ফকির উয়ায়ছী-Fokir:
পীর প্রথা অনেক পূর্ব থেকে চালু থাকলেও বেশীর ভাগ লোক যারা মুরিদ হতো তারা অধিকাংশই অল্প শিক্ষিত। আর পীর সাহেবরা যা ইচ্ছা তাই বুঝ দিয়ে মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে পীর সাহেবরা মুরিদদের আল্লা হয়ে বসতেন। আর মুরিদদের কাজ ছিল পীর নামক আল্লাকে খুশি করা যে কোন মূল্যে। পবিত্র কোরআনে বায়াতের আবশ্যকতা দেখে একটা শ্রেনীর মানুষ বায়াত হওয়ার ইচ্ছা পৌষন করে উয়ায়ছী তরিকতে। কারণ সিলসিলার পীর ব্যতীত কেউ বায়াত করেন না। বর্তমানে অনেক বিচক্ষন শিক্ষিত মানুষ তরিকতের দিকে ধাবিত হচ্ছেন; হওয়াটাই উচিৎ তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কোরআন বিরোধী না হয়ে পরেন। আল্লার কোরআনে তরিকত বা পীর এর ব্যপারে সরাসরি কিছু নাই। এবং হাদিসেও কোন তরিকতের সম্পর্কে কিছু নাই। এমনকি কোন পীরের নামও উল্লেক্ষ নাই হাদিসের কিতাবগুলিতে। কিন্তু খাইরুতাবেঈন তাবেঈন শ্রেষ্ঠ হযরত উয়ায়ছ আল কারণী রা. নামে এমনকি মুসলিম শরীফে একটি অধ্যায় এখনোও বিদ্যমান আছে। খাজা উয়ায়ছ আল কারণী রা. সব সময়ই লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকতেই পছন্দ করতেন।
এ কারণেই উয়ায়ছী তরিকত অনুসারীগন অন্য তরিকতের মতন প্রচার প্রসার করার চেষ্টা করেন নাই।যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের আধুনিকতার ছোয়া মোবাইল, লেপটপ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য খাজার নাম লিখে মানুষের মাঝে জানাতে চেষ্টা করছি নিজেদের তৃপ্তির জন্য। তরিকতে অধিকাংশ অশিক্ষিত মানুষ এতদিন যা শুনে এসেছে সেটি হচ্ছে তরিকত ৪টি। যে পির সাহেবরা এই কথা বলে এসেছেন তরিকত চারটি এখন সেসব পির সাহেবগন তাদের নামের সাথে উয়ায়ছী নাম ধারণ করা শুরু করেছেন। বাবা ছাড়া সন্তানদের মত। বর্তমানে আধুনিকতার দরুন শিক্ষিত মানুষরা কিতাবাদী হাদিস খুব সহজেই পেয়ে যায়। কিতাবে যখন দেখেন রাছুল সা. ওমরকে বলছিলেন উয়ায়ছকে দিয়ে তোমার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করিয়ে নিও। উয়ায়ছ আল কারণী রা. এর মর্তবা দেখে সেদিকে ধাবিত হয়। বর্তমানে পীর সাহেবরা সেই পদও দখল করার জন্য ওয়ান স্টপ মল খুলে বসেছেন মরিয়া হয়ে। কোন মুরিদ যেন ছুটে যেতে না পারে। বর্তমানে উয়ায়ছী সাজার মিথ্যা চেষ্টা করচ্ছেন। মনে রাখা দরকার সঠিক উয়ায়ছী যারা তারা অন্য কোন তরিকতের সাথে যুক্ত থাকতে পারে না। বরং অন্য তরিকতের খেলাফতি ছেড়েও উয়ায়ছী তরিকতে বায়াত হন। এমনকি উয়ায়ছী তরিকতে কোন কোরআন বিরোধী তালিম (শিক্ষা) দিতে পারেন না। পীরের স্মরণ (শেরেক) উয়ায়ছী তরিকতে নেই। কিছু কিছু ভন্ডরা বলে স্বপ্নে খেলাফত পাইছেন খাজার কাছ থেকে? তাই যদি হয় নবীজি খিড়কা পাওয়ার পর মওলা আলী আ. এর হাতে কেন বায়াত হলেন? এই কথা কেন মাথায় আসে না এই বিভ্রান্তকারীদের এবং তাদের অনুসারীদের? তরিকতের বুজুর্গদের গোলামী ছাড়া যে খিলাফত মিলে সে খেলাফত ইবলিশের দেওয়া। কারণ রাছুল সা. বলেছেন ইবলিশ আমা ব্যতীত সকল রূপ ধারণ করতে পারে। আর আমি বিশ্বাস করি স্বপ্নে যে খেলাফত প্রাপ্ত দাবীদ্বার সেটা ইবলিশ হইতেই আগত।
১/ এনায়েতপুর ফতেআলী উয়ায়ছীর নাম শুনা গেলেও সে নাকি নিজে নিজে উয়ায়ছী হয়ে গিয়েছিলেন! কিন্তু তাদের তরিকতের সেজরা নামায় উয়ায়ছী তরিকতের কেউ নাই। মানুষ অন্ধের মত বিশ্বাস করছে মিথ্যার উপর বিশ্বাস এনে কোন লাভ নাই। ফতেআলী উয়েছীর নাতির ঘরের ছেলে অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ‘সেলিম শাহনুরী আল সুরেশ্বরী’ সাথে কথা হয়েছে তিনি সেজরা নামা পাঠিয়েছিলেন আমি জিজ্ঞাসা করলাম উয়ায়ছী হলেন কি করে? কেউ একজন আপনাকে বার বার বাবা ডাকলে কি আপনার সম্পদের ভাগ দিবেন। সে বললো তা কি করে হয়? তখন আমি তার কাছে জানতে চাইলাম উয়ায়ছ কারণীকে বাবা বললেই এলেম হাসিল হবে কি করে?
২/ নেদায়ই ইসলাম উয়েসীয়া শরীফ গোড়া শেখ বোরহানুদ্দিন উয়েছী তিনিও একজন গোড়া বিহিন উয়ায়ছী তারও কোন উয়ায়ছীর বংশ পরিচয় নাই। কিছুদিন আগে তার ছেলে মুস্তাক আহমেদ উয়েছী পেপারে ঘটা করে বিজ্ঞাপন দিয়ে মজলিশের আয়োজন করেছিলেন। হাজির হলাম উয়ায়ছী জেনে সেখানে যেয়ে দেখি উয়ায়ছী বলতে কিছু নাই। আছে উয়ায়ছী তরিকতের না পছন্দের কাজ কোরআন বিরোধী শেরেকি। তাদের শ্যামলী আদাবর দরবারে বসে আলোচনা করলাম জানতে চাইলাম খাজা উয়ায়ছ আল কারণী রা. ব্যপারে কিছু বলেন। কিভাবে আপনারা উয়ায়ছী হলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনই বললো আধ্যাত্ত্বিক ভাবেই খেলাফত পেয়েছে। জানতে চাইলাম উত্তরে তারা বললো, খাজা উয়ায়ছ আল কারনী রা. স্বপ্নে শেখ বোরহানুদ্দিন সাহেবকে খেলাফতি দিয়েছেন। তারপর বোরহানুদ্দিন সাহেব থেকে তার বড় ছেলে মানযুর আহমাদ রেফায়ী তার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই মুসতাক আহমাদ নামে বর্তমান গদ্দিনশীন আছেন। কমিটির উচ্চ পদস্থ মুরিদ ভক্তদের সাথে আলোচনা কালে জিজ্ঞাসা করলাম। খাজা উয়ায়ছ কারণী রা. মওলা আলীর হাতে বায়াতের বিষয়ে এবং জালাল উদ্দিন গোড়গানী রা. এবং হিশামুদ্দিন ইয়ামানী রা. হইতে তরিকতের সিলসিলা শুরুর প্রসঙ্গে। এই ব্যপারে তারা কিছুই জানেন না। খোজ করে জানা গেছে উয়েসীয়া নাম দিয়ে একটা মাদ্রাসা করেছে দীর্ঘদিন আগে। সেটা থেকেই আজ তারা উয়ায়ছী হয়েছেন। এই দুই দল ছাড়াও অনেকেই নামের সাথে উয়ায়ছী ব্যবহার করে বিভ্রান্ত উয়ায়ছী সেজে অন্য তরিকতের কোরআন বিরোধী তালিম দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এই বিভ্রান্ত উয়ায়ছী নামক অনুসারীরা বলে সকলেই উয়ায়ছী হতে পারে জিকির করতে করতে বেহুশ হয়ে যারা হালে/মাস্ত হয়ে যায় তখন উয়ায়ছী হয়ে যায়। খাজা উয়ায়ছ কারণী আশেকে রাছুল ছিলেন তিনি তো বেহুশ হালের আশেক ছিলেন? এটা এই বিভ্রান্ত লোকদের মাথায় আসে না। জানতে চাইলাম বেহুশ হলে যদি উয়ায়ছী হয় হুশ থাকা অবস্থায় কি হয়? তাদের জবাব, কি আবার হবে। তাদের কথা শুনে নিন্মের পয়ারটি মনে হয়েছে
মাস্ত হালেই যদি উয়ায়ছ হবে
ছাগলের বিজেও গরু জন্মাবে
পেট ফেটে ছাগল মারা যাবে
মরলে হালের ঠেলা বুঝতে পারবে।।
উয়ায়ছী নাম নিলেই উয়ায়ছী হওয়ার কোন উপায় নাই। উয়ায়ছী সিলসিলার গোলামী না করে উয়ায়ছীর কিছুই পাবে না। আল্লা তোমার কাছে ফরিয়াদ এই লোকগুলির চোখ, কান, অন্তর মহর মেরে না দিয়ে বিভ্রান্ততা থেকে সঠিক পথে আসার সুযোগ দাও। নিন্মে সঠিক উয়ায়ছী তরিকত চেনার কিছু সহজ উপায় দেওয়া হলো:
১/ সেজড়ার শুরুতেই প্রথমে রাসূল সা., ২য় মওলা আলী, ৩য় খাজা উয়ায়ছ আল কারণী, ৪ জালাল উদ্দিন গোড়গানী/ হিশামুদ্দিন ইয়ামানীর নাম থাকবে।
২/ সঠিক উয়ায়ছীগন বায়াত করার সময় কখোনই কছম (শপথ) কাটাবে না যে এই দরবার ভাল এটা ছেড়ে অন্য কোন দরবারে যাওয়া যাবে না।
৩/ উয়ায়ছী তরিকতে আল্লার জিকির ব্যতীত পিরের নিজস্ব কোন অজিফা দেওয়া হয় না অন্য তরিকতের মত এমনকি পিরের স্মরণ (ধ্যান) শেরেকি গুনাহ হিসাবে মানা হয় কোরআন অনুযায়ী। আল্লা এবং রাসুল সা. এর বাণী উপর দিয়ে কোন ওলি আউলিয়ার বচন মান্যবর নহে।
৪/ উয়ায়ছী তরিকতে উচ্চ স্বরে জিকির করার কোন নিয়ম নাই আল্লার বিধানের বাইরে। আল্লার বিধান অর্থাৎ কোরআনের আয়াত-৭:২০৫
৫/ সবচেয়ে খাস হলো আপনার জানা শরিয়তের ওযুর দোয়া দিয়ে উয়ায়ছী তরিকতে দাখিল করার কোন বিধান নাই। যদি আপনি উয়ায়ছী তরিকতে বায়াত হওয়ার জন্য কোন পিরের কাছে যান তবে সে পির সাহেব নিজে অথবা তার ওযু জানা কোন মুরিদকে দিয়ে ওযু করিয়ে আনার পরই মুরিদ করবেন। উয়ায়ছীগন বিশ্বাস করে শরিয়তের ওযু দিয়ে মারেফতের রাস্তা পার করা যাবে না। যেমন গাড়ির এক জেলার জন্য টিকেট কিনে সে টিকেটে অন্য জেলায় ভ্রমন করা যায় না। শুধু উয়ায়ছী তরিকত কেন মারেফতের সকল অনুসারীদেরই চিন্তা করা উচিৎ। শরিয়তের ওযু দিয়ে মারেফতের পথ কেমনে পারি দেওয়া যাবে?
৬/ তরিকতে কোন মহিলা পির হওয়ার সুযোগ নাই যা অন্য তরিকতে দেখা যায়। বরং মহিলাদের বায়াত করার আগে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের নিজের সম্মতি এবং অবিবাহিত হলে পিতার বিবাহিত হলে স্বামীর ইচ্ছা স্বামী/পিতার সম্মুখে বায়াত করার নিয়ম।