ফকির উয়ায়ছী:
আরবী সালাত শব্দটির বাংলা অর্থ দেখা যায় প্রার্থনা, উপাসনা। কিন্তু কিছু কিছু পির সাহেব তারা মনগড়া ভাবে তাদের বইয়ের মধ্যে লিখেছেন সালাত অর্থ “আত্নসংযোগ”।
আত্নসংযোগ কথাটি বিশ্লেষনে দেখা যায়, নিজে যুক্ত হওয়াই হচ্ছে আত্নসংযোগ। অর্থাৎ নিজকে যোগ করা। যেমন উধাহরণ সরূপ আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভর, আত্মনিবেদিত, আত্মনিয়োগ, আত্মউৎসর্গ এই কর্ম গুলির জন্য কারো আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ দরকার হয় না। ঠিক তেমনই একটি বাক্য হচ্ছে আত্মসংযোগ। আত্মসংযোগ নিজকে কারও সাথে যোগ করার হয় না। পির সাহেবগন আত্মসংযোগের ব্যাখ্যা দেয় পিরের চেহারা ধ্যানের মাধ্যমে পিরের সাথে সংযোগ যোগাযোগ রাখা। ভীন্ন বস্তু বা ভীন্ন সত্ত্বার সাথে যোগ থাকলে সেটা হবে যোগাযোগ আত্মসংযোগ নয়। পিরের ধ্যানে সত্যই কি যোগাযোগ থাকে। মুরিদ তো বলতে পারে না পির সাহেব কোন অবস্থায় আছে। পির সাহেব তো বলতে পারেন না মুরিদের হাল হাকিকত। দরবার থেকে বলে দেওয়া হয় সামনের ওরুসের সময় তোমার একটা গরু/খাশী দেওয়া লাগবো। পির সাহেব বলতে পারেন না পির সাহেবের নজর আনতে কত জনের কাছে ধার–দেনা করতে হয়েছে মুরিদের। মুরিদের ঘরে খাওয়া আছে কিনা পরিবার কি করে চলে সেটা জানতে চায় না।
বাংলাদেশের কিছু সূফি সাধক সালাত শব্দটি অর্থ করেছেন আত্নসংযোগ তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? আরবী অভিধান প্রনয়ণকারীগন বা যত বড় জ্ঞানী গুনিজন যাই বলুক না কেন। সে কথা বিনা দিধায় মেনে নেওয়া যুক্তি সংগত মনে করি না। আর যে সমস্ত সূফী সাধক নামধারী সালাত অর্থ আত্নসংযোগ নামে পিরে ধ্যান করাচ্ছেন সেটা পুরোপুরি আল্লা বিরোধী কর্ম। বর্ৎমানে সূফী সাধকগনের দরবারে দেখা যায় গান বাজনায় মুখোরিত শরিয়ত পরিপন্থি হয়ে নারী পুরুষ একই সাথে জিকির এমনকি নেশায় মশগুল হয়ে থাকে। তাদের সাথে আল্লা যোগ হলেও তারা বুঝবেন কি করে তারা যে নেশায় বিভোর। আত্মসংযোগ বলে পিরের সাথে সংযোগ রাখার শিক্ষাই দেওয়া হয়। কোরআনে সালাত শব্দটির সাথে কায়েম শব্দটি ওতোপ্রত ভাবে জড়িত। সংযোগ কথাটি শেষ করে কায়েম ব্যপারে না বললে সম্পূর্ণ হবে না।
সং+যোগ= সংযোগ। সংযোগ হবে তখন দুটি বস্তু বা সত্ত্বাকে এক করে মিলন ঘটাবে। সংযোগ স্থাপন করার জন্য উভয় সত্ত্বার প্রয়োজন। যদি মুরিদ ধ্যান যোগে পিরের সাথে যুক্ত হতে পারে সেটা কোন ভাবেই আত্মসংযোগ বলা যায় না। আত্ম সংযোগ Self contact বিদ্যুতের সাথে সংযোগ হলে যেমন ক্ষতি হয় ঠিক তেমনি পিরের ধ্যানে সংযোগ হতে চেষ্টা করলে জাহান্নামী হতে হবে। এটা বিদ্যুতের সাথে লাগার চেয়েও বিপদজনক।
সংযোগ একা একা হয় না। “আত্নসংযোগ”শব্দটি “One side Love” একপক্ষীয় ভালোবাসার মত শুনায়। একপক্ষীয় ভালবাসার প্রতিফল সকলেরই জানা। সংযোগ দরকার তো আল্লার সাথে রাছুল সা. যার সাথে সংযোগ রক্ষা করে চলেছেন উম্মতে মুহাম্মদির তো সেই সংযোগই স্থাপন করা বাঞ্ছণীয়।
আল্লাকে সাথে সংযোগ করা মানুষের সাধ্যের বাইরে যদি তিঁনি আল্লা সংযোগ না করেন। তিঁনি সামাদ তিঁনি নিস্প্রয়োজন। কাজেই চিন্তা করার দরকার মনে করি। সালাত কায়েম নিজের দ্বারাই সম্ভব। এবং এটাই আল্লার হুকুম। কায়েম অর্থাৎ অবধারিত, অবিরত, খাড়া, বিরামহীন, বিরতিহীন, প্রতিষ্ঠিত, সর্বদা, শব্দগুলি সাথে (সালাত) আত্মসংযোগ শব্দটির কোন ভাবেই মিলানো যায় না। তবে যিনি এই অর্থটি করেছে এবং তিনার অনুসারীগন সাদাকে জোরগলায় কালো বলে কিছুই করার নাই। বড় ভারী দল। বল প্রয়োগে সালাত অর্থ আত্নসংযোগ করতে চায় তাদের বিরোধীতা করবো কিভাবে শুধু অনুরোধ রাখবো চিন্তা করার। জানিনা আল্লা হয়তো তাদেরই উদ্দেশ্য করেই এই আয়াত নাজিল করেছেন ৬:১১৬# “যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।”
