ফকির উয়ায়ছী-Fokir:
আপনাদের অনেকেরই হয়তো জানা তবুও যেহেতু সেরকম বিষয় বর্তমানে সামনে আছে তাই মনে করিয়ে দেওয়া জরুরী। হিজরি ৫৫৫ তথা ১১৬২ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা। সে সময় সুলতান নূরুদ্দিন জানকি নামে এক ধর্মভীরু ওলীয়ে কামেল মিসরের শাসক ছিলেন। একদিন তাহাজ্জুদ নামাজের পর তিনি আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা.কে স্বপ্নে দেখতে পেলেন। রাসূল সা. লাল চামড়ার লম্বা জুব্বা পরা, লম্বা দাড়ি, পাগড়ী পরিহিত হাতে তসবীহ ওয়ালা তিন ব্যক্তিকে দেখিয়ে বললেন, এদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। এরা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে এবং চরম বেয়াদবি করছে। নূরুদ্দিনের ঘুম ভেঙে গেল। শয্যা ত্যাগ করে তিনি অজু করলেন, নামাজ পড়লেন এবং আবার ঘুমিয়ে গেলেন। তিনি আবার একই স্বপ্ন দেখলেন। আবার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গেলেন। একই স্বপ্ন তিনি তৃতীয়বার দেখলেন। তিনি অস্থির হয়ে আর ঘুমোতে পারলেন না। তার এ স্বপ্নের কথা জানালেন তার বিজ্ঞ উপদেষ্টা জামাল উদ্দিন আল মুসালিকে। উপদেষ্টা বললেন, ‘আপনি এখনো এখানে বসে আছেন কেন? আপনাকে এক্ষুনি মদিনার পথে রওনা দিতে হবে। দয়া করে আপনার এ স্বপ্নের কথা দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিকে বলবেন না।’ পর দিন অতি প্রত্যুষে নূরুদ্দিন পবিত্র মদিনার পথে রওনা দিলেন। উপদেষ্টাসহ কয়েক হাজার ঘোড়া নিয়ে সহ সফরসঙ্গীদের সাথে দান-খয়রাতের জন্য প্রচুর মূল্যবান উপঢৌকনও নিলেন।১৬ দিনে পথ পাড়ি দিয়ে তারা মদিনায় পৌঁছলেন। সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করলেন। রাসূল সা. এবং তাঁর সাথীদের তিনি বিনম্র চিত্তে সালাম জানালেন। পরবর্তী করণীয় কী ভাবতে ভাবতে তিনি মসজিদে বসে পড়লেন। উপদেষ্টা এলান করে দিলেন, ‘সুলতান মদিনাবাসীর জন্য প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে এসেছেন। এগুলো তিনি নিজ হাতে মদিনাবাসীর কাছে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করবেন।’ বিতরণের সময় সুলতান সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন উপঢৌকন গ্রহণকারীদের মধ্যে রাসূল সা. এর দেখানো তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যায় কি না? উপঢৌকন বিতরণ শেষে তিনি উপস্থিত মদিনাবাসীকে প্রশ্ন করলেন, ‘মদিনার সব বাসিন্দাই কি আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে?’ তারা বলল, ‘অবশ্যই সাক্ষাৎ করেছে।’ তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি এব্যাপারে নিশ্চিত?’ তখন তারা বলল, ‘মরক্কো থেকে আগত তিনজন ধর্মভীরু কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করে না। উপরন্তু তারা অত্যন্ত সদয়ভাবে ক্ষুধার্তদের মাঝে সহৃদয়তার সাথে নিজেদের খাবার বিতরণ করে। তারা নিয়মিত রোজা রাখে। দিনে-রাতে মসজিদে নববীতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং রাসূল সা.কে সালাম জানায়। উচ্ছ্বসিত সুলতান আবেগাপ্লুত কণ্ঠে সজোরে উচ্চারণ করলেন, ‘সুবহানাল্লাহ!’
সুলতানের তাৎক্ষণিক হুকুমে তাদেরকে তার সামনে ধরে আনা হলো। স্বপ্নে রাসূল সা. কর্তৃক দেখানো এ তিনজনের গাত্র-বর্ণ হুবহু মিলে গেল। সুলতানের প্রশ্নের জবাবে তারা বলল, ‘আমরা মরক্কোর অধিবাসী। আমরা এখানে হজব্রত পালন করতে এবং রাসূল সা. এর প্রতিবেশীদের সাথে এখানে থাকার মনোবাঞ্ছা নিয়ে এসেছি।’ সুলতান ধমকের সুরে বললেন, ‘তোমরা সত্য বলছ না কেন?’ তারা খামোশ হয়ে গেল। তাদের বাসস্থানের খোঁজ নিয়ে সুলতান জানলেন, এরা নবীজীর রওজা পাকের পাশেই থাকে। তিনজনকেই তাদের বাসস্থানে নিয়ে গেলেন তিনি। তিনি দেখলেন, ঘরে প্রচুর মূলবান সামগ্রী। ভেতরে কিছুক্ষন পায়চারির পর তিনি দেখলেন মেঝেতে একটি পুরনো বস্তা পড়ে আছে। বস্তাটি সরিয়ে তিনি আবিষ্কার করলেন সেখান থেকে এক দীর্ঘ সুড়ঙ্গ নবীজীর রওজার প্রায় কাছাকাছি পর্যন্ত খোঁড়া হয়ে গেছে। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেল। সুলতান বললেন, ‘তোমরা এখন সত্যি কথাটি বলো।’ স্বীকারোক্তিতে তারা বলল, ‘আমরা খ্রিষ্টান। মরক্কো থেকে রাজা আমাদের এখানে হাজী হিসেবে পাঠিয়েছেন। রাজা আমাদের প্রচুর অর্থসম্পদ দিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন, মুহাম্মদ সা. এর লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমাদের সাফল অর্জনের জন্য নবীজীর পবিত্র রওজার পাশে এ বাড়িতে থাকছি। আমরা সারা রাত্র সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজে ব্যস্ত থাকি এবং বস্তায় ভরে মাটিগুলো নিয়ে জান্নাতুলবাকী কবরস্থানের কবরগুলোতে ছিটিয়ে দিই। আমরা যখন সুড়ঙ্গ খুঁড়ে নবীজীর রওজার প্রায় কাছাকাছি চলে আসি তখন হঠাৎ করে ভয়ঙ্কর বজ্রপাতসহ বিদ্যুৎ চমকানি এবং ভূমিকম্পে মনে হলো পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠছে। এখন আপনি এসে আমাদের ধরে ফেলেছেন। আমরা আমাদের মহা অপরাধ স্বীকার করছি। সুলতান তিনজন অপরাধীর তাৎক্ষণিক পুড়িয়ে মারার আদেশ দিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে লাখো শুকরিয়া জানালেন এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র উদঘাটনে তাকে মনোনীত করার জন্য। সুলতান নূরুদ্দিন রাসূল সা. এর রওজার চার পাশ ঘিরে গভীর কুপ খনন করার নির্দেশ দিলেন। অত:পর গলিত সীসা ঢেলে দিয়ে কুপ পরিপূর্ণ করে দিলেন, কেউ যাতে আর কোনো দিন রওজার পাশে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে না পারে।
আধুনিকতার এই যুগে এলহাম ছাড়াই সব কিছু সত্য জানার পরও সে পথে কেউ অগ্রসর হতে চায় না। কারণ আমার জাত ভাই কি বলবেন আমি যদি প্রতিবাদ করি। লোকে আমায় অভদ্র বলবে। আর কিছু তো আছে জিহাদের নামে কতলই করে ফেলবে সত্য বলার অপরাধে। বর্তমান মানুষের ঈমান এতই দূর্বল যে আল্লাহ রাসূল সা. থেকে নির্দেশ পাওয়ার আশাই করা যায় না। স্বার্থ্যলোভীর সংখ্যা প্রতি হাজারে ৯৯৯জনের কম নয়; আল্লাহর নির্ণয়ককৃত জাহান্নামীর সংখ্যা অনুযায়ী। এই কারণেই বার বার একই কথা সকলকে বলার জন্য আহবান করছি। সৌদি সরকারকে জোর দ্বাবী জানাতে যে “রাসূল সা. রওজা সংরক্ষনের জন্য অবিলম্বে একটি চিরস্থায়ী আইন” করা হোউক। না হয় আবারোও সে চেষ্টা হতে পারে।
এই দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষই শুধু তাদের কান কথা শুনেই বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত থাকতে চায়। নিজস্ব চোখ এবং বিবেক কাজে লাগানোতে তারা বড় অলসতা দেখায়। একটি কথা বলতে চাই নিজস্ব চোখ, কান, অন্তর যারা কাজে না লাগাবেন তাদের আল্লাহ সূরা আরাফের ১৭৯ আয়াতে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই সাবধান এই সমস্ত লোকের কোন আমলই কোন কাজে আসবে না আমলের পাহার যত বড় উচুই হোউক।
