নবী ও রাছুলের মধ্যে পার্থক্য, এবং শেষ নবীর ধারা সংক্রান্ত আলোচনা-১
=======================================================
ফকির উয়ায়ছী:
বর্তমান কিছু বিভ্রান্ত নিজেদের ভ্রান্ত পীরকে রাছুল বানিয়ে নিয়েছেন। পীর সাহেবও নিজের নামে কলেমা পড়িয়ে বায়াত করছেন এমন লোকদের জন্য কিছু লিখা জরুরী হয়ে পড়েছে।
নবুয়্যত বা রেসালতের দায়ীত্ব পালনের উদ্দেশ্যে যাদের উপর আল্লা ওহি পাঠিয়েছেন এবং তাহারা সেসমস্ত প্রচার করেন, তাহারাই নবী বা রাছুল। নবী ও রাছুলদের মধ্যে বিশাল তফাৎ। যেমন, নবী শুধু ওহি প্রচার করেন, ওহির কোন ব্যাখা দেওয়ার অনুমতি নাই বা ওহির ব্যাখ্যা করার মত জ্ঞান আল্লা প্রদান করেন নাই। রাছুলগন ওহি প্রচার করেছেন প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ। ওহি প্রাপ্তিতার জন্য প্রথমে নবী এবং পরবর্তীতে ওহির ব্যাখ্যা করার পর সে সমস্ত নবীগন রাছুলে পরিনত হন। সকল নবী আল্লা থেকে আসমানী কিতাব পান নাই। আল্লা যে সকল নবীদের উপর আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন উনারাই রাছুল। আসমানী কিতাব প্রাপ্তির পর নবীগন একই সংগে নবী ও রাছুল উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। রাছুলদের আগমন নবীদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম, কিন্তু পদমর্যদায় নবীদের থেকে উচ্চতর।
‘উসয়াতুন হাসানাহ’ উপাধীটি আল্লা দুইজনকে দিয়েছেন। একজন আল্লার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ সা.কে -৩৩:২১ অন্য জন হলেন হযরত ইব্রাহীম আ.৬০:৪। হযরত ইব্রাহীম আ.কে আল্লা কোরআনে “সিদ্দীকান নাবিয়া” বলেছেন- ১৯:৪১। অথচ হযরত ইব্রাহীম আ. এর ছেলে ইসমাইল আ. কে “রাছুলান নাবিয়া” বলেছেন ১৯:৫৪। অপর দিকে মুসা আ.কে “রাছুলান নাবিয়া” বলেছেন ১৯:৫১। আবার মুসা আ. এর ভাই হারুন কে “হারুনা নাবিয়া” বলেছেন -১৯:৫৩। রাছুলান নাবিয়া বলা হয় কিতাব প্রাপ্ত নবীদের।
হযরত ইব্রাহিম আ. একজন উচ্চ মর্যদার নবী ছিলেন। উনার উপর আসমানী কিতাব নাজিল না হওয়ায় রাছুল ছিলেন না। আল্লা হযরত ইব্রাহিম আ.কে এবং শর্তসাপেক্ষে উনার বংশ থেকেও মানব জাতির নেতা করেছেন। আল্লা বলেছেন ২:১২৪# “যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না”।
বর্তমানে হযরত মুহাম্মদ সা. এর উম্মাতগন মুসলমান হিসাবে পরিচিত। এই মুসলমান নামকরন হযরত ইব্রাহিম আ. করেছেন এবং সে জন্য আল্লা তিঁনাকে মুসলিম জাতির পিতা ঘোষনা।- আয়াত ২২:৭৮# “তোমরা আল্লার মধ্যে তোমাদের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভুত রাখ যেমন প্রচেষ্টা তার জন্যে করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত সম্পাদন কর এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী”।
কোরআনে আল্লা ঈমানদারগনকে মুসলমান না হয়ে মরতে নিষেধ করেছেন। আয়াত ৩:১০২# “হে ঈমানদারগন! আল্লাকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনি ভাবে ভয় করতে থাক। এবং কস্মিনকালেও মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরন করো না”। হযরত ইব্রাহিম আ. ও তাঁর বংশধরগনকে মুসলমান না হয়ে মরতে নিষেধ করেছেন। আয়াত ২:১৩২# “এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহিম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যু বরন করো না”।
কোরআনে উল্লেখিত অধিকাংশ নবী হযরত ইব্রাহিম আ. এর বংশে প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লা হযরত ইব্রাহিম আ. এর বংশে নবী, কিতাব ও হেকমত প্রেরণ করেছিলেন (২৯:২৭ ও ৪:৫৪)। উনার বংশে নবী ও কিতাবধারী রাছুল প্রেরিত হওয়ার পরেও তার বংশ থেকে একজন রাছুল প্রেরনের জন্য আল্লার কাছে প্রার্থনা করলেন।
কেন একজন রাছুলের প্রয়োজন? এই রাছুলের জন্য আবার কয়েক হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তা বুঝা যায় কোরআনের আয়াত ২:১২৯# “হে পরওয়ারদিগার! তাদের মধ্য থেকেই তাঁদের নিকট একজন রাছুল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন। তাদেরকে “কিতাব ও হিকমত” শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী হিকমতওয়ালা”।
মুহাম্মদ সা. সেই রাছুল, যিনি হযরত ইব্রাহিম আ. এর বংশে প্রেরন করেছেন সমস্ত মানব জাতির রহমত সরূপ। এখানে হযরত ইব্রাহিম আ. আল্লার কাছে প্রার্থনা করেছেন সুনির্দিষ্ট কিছু কর্মসুচী যাহা কাংক্ষিত রাছুল কর্তৃক পালিত হবে। কাংক্ষিত রাছুলের জন্য মানব জাতিকে হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অবশেষে যখন কাংক্ষিত রাছুল আসলেন তখন তিঁনি হযরত ইব্রাহিম আ. এর প্রার্থনাকৃত কর্মসুচী নিজে পালন করেছেন। মুহাম্মদ সা. ওহির মাধ্যমেই জানতে পারলেন তিঁনি শেষ নবী তিঁনার পর আর কোন নবী আসবে না। রাছুল সা. তিঁনার উম্মতদের মাঝে এই কর্মসূচী যুগ যুগ ধরে অব্যাহত রাখার জন্য মানব জাতির মধ্যে বেলায়েতের বাদশা মওলা আলী আ.কে প্রস্তুত করেছেন – আর মানব জাতিকে নতুন রাছুল আগমনের অপেক্ষায় রাখেন নাই। বর্তমানে মওলা আলী আ. এর গোলামরাই এই কর্মসুচী অব্যহত রেখে চলছেন। শুধু প্রতি শতাব্দীর শেষে একজন করে মুজাদ্দিদ আসেন মাত্র। কোন রাছুল বা নবী নয়।
মুহাম্মদ সা. এর আগমন বার্তা হযরত ঈসা আ. ঘোষনা করেছিলেন তিঁনার সময়েই। -কোরআনের আয়াত ৬১:৬# “স্মরণ কর; যখন মরিয়ম তনয় ঈসা বললেন, “হে বণী ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে আল্লা পাক-এর প্রেরিত রসুল। আমার পুর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসুলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন উনার নাম হবে আহমদ”
বি.দ্র: সত্য প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি মাত্র। পরামর্শ থাকলে মন্তব্য করে জানাবেন।
