ফকির উয়ায়ছী-Fokir:
বর্তমানে বাংলাদেশে পিস টিভি বন্ধের যে আহবান উঠেছে সরকারের কাছে সেটা শতভাগ সমর্থনযোগ্য। আল্লার কোরআনের বিরোধী হওয়ার জন্য বন্ধ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টায় লিখছি। জনাব জাকির নায়েক ইসলাম প্রচারের কথা বলে গরীব দু:খি মানুষের হক চেটেপুখে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আর বিত্ত্বশালী লোক সকল সোয়াবের আশায় ঝামেলা বিহীন ভাবে একটি চেকের মাধ্যমে বা ওন লাইনে পেমেন্ট করে গরীব দু:খিদের বিরক্ততা থেকে নিজেদের রক্ষা করছেন। প্রথমেই উল্লেখ করছি জাকির নায়েক টিভি চ্যানেল চালানোর ব্যপারে কোরআন বিরোধী কথা বলছেন সেটি হচ্ছে যাকাতের টাকা পিস টিভিতে দেওয়া যাবে। ইসলাম প্রচারের জন্য। কোরআনের বিধান অনুযায়ী নতুন কোন সংযোজন বা বিয়োজন সম্পূর্ণ বিদাত। আল্লা এবং রাছুল সা. এর বিধান অনুযায়ী যাকাত দেওয়ার খাত ৮টি। এই আটটি খাতেরমধ্যে একটি যোগ করাও যেমন বেদাত। অথবা একটি বাদ দিয়ে একটি সংযোজন করাও বেদাত। খাতগুলি উল্লেখ করছি নিন্মে:
৯:৬০# “যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস–মুক্তির জন্যে–ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লা সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”
যাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য ৮টি খাত উল্লিখিত হয়েছে। ১। ফকির: ফকির যারা নিজেদের সাধারণ জীবন যাপন করতে পারে না। অনেক দুঃখে–কষ্টে কালাতিপাত করে– তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে। হাদীস শরিফে বলা হয়েছে ‘তোমাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে যাকাত নেয়া হবে, আর গরিবের মাঝে বিতরণ করা হবে।’ ২। মিসকিন: সহায়–সম্বলহীন হৃতসর্বস্ব ব্যক্তি যার নিকট নগদ অর্থ বলতে কিছুই নেই– অন্যের দ্বারে হাত পাতে এমন লোকদের যাকাত দেয়া যাবে। ৩। কর্মকর্তা–কর্মচারী: যাকাতের টাকা বা সম্পদ উসুল করার কাজে নিয়োজিত কর্মচারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। চাই এরা ধনী হোক অথবা গরিব। সর্বাবস্থায় এ যাকাতের থেকে তারা তাদের বেতন ভাতা গ্রহণ করতে পারবে। ৪। কৃতদাসকে মুক্তকরার জন্য: কৃতদাস বা কৃতদাসীকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। ৫। মুআল্লাফাতে কুলুব: অমুসলিম বা কাফের সম্প্রদায়ের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। যাতে তারা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ৬। ঋণগ্রস্ত: ঋণগ্রস্ত কোন ব্যক্তির ওপর তার ঋণের বোঝা কমানো বা ঋণ মুক্ত করার উদ্দেশ্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। ৭। ফি সাবিলিল্লাহ খাত: ফি সাবিলিল্লাহ বলতে যারা আল্লাহর পথে বিভিন্ন ভাবে জিহাদরত তাদের সার্বিক সাহায্য করতে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। ৮। মুসাফিরদের জন্য: কোন মুসাফির ব্যক্তি পথিমধ্যে অর্থাভাবে বিপদগ্রস্থ বা অসহায় হয়ে পড়েছে। বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছার মত কোন সম্বল তার সঙ্গে নেই। এমতাবস্থায় যাকাতের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা বা লোকটির জন্য যাকাতের অর্থ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ বৈধ। উপরোক্ত খাতগুলিতে ইসলাম প্রচারের কথা কোন খাত নাই কিন্তু জাকির নায়েক ইসলাম প্রচারের জন্য যাকাত কিভাবে চাইতে পারেন। অথচ আল্লা রাছুল সা.কেই বলেছেন।
৬৪:১২# “তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলুল্লাহর আনুগত্য কর। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমার রসূলের দায়িত্ব কেবল খোলাখুলি পৌছে দেয়া।” আমাদের রাছুল সা. এর চেয়ে বেশী ইমানদার হওয়া চেষ্টা করলে মুহাম্মদ সা. এর উম্মতের খাতা থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ারই কথা। আর মুম্মতে মুহাম্মদি থেকে খারিজ হলে মুসলমান বলার হক থাকে না। তার নিজের আলাদা ধর্ম বানাতে হবে। আর কোরআনের বিধান অমান্যকারীদের সম্পর্কে আল্লা বলেছেন সূরা মায়িদার ৫:৪৪#“আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।”
জেহাদ মানে আল্লার নাম নিয়ে অন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়া নয়; সেটা তার প্রচারণায় কখনোই দেখা যায় না। জেহাদ অর্থ যদি মারামারী- কাটাকাটিই হতো তবে রাছুল সা. আত্মশুদ্ধির সাধনাই জেহাদে আকবর (সবচেয়ে বড় যুদ্ধ) কেন বলতেন। এমনকি আল্লা পবিত্র কোরআনে বলেছেন ২:১৯০# “লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” এই আয়াতটিতে বুঝা যায় অগ্রগামী হয়ে ফাসাদ সৃষ্টি করা যাবে না। আল্লা দ্বীন এর ধর্মের ব্যপারেও আয়াত নাজিল করেছেন।
২:২৫৬#“দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।” এই আয়াতে পরিষ্কার ভিন্নমতের মানুষ থাকবেই সমাজে তাদেরকে জোর করে ইসলাম বুঝানোর দ্বায়ীত্ত্ব কারোরই নাই। কেন এই আয়াত মানবতার জন্য প্রচার করা হয় না।
জাকির নায়েকের পিস টিভিতে কোরআনের নিন্মোক্ত আয়াতগুলি নিয়ে কখনোই আলোচনা হয় না। এমনকি ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত এবং মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত যত আলেম আছে তারা কখনোই বলে না। আমার প্রশ্ন তাদের দৃষ্টিতে এই আয়াতগুলিকে আল্লা অযথা নাজিল করেছেন। আমি নিন্মে আয়াতগুলি কোট করছি আপনাদের চিন্তা করে দেখার জন্য:
৪২:২৩#“বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কেবল আত্নীয়তাজনিত সৌহার্দ চাই”।
৩৬:২১#“অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত”।
২:১৭৪#“নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব”।
উপরোক্ত আয়াতগুলি না প্রচারকারী দলের সবচেয়ে বড় প্রচারণা চালায় পির ফকিরদের কাছে যাওয়া বেদাৎ। অথচ মুসা আ. এর মত নবীকেও খিজির আ. কাছে যেতে হয়েছিল যদিও খিজির আ. কোন নবী রাছুল ছিলেন না। ২য় খলিফা হযরত ওমরকে রাছুল সা. পাঠিয়েছিলেন তাবেঈন শ্রেষ্ঠ উয়ায়ছ আল কারণী রা. উসিলায় নিজের জন্য আল্লার কাছে ক্ষমা চাইতে। মুসলিম শরীফের ৮৫ নং অধ্যায়ে প্রমান আছে। তাদের প্রচারণা এমন ভাবেই করে মাদ্রাসায় গমন ব্যতীত কেউ ধর্মের কথা বলতে পারবেন না। অথচ ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কোন মাদ্রাসা পড়ুয়া আলেম ছিল না এটা মোটামুটি সকলেই জানেন। শুধু মাদ্রাসায় গমনকারীরাই জানেন না। কারণ এই সত্য ছাত্ররা কোনদিন তাদের শিক্ষকদের কাছে শুনেন না। বিষেশ করে আলেম (জ্ঞানী) শব্দটি মাদ্রাসায় পড়ুয়া লোকেরা নিজেদের পত্রিক সম্পদের মতন করেই ধরে রাখতে চায়। যদি এই শব্দটি যে কোন বিষয়ে বিষারদ ব্যক্তির বেলাতেই প্রযোজ্য তবে অমুক বিষয়ে আলেম কথাটি প্রযোজ্য। যেমন বাংলা বা বিষয়ে জ্ঞানী (আলেম), অথবা বিজ্ঞান বা আরবী বিষয়ে জ্ঞানী (আলেম)। কিন্তু আলেম শব্দ শুনলেই চোখে ভেষে উঠে দাড়ি, টুপি, জুব্বা, পাগড়ি ওয়ালা একটি মানুষ। কারণ এই শিক্ষাই আমরা ছোট বেলা থেকে পেয়ে এসেছি।
জাকির নায়েক তার ওস্তাদ (শিক্ষক) শেখ আহমেদ দিদাদের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরিতে প্রচারনা চালাচ্ছে ঈদে মিলাদুন নবী দিনটি পালন সম্পর্কে। জাকির নায়েক গুরু মারা বিদ্যা শিক্ষা দিচ্ছেন। শেখ আহমেদ দিদাদ ঈদে মিলাদ্দুননবীর দিনটি খুব ভাল করেই পালন করতেন তার প্রমান ইউ টিউবে মজুদ আছে। অথচ জাকির নায়েক এই দিনটি উদযাপন বিদাত বলে প্রচার করছেন। তিনি মনগড়া প্রচারনা চালাচ্ছেন নানাবিধ কারণে অনেক দেশে থেকে তাকে কাফের ফতোয়া দিয়েছেন এরই মধ্যে এমনকি ভারতের অনেক রাজ্য থেকেও। আমাদের দেশেও জাকির নায়েকের চ্যানেল পিস টিভি বন্ধ করলে যুব সমাজ রক্ষা পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।