ফকির উয়ায়ছী:
কোরানে স্পষ্ট আছে আমি পোষ্টে উল্লেখ করেছি। যে শবে কদরের রাত্র নিদৃষ্ট নয় বরং শবে বরাত আল্লা কতৃক নিদৃষ্ঠ রাত্রি। সাধারন একটা জিনিষ খুব সহজেই বুঝা যায়। শবে কদর অন্ধকার রাত্রি আর বরাত আলো ঝলমলে উজালা। এটা প্রমানের জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পরে না। খোলা চোখে দেখা যায়। কদরের রাত্রিতে যারা মনে করে কোরান নামক গ্রন্থ/কিতাব নাজিল হয়েছে তাদের মাথায় এ চিন্তা কেন আসে না যে, কোরান ২৩ বৎসর ৬মাস ব্যপীয়া নাজিল হয়েছে। নাজিল শব্দটি পূর্ণাগ্য বস্তুকেই বুঝায়। অথচ কোরান নামক গ্রন্থ নাজিল হওয়ার সময়কালে অন্তত্য ২৩টা কদর রাত্রি পার হয়েছে ২৩ বৎসরে। শরিয়তের আলেম সমাজ কুল কিনারা করতে না পেরে গুজামিল দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে হাজার বৎসর ধরে। আমি পূর্বে পোষ্টে উল্লেখ করা ২টি আয়াতের দিকে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করবো আমি নিন্মে উল্লেখ করছি।
৪৪:৩# “ইন্না আনজাল নাহু ফী লাইলাতিম মুবারাকাতিন ইন্না কুন্না মুনজিরীন। অর্থ ”আমরা একে নাযিল করেছি। এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী।
৯৭:১# আয়াতে “ইন্না আনজালনাহু ফী লাইলাতিল কদরি”- অর্থ নিশ্চয়ই আমরা উহা মহিমাম্বিত রাত্রিতে নাজিল করেছি।
উপরোল্লেখিত দুটি আয়াতে বলা হয়েছে “ইন্না আনজাল নাহু ফী” এই বাক্যটির অর্থ ব্যাখ্যার দিকে কেউ দৃষ্টি দেয় না। খালি পরে আছে নাজিল করেছি নিয়ে। আরে বুদ্ধিমানের দল আপনারা কি নাজিল করলো সেটার দিকে দৃষ্টি না দেওয়া পর্যন্ত জট খুলবে কি করে। এই জন্যই আল্লা কোরানের শুরুতেই বলেছেন কোরান জ্ঞানবানদের জন্য পথের দিশা। কাজেই খোজ করুণ কোন জিনিষটা নাজিল করেছেন। রাত্র যে দুইটা এটা বুঝতে আপনাদের মতন আলেম হওয়ার দরকার নাই। অন্ধ ছাড়া সকলেই বুঝবে ঘরের বাইরে বের হলেই। আর জ্ঞানবানদের ঘর থেকেও বের হতে হবে না। চাঁদের ১৪ আর ২৭ তারিখের জ্ঞান থাকলেই। অথচ না বুঝেই এক দল শবে বরাত পালন করছে আর এক দল বিরোধীতা করছে।
হালুয়া রুটির প্রচলন অন্তর্নিহীত কারণ
===========================
শবে বরাতের সাথে হালুয়া রুটির সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তবে এই দিনে যে কারণে হালুয়া রুটি বিতরন হয় আমি সেটাই তুলে ধরেছি মাত্র।
শবে বরাতে হালুয়া রুটির খাওয়ার প্রচলন কোথা থোকে কিভাবে এলো বিবেকবানদের জন্য তুলে ধরছি মেনে নিতে বলছি না। উপলব্ধি করবেন স্ব-স্ব জ্ঞান ব্যবহার করে। এটা ইতিহাস আপনারা যদি কোরান হাদিসের দলিল চান আমি ক্ষমা প্রার্থী।
আজ থেকে ৪৩ বৎসর আগের কথা বলছি। আমার আগে যারা ছিলেন তারা আমার চেয়ে আরো ভাল বলতে পারবেন। শবে বরাত দিনটি তারা কেমন করে পালন করতেন। আমি আমার কথা দিয়েই শুরু করছি। ছোট বেলায় এই শবে বরাত দিনটিতে মাগরিবের নামাযের আগে বেশী বেশী পানি ব্যবহার করে গোশল করতাম। মুরুব্বীগন বলতেন ভাল ভাবে পাক হওয়ার জন্য যত ফোটা পানি শরীর থেকে ঝড়বে তত সোয়াব হবে। আমরাও কুয়া থেকে পানি উঠাতাম গায়ে ঢালতাম সোয়াব যে অনেক দরকার। সারা রাত্র ব্যপী মসজিদে মসজিদে ঘুরে নফল নামায আদায় করতাম। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের বাসায় বেড়াতে যেতাম মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য না খাইয়ে ছাড়তোই না। কবরস্থানে মাজারে যেতাম জিয়ারত করতাম। প্রত্যেক মসজিদে মিলাদ হতো। এমনকি বাড়ি বাড়ি মিলাদ হতো। একাধিক দাওয়াত পেয়ে যেতে না পারার জন্য ক্ষমাও চাইতে হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় যেটা হুজুরগন সেদিন হতো অমাবশ্যার চাঁদের মতন। এলাকায় মসজিদ ১/২টা বাড়ি হলো কত কত হুজুরকে বাড়ি নিয়ে মিলাদ পড়ানো কঠিন। সবার বাড়ি তো যাওয়া না। দেখতে হয় তোবারকের ব্যবস্থা কি? হাতে নগদ কত পাওয়া যাবে। এই কথাগুলি আমার পূর্বের যারা আছে তারা আরো ভাল বলতে পারবেন।
আমি হালুয়া রুটির কথা আসছি বিশ্বাস করতে বলছি না। অবিশ্বাস করা আপনাদের উপর কিন্তু অনুরোধ করছি চিন্তা করার।
বিজ্ঞজনদের মধ্যে অনেকেই বলতেন হালুয়া রুটি করার কারণ ছিলো রাছুল সা. এর দান দান মোবারক শহীদ হওয়া। অবশ্য কারণ হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। দাতে যেহেতু ব্যথা নরম খাওয়ার দরকার। কিন্তু এটা খোজ করে দেখে না রাছুল সা. এর দান দান মোবারক শহীদ হয়েছিলো কোন যুদ্ধের মধ্যে সেটা কোন সময়, আরবী কি মাস ছিলো? আমি আমার মুরশিদ কিবলা জানের মুখে শুনে এবং বুজুর্গগনের কিতাব পড়ে যা পেয়েছি সেটাই আমার কাছে যুক্তিযু্ক্ত মনে হয়েছে বিধায় সেটাই মেনে নিয়েছি এবং আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
শাবান মাসের এই দিনে রাছুল সা. তাঁর সাহাবাদের নিয়ে আলোচনায় করছে এমন এক পর্যায়ে তিঁনি সকলের কাছে জানতে চান। তোমাদের মধ্যে কে আছো আমাকে তার নিজের জীবনের চেয়েও ভালবাসো? সকলেই হাত উঠালেন। কিন্তু জিব্রাইল আ. নবীজীকে জানান আপনাকে যে নিজের জীবনের চেয়ে ভালবাসেনে সে এখানে নাই। তিঁনি এখন আপনার শোকে নিজের মুখের দাত সব ভেঙ্গে ফেলছেন। রাছুল সা. জানতে চাইলেন কে সেই মানুষ যে আমাকে এমন ভালোবাসে? জিব্রাইল আ. জানালেন কারণ শহরের অধিবাসি তার নাম উয়ায়ছী ইবনে আমের। রাছুল সা. চোখে পানি ছেড়ে দিলেন। হাক দিয়ে ডাকলেন ফাতেমা, ও ফাতেমা আমার দোস্তের বড় কষ্ট তার মুখে কোন দাত নাই। তুমি কিছু নরম খাওয়া তৈরী করো। জগত জননী মা ফাতেমা কিছু রুটি আর নরম হালুয়া বানিয়ে দিলো। হাজার মাইল দুরে কারান শহর। রাছুল সা. জিব্রাইল আ.কে বললেন হে জিব্রাইল এই খাওয়া আমি আমার দোস্তের কাছে পাঠাবো কি করে? জিব্রাইল আ. বললেন হুজুর এই দ্বায়ীত্ত্ব আপনি আমাকে দেন। তখন রাছুল জিব্রাইল আ. এর মারফত এই খাওয়া পাঠালেন। এরপর থেকে প্রতি বৎসর রাছুল সা. হালুয়া রুটি বিতরন করিয়েছেন। আশেকে রাছুল খায়রুতাবেঈন খাজা হযরত উয়ায়ছ আল কারণী রা. স্মরণে। ঘটনা লিখছি রাছুলে প্রেমের কথা মনে পরে চোখের পানি ঝড়ছে নিজেরও।
চিন্তা করতে অনুরোধ করবো উহুদের যুদ্ধে রাছুল সা. এর দান দান মোবারক শহীদ হয়েছিল। তখন ছিলো সফর মাসের শুরুর দিক। যা ইতিহাস থেকে পাওয়া যাবে। কারাণ ছিলো বানিজ্যিক শহর মক্কা থেকে প্রায় হাজার মাইল দুরে। প্রায় ১০ মাস পর বনিক দল বসে আলোচনা করছিলো মুহাম্মদকে মেরেই ফেলেছিলো আল্লা বাচিয়ে দিয়েছে শুধু একটা দাত পরছে। এই কথা খাজা উয়ায়ছ এর কানে যেতেই তিঁনি পাগলের মতন হয়ে হাতে একটা পাথর উঠিয়ে নেয়। বারি দিয়ে নিজের মুখে একটা দাত ভাঙ্গে। তারপর চিন্তা করে আমার নবীর এই দাতটা কি পরেছে? তারপর আর একটা ভাঙ্গে। আবার চিন্তা করে আমার নবীর কি এমনই ব্যথ্যা পেয়েছিলো। নাকি বেশী ব্যাথ্যা পেয়েছিলো? মনে সংসয় কাটে না। রাছুল হয়তো আরো বেশী ব্যাথা পেয়েছিলো। এই ভাবে করতে করতে মুখের সবগুলি দাত ভেঙ্গে ফেলে খান্ত হয়েছিলো। নবী এর চেয়ে বেশী কষ্ট পায় নাই। এই তৃপ্তি নিয়ে রাছুল সা. তিঁনার প্রতি সবোর্চ্চ মর্যাদা দিয়ে হযরত ওমর এবং হযরত আলী আ. বলে গিয়েছিলেন আমার ইন্তেকালের পর আমার গায়ের জুব্বাটা (পরিধেয় বস্ত্র) আমার দোস্ত উয়ায়ছকে দিয়ে বলবে আমার উম্মতের জন্য দোয়া করতে। এবং ২য় খলিফা ওমরকে বলেছিলেন নবী, হে ওমর. তোমার মাগফেরাতের জন্য উয়ায়ছকে দিয়ে দোয়া করিয়ে নিও। উয়ায়ছ যখন আল্লার দরবারে হাত উঠায় আল্লা সে হাত খালি ফেরায় না। এই হাদিস খানা মুসলিম শরীফের ৮৫নং অধ্যায়ে বিদ্যমান আছে।
কাজেই শবে বরাতের এই দিনে খাজা উয়ায়ছ এর উসিলা দিয়ে আল্লার দরবারে দোয়া প্রার্থনা করলে আল্লা আমাদের দোয়া কবুল করবেন ইনশাআল্লা। -আমীন।
বি.দ্র: আপনাদের খুশি মতন পোষ্টটি প্রচার করবেন। লেখা ভাল লাগলে এড করে সাথে থাকবেন আলোচনার জন্য।
১ম পর্ব লিঙ্ক
https://www.facebook.com/fokir.n.uws/posts/792400840953984