরা গঙ্গা স্নান করার জন্য নদীর তীরেই জমা হয়। আমার তাবলীগ ভাইয়েরা হয়তো উপরোক্ত বিষয়টি জানেন না। যে সব স্থানে শরিয়ত মতে সমাবেশ করা নিষেধ, সে সব স্থানে উপস্থিত হওয়াকে হজ্বের সমতুল্য বা কাছাকাছি মনে করা সম্পূর্ণভাবে ঈমানের বিপরীত। এরূপ বিশ্বাস করলে তাঁর ঈমান থাকবে না। ফলে দেখা যায়, বিশ্ব ইজতিমার দোয়ার ৩০-৪০ লাখ মানুষের কান্নাকাটিতেও কোন বিজয় আসছে না, মুসলিম ভূমিতে কোন শান্তিও আসছে না। বরং আধিপত্য বাড়ছে কাফের, ফাসেক, মুশরিক, মুনাফিকসহ নানারূপ দুর্বৃত্তদের। অথচ এ দোয়ার মাহফিলে চমক আনার জন্যই তাবলীগ জামাতের মহা আয়োজন। তাদের এ কথা জানা দরকার যে, মুসলমানদের উপর আল্লাহর সাহায্য স্রেফ দোয়ার ডাকে আসে না। আসে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর প্রদর্শিত সিরাতুল মুস্তাকিম সুন্দরভাবে আঁকড়ে ধরার উপর ভিত্তি করে। তাই হলপ করে বলা যায়, তাবলীগ জামাতের দলই ভারী হয়েছে অর্থাৎ লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু সঠিক ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি।
১৯৬৫ সালে ঢাকায় প্রথম ইজতিমা শুরু হয়। এর আগে এই ইজতিমা অনুষ্ঠিত হত কাকরাইল মসজিদে। পরবর্তীতে টঙ্গির তুরাগ নদীর পূর্ব তীরে এ ইজতিমার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ইসলামী শরীয়তে নিন্মোক্ত স্থানে ইজতিমার অনুমতি রয়েছে। যথা:-
১. আরাফাত ময়দানে হজ্বের মৌসুমে হাজীগণের সমাবেশ শরিয়ত সম্মত। হযরত নবী করিম (সা.) এখানে হজ্ব মৌসুমে বিদায় হজ্বের ভাষণ প্রদান করেছেন। সে জন্য বিশ্ব মুসলিমের তথায় সমাবেশ ঘটানো চিরকালের জন্য অবধারিত হয়ে যায়। এটাকেই বিশ্ব ইজতিমা বলা হয়। এর কোন বিকল্প হতে পারে না। এর সাথে কোন ইজতিমার তুলনাও করা যাবে না। এ ইজতিমায় অবিশ্বাসী নিশ্চিত কাফের।
২. জুমার দিন সুনির্দিষ্ট সময়ে বিশ্ব মুসলিমের মসজিদের ইজতিমা শরিয়ত অনুমোদিত। এ ইজতিমার কথা কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে।
৩. ওলীমা, খাতনা, বিবাহ, শাদী, জানাজার ইজতিমার ক্ষেত্রেও সময় বিশেষ ইহা ফরজ, সুন্নত, ওয়াজিব ও মোস্তাহাব। ইসলামী শরিয়তে এ সব স্থানে একত্রিত হওয়ার অনুমতি আছে।
৪. জিহাদ বা যুদ্ধের ডাক পড়লে তখন নর-নারী সকলের জন্য যথাযোগ্য স্থান-কাল ব্যক্তি বিশেষে কোন এক স্থানে একত্রিত হওয়া ফরজ, সুন্নত, ওয়াজিব ও মোস্তাহাব।
এ ছাড়া দুনিয়ার যে কোন স্থানে সমাবেশ ঘটানো শরিয়ত সম্মত নয়, বরং অবৈধ। বর্তমান যুগে ঢাকার টুঙ্গির তুরাগ নদীর তীরে যে জামায়াত হচ্ছে সেই জামায়াত ইসলামী শরিয়তের অনুমোদিত নয়। যদি কেউ ঐ তাবলীগ জামাত তথা ইজতিমাকে ফরজ মনে করে সেখানে উপস্থিত হয়, তবে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি কেউ তামাশা দেখার জন্য সেখানে যায়, তাহলে এতে সওয়াবও হবে না এবং গুনাহও হবে না। আর যদি কেউ টঙ্গির ইজতেমায় না গেলে দোয়া কবুল হবে না বলে বিশ্বাস পোষণ করে, তাহলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। (সূত্র: সুন্নী পরিচয় ও তাবলীগ পরিচয়)
তাবলীগ ভাইয়েরা বিশ্বাস করেন বিশ্ব ইজতেমা হজ্বের সমতুল্য বা হজ্বের পরেই বিশ্ব ইজতেমার স্থান। তাই আমি নিজে দেখেছি অনেক তাবলীগ ভাইয়েরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্বে যায় না। তারা সুযোগ পেলেই চিল্লাহ দিতে চলে যায়। আমার পাশের গ্রামের একজন লোক সরকারী কর্মকর্তা। তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্বে যান না। একদিন আমি শুনে অবাক হলাম। তিনি তাবলীগ করার জন্য জর্ডানে চলে গেছেন। জর্ডান মুসলিম দেশ সেখানে ইসলামের দাওয়াত দিতে যাওয়াটা বোকামী নয় কি? আল্লাহর নবী (সা.) এর তাবলীগের মূল লক্ষ্য ছিল কাফের-মুশরেক। আর বর্তমান তাবলীগের মূল লক্ষ্য মুসলমানদেরকে তাদের আক্বিদায় বানানো। বিষয়টি পরিস্কার হবে একটু লক্ষ্য করুণ। তা হলো তাবলীগের ভাইয়েরা কোন হিন্দু-খ্রীষ্টান ও অন্যান্য ধর্মের লোকেদের কোনদিনও দাওয়াত দেয় না।
আলেম-উলামা এমনকি তাবলীগের ভাইয়েরা বয়ানে বলে থাকেন মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করুণ। অথচ তারা তাবলীগের নামে মসজিদে অবস্থান করে মসজিদের পবিত্রতা নিজেরাই নষ্ট করে। তাবলীগের ভাইয়েরা মসজিদকে থাকার হোটেলে পরিণত করেছে। ঢাকার কাকরাইল মসজিদে গেলে মনে হয় এটি মসজিদ তথা মানুষের ইবাদতের স্থান না, মনে হয় সরাইখানা বা আবাসিক হোটেল। এভাবে তাবলীগ ভাইয়েরা ধর্মের নামে মসজিদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদকে আবাসিক ঘর রূপে ব্যবহার করা অবৈধ ও হারাম। আল্লাহর নবী (সা.) দাওয়াত দিয়েছেন কালিমার। আর তাবলীগ ভাইয়েরা দাওয়াত দেয় নামাজের এবং চিল্লাহর। তাদের নিকট একটি কিতাব আছে নাম-‘ফাজায়েলে আমল’ যার পূর্ব নাম ছিল ‘তাবলীগী নেছাব’। এটাকে তারা এমনভাবে ভক্তি করে, যে অন্য কোন হাদিস শরীফ তারা পড়তেই চায় না। একস্থানে যদি বোখারী শরীফ, মুসলীম শরীফ, তিরমিজি শরীফ ও ফাজায়েলে আমল রাখা হয়, তাহলে আমার তাবলীগ ভাইয়েরা হাদিস শরীফ বাদ দিয়ে ‘ফাজায়েলে আমাল’ ই হাতে নিবেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ‘ফাজায়েলে আমল’ তারা বুকে করে চলা-ফেরা করে। অথচ কোরআন শরীফ নিয়ে তাদের ঘুরতে খুব কমই দেখা যায়। একটা কথা মনে রাখবেন এই ‘ফাজায়েলে আমল’ কিতাবখানা কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব নয়। বর্তমানে আরও একটি কিতাব বের হয়েছে যার নাম ‘মুন্তাখাব হাদিস’। এখন তাবলীগীরা ‘ফাজায়েলে আমল’ এর চেয়ে ‘মুন্তাখাব হাদিস’ কে বেশি প্রাধন্য দিয়ে থাকে।
আমার বাড়ীর নিকটে তাবলীগের মারকাজ ও মসজিদ অবস্থিত। মারকাজ মসজিদের সামনে হিন্দু ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বাড়ী। মারকাজ মসজিদ হতে হিন্দু-খ্রীষ্টানদের বাড়ী যেতে ১/২ মিনিটের পথ। কিন্তু ভুলক্রমেও মারকাজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, পরিচালনা পর্ষদ কোনদিনও দাওয়াত নিয়ে তাদের নিকট যাননি। জানি না তাবলীগ ভাইয়েরা এ রকম একতরফা তাবলীগ করে জান্নাতে যেতে পারবে কিনা সন্দেহ। তারা বলে হিন্দু-খ্রীষ্টান হতে দূরে থাকতে হবে। অথচ এই মারকাজ হতে দূর দূরান্তে মানুষ দাওয়াত দেয়ার জন্য চলে যায়, কিন্তু মারকাজের কাছের অমুসলমীগণ ইসলামের দাওয়াত পায় না। এটা কি তাবলীগ, না তাবলীগের নামে লুকোচুরি। আমি একদিন তাবলীগ জামাতের সাথে রাস্তায় গাশতে বের হয়েছি। আমি ছিলাম রাহবার। একটু সামনে আগালে একজন হিন্দু লোক আসলো। আমি মুতাকাল্লেম-কে বললাম উনি একজন হিন্দুলোক। তাকে কি দাওয়াত দিবেন? মুতাকাল্লেম বললেন না না তাকে ডেকো না। আমার প্রশ্ন হলো হিন্দু-খ্রীষ্টান হতে যদি দূরে থাকি, তাহলে ইসলামের দাওয়াত দিব কাদেরকে? আল্লাহর নবী (সা.) মুসলমান করেছেন অমুসলিমদের। আমরা যদি হিন্দু-খ্রীষ্টানদের দাওয়াত না দেই, তাহলে মুসলমান বানাবো কাদেরকে? বিষয়গুলো একটু ভেবে দেখবেন কি?
অনেকে স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতিকে একা ফেলে, তাদেরকে কষ্ট দিয়ে তাবলীগে চলে যায়। এভাবে যাওয়া কি উচিৎ? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে তাবলীগ করা কি শরিয়ত সম্মত। আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন মিল মহব্বত নেই, সেটা হলো জাহান্নাম।’ তাই এক বুজুর্গ বলেছেন, ‘ঘরে যার সম্মান নেই, এ বিশ্বে কোথাও তার সম্মান নেই।’ তাবলীগের ভাইয়েরা বিষয়গুলি একটু তাহকিক করে দেখবেন। আমার এক পরিচিত লোক তাবলীগের খুব ভক্ত। তিনি ঈদের আগে তাবলীগে চলে যেতেন এবং আসতেন ঈদের পরে। কিন্তু ছেলে মেয়েদের জন্য কোন কিছু কেনাকাটা করে যেতেন না। এমনকি গোশত বা সেমাই পর্যন্তও ক্রয় করে দিয়ে যেতেন না। এ রকম তাবলীগ করা কি সমীচিন?
আরও একটি বিষয় হলো আল্লাহর নবী (সা.) কি আসরের নামাজের পর ইসলামের দাওয়াত দিতেন? কখনই না। ইসলামের দাওয়াত যেকোন সময় দেওয়া যাবে। কেউ যদি মনে করে আসরের নামাজের পর দলবেঁধে না বের হলে তাবলীগ হবে না, নিঃসন্দেহে বলা যায় তার ঈমান থাকবে না। আরও লক্ষ্যনীয় যে, তাবলীগের ভাইয়েরা চিল্লাহ দেয় মসজিদে। নবী (সা.) কি কোনদিন মসজিদে চিল্লাহ দিয়েছেন? আল্লাহর ওলিরা কি মসজিদে চিল্লাহ দিয়েছেন? ইতিহাস হতে জানা যায় নবী (সা.) চিল্লাহ দিয়েছেন হেরা গুহায়। বাড়ীর নিকট কা’বা ঘর থাকা সত্ত্বেও তিনি সেখানে না গিয়ে হেরা গুহায় গিয়েছেন। আমার তাবলীগ ভাইয়েরা মনে হয় এই বিষয়টি জানে না। জানলে হয়তো মসজিদে চিল্লাহ দিত না। আদম (আ.) চিল্লাহ দিয়েছেন আরাফাতে। মুসা (আ.) চিল্লাহ দিয়েছেন তুর পাহাড়ে। আল্লাহর ওলিরা চিল্লাহ দিয়েছেন মাজারে এবং নির্জন জঙ্গলে। খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) চিল্লাহ দিয়েছেন পাকিস্তান লাহোরে অবস্থিত হযরত দাতা গঞ্জে বকশ (রহ.) এর মাজার শরীফে। শায়খ ফরিদ (রহ.) চিল্লাহ দিয়েছেন চট্টগ্রামের ষোলশহরে চশমা পাহাড়ে। হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) চিল্লাহ দিয়েছেন চট্টগ্রামের নাছিড়াবাদ পাহাড়ে। হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) চিল্লাহ দিয়েছেন মীরপুরে নিজ খানকাহতে। নবী (সা.), সাহাবীগণ এবং আউলিয়াগণ হতে মসজিদে চিল্লাহ দেয়ার কোন প্রমান পাওয়া যায় না। ইলিয়াছি তাবলীগের ভাইয়েরা ইহা কোথায় পেল? এটা কি নবীর সাথে বিরোধীতা নয়? তাবলীগের ভাইয়েরা কোন দলিলে মসজিদে চিল্লাহ দেয় তা আমার জানা নেই। হয়তো কোন নতুন দলিল বা যুক্তি তারা সৃষ্টি করেছে, তবে নবী (সা.) হতে মসজিদে চিল্লাহ দেয়ার কোন দলিল নেই। চিল্লাহ হলো একাধারে কমপক্ষে চল্লিশ দিন জনমানব হতে দূরে গিয়ে আল্লাহর ধ্যান সাধনা করা। মসজিদ কি জনমানব হতে দূরে না নিকটে? তারপর তাবলীগের ভাইয়েরা এক মসজিদে তিন দিনের বেশি থাকে না। এক মসজিদে তিন দিন থাকলে তের মসজিদে উনচল্লিশ দিন হয়। বাকি আর একদিন তারা কোথায় থাকে? হয়তো আসা যাওয়ার জন্য একদিন ব্যয় হয়। তাই যদি হয় তাহলে তো চিল্লাহ হলো না, হলো ‘উনচিল্লাহ’। নামে চিল্লাহ কিন্তু কাজে উনচিল্লাহ। এ হলো ধর্মের নামে লুকোচুরি। (আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুণ, আমিন)
আরও একটি বিষয় হলো তাবলীগের ভাইয়েরা বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে একাধারে কয়েকদিন অবস্থান করেন। সেখানে মসজিদের বিদ্যুত বিল বাড়িয়ে দিয়ে আসেন। বিলটা পরিশোধ করেন কে? নিশ্চয়ই তারা নন। যদি একটা মসজিদে একদল লোক তিনদিন থেকে যাওয়ার পর দুদিন পরে আবার অন্য আরেক দল তাবলীগে আসে এবং এভাবে দেখা যায় মাসের মধ্যে পনের দিনই মসজিদে তাবলীগের ভাইয়েরা অবস্থান করেন। তাহলে সেই মসজিদের বিদ্যুত বিল কত বেড়ে যায় একটু চিন্তা করে দেখুন। তাবলীগের ভাইয়েরা সব সময়ই মসজিদে থাকে। ফলে বিরতীহীনভাবে লাইট ও ফ্যান চলতে থাকে। তাই বিদ্যুত বিল বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোন অধিকারে তাবলীগের ভাইয়েরা অন্য এলাকার মসজিদের খরচ বাড়িয়ে দেয়? এটা কি বান্দার হক্ব নষ্ট করার শামিল নয়?
আবার কিছু আসামী পুলিশের ভয়ে তাবলীগ জামাতে গিয়ে সামিল হয়। কিছু চোর-ডাকাত চুরি করার জন্যও তাবলীগ জামাতের সাথে মিশে যায়। তারা আসরের নামাজের পরে যখন গাশতে বের হয়, তখন ঐ চোর-ডাকাতেরা এলাকার বিভিন্ন বাড়ী ঘুরে দেখার সুযোগ পায়। সুযোগ বুঝে রাত্রে সে রাড়িতে চুরি বা ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। আবার অনেক সন্ত্রাসি-জঙ্গি মানুষকে মারার জন্যও তাবলীগে যায়। কারণ তাবলীগ জামাতের মধ্যে থাকলে মানুষ সন্দেহ করবে না, নির্দ্বিধায় কাজ হাসিল করা যাবে। এরকম একটি প্রমান পাওয়া যায় ২৪ জুলাই ২০১৩ইং, বুধবারের দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়। উক্ত পত্রিকার ৭নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয় “পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে হত্যার একটি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হয়েছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের একটি চক্র লাহোরের রাইবিন্দ এলাকায় অবস্থিত নওয়াজের বাড়িতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল। পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের যৌথ তদন্ত দল ওই ষড়যন্ত্র উদঘাটন করে। অভিযোগ করা হয়, সন্দেহভাজন জঙ্গিরা তাবলীগ জামাতের অভ্যন্তরে থেকে ওই হামলার পরিকল্পনা ও উদ্যেগ নিয়েছিল। ফলে দলটিকে অনুসরণ করা গোয়েন্দাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে প্রায় এক সপ্তাহের চেষ্টায় ফাহিমের মাধ্যমে দলটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।” (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০১৩, বুধবার)