ফিৎরার সুন্নত পালন করবো রাছুলের বিধান অনুযায়ী
ফকির উয়ায়ছী:
ইসলামের পঞ্চ-স্তম্ভের সাথে আর কিছু কিছু বাধ্যতা মূলক (ফরয) বিধান আছে। তার একটি হচ্ছে ফিৎরা। মুসলমান ধর্ম অনুসারীদের জন্য বাধ্যতামুলক। একটি শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকে মৃত্যু আগ পর্যন্ত ফিৎরা আদায় করতে হবে। এটা ধনী গরীব উভকেই আদায় করতেই হবে। আর যেহেতু নেকি/সোয়াবের সাথে সম্পর্ক সেখানে কার্পন্য করা মোটেও সমীচিন নয়। যেহেতু সকলেই নেকী প্রত্যাশি জান্নাতের আশারত।
রোযার মাস চলছে মোটামুটি সব মসজিদেই ফিৎরা প্রদানের উপর আলোচনা হচ্ছে। মসজিদের খতিবগন জানিয়ে দিবেন ইসলামী ফাউন্ডেশন এই বছর ফিৎরা নির্ধারন করেছে। গত বৎসর ফিৎরা ছিলো ৬৫ টাকা থেকে ১৯৮০ টাকা। এবারও কিছু এদিক সেদিক হতে পারে। ফিৎরার বস্তু সমূহ কি কি জিনিষ দিয়ে ফিৎরা আদায় করা যায়।
আমার ফিৎরা যদি ৬৫ টাকায় আদায় হয় আমি কেন দিতে যাবো বেশী? আমার সাথে অনেকে একমত নাও হতে পারেন। আপনারা অর্থশালী বড় মনের মানুষ। আমার কথা হচ্ছে আমাকে কম ৬৫ টাকায় ফেৎরা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন সেটা দিলে তো রাছুল সা. এর সুন্নত পালন হচ্ছে না। তবে আমাকে বিপথে কেন নিচ্ছেন এসব আলেমগন। আলেম সমাজ ধর্ম আদর্শে মক্কা-মদিনার কথা বলে। ফিৎতার সময় সিরিয়ার আদর্শ না জানলেও পালন করে যাচ্ছেন। আমি মনে করি আমাদের দেশে গম ফিৎরা থেকে চাউল ফিৎরা দেওয়া উত্তম। কারণ চাউল সর্ব স্থানেই পাওয়া যায় কিন্তু গম নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা যারা বসে ফেৎরা নির্ধারন করছেন হিসাব করে দেখুন এক একজনে ইফতার কত টাকার খেয়েছেন। ওটা তো সরকারী টাকা আপনাদের হিসাব করার দরকার পরে না।
ধর্মীও আদেশ যেহেতু আমাদের দেশে ইসলামি ফাউন্ডেশন থেকেই দেওয়া হয় সেহেতু কমিটির চিন্তা করা উচিৎ যাতে তাদের মতবাদ যেনো বিতর্কীত না হয়। অনেকের দৃষ্টিতে আমীরে মুয়াবিয়া বিতর্কীত। আহলে বায়াতের সঠিক অনুসারীরা মুয়াবিয়াকে পছন্দ করে না। মুয়াবিয়ার সুন্নত ঠিকই পালন করছে টাকা বাচানোর সুবিদ্ধার্থে। বিতর্কীত ব্যক্তির বিধান তো সুন্নত হতে পারে না। রাছুল সা. বিতর্কের উর্দ্ধে বলেই তিঁনার বিধান মুসলমানদের কাছে সুন্নত বলে বিবেচিত।
যাক আমি যা পেয়েছি ফিৎরা সম্পর্কে সেটাই আলোচনা করছি। ফিৎরা এমন এক বিধান শরিয়তের এক দিনের ভুমিষ্ট হওয়া শিশু এবং হায়াতে থাকা বৃদ্ধ মানুষের জন্যও ফিৎরা আদায় করতে হবে। যারা ফিৎরা গ্রহন করবেন তাদেরও ফিৎরা প্রদান করতে হবে। ধরুন কেউ যদি ফিৎরা গ্রহন করেন তাদের আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে স্বামী তার ফিৎরা স্ত্রীকে দিবেন। সেমতে স্ত্রী তার ফিতরা তারই স্বামীকে প্রদান করবেন। তবুও ফিৎরা দেওয়া থেকে রক্ষা পাবে না।
ফিৎরা প্রদানের বস্তু কি কি?
————————————–
হাদিস শরীফে বর্ণীত আছে রাছুল সা. কতৃক ফিৎরার বস্তু জব, কিসমিস, খেজুর এবং পনির। এই চারটি বস্তুই এক ‘সা’ পরিমান দিতে হবে। অথবা এই মালগুলির সমমূল্যের টাকা প্রদান করতে হবে। রাছুল সা. ওফাতের পর প্রথম চার খলিফার সময় রাছুল সা. এর বিধানই চালু ছিল।
কার সুন্নত পালন করবেন ফিৎরা আদায়ে রাছুল সা. এর সুন্নত নাকি সাহাবীর সুন্নত?
—————————————————————————————————
কার সুন্নত পালন করবেন এই প্রশ্নটা করাতে চিন্তিত হচ্ছেন? রাছুল সা. এর সুন্নত পালন করলে সোয়াব বেশী এবং গরীব পাবে তার সঠিক হক। আর সাহাবার সুন্নত পালন করলে লাভ হবে আপনার। মরবে রাছুল সা. এর দু:খি উম্মত।
কি পরিমানে প্রদান করবেন ফিৎরা
——————————————
রাছুল সা. কতৃক ফিৎরার বস্তু জব, কিসমিস, খেজুর এবং পনির। এই চারটি বস্তুই এক “সা” পরিমান দিতে হবে। মক্কা এবং মদিনার এক “সা”- এর পরিমান তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। রাছুল সা. এবং প্রথম চার খলিফার সময় এই নিয়মই পালন করা হয়েছিলো বলে জানি। কিন্তু প্রথম শাসক আমীরে মুয়াবিয়ার আমলে তার দেশ সিরিয়ায় গমের উৎপাদন ছিল বেশী। তাই তার আমলে জবের বদলী গম চালু করা হলো এবং সে সাথে সিরিয়ার এক “সা” পরিমান ফিৎরার প্রচলন শুরু করলেন। আর সিরিয়ার এক “সা” পরিমান হচ্ছে প্রায় ১ কেজি ৭৫০ গ্রাম অর্থাৎ পৌনে ২কেজি। গম দিয়ে দিয়েছে যদি পরিমানটা রাছুল সা. এর হিসাব অনুযায়ী ৩.৩০০কেজি করতো তাও মনকে বুঝ দিতে পারতাম। মুয়াবিয়ার অযৌক্তি এখানে যুক্তি হয়েছে পরিমান কমানোর পরও। অথচ আপনী আমাকে এক বস্তা চিকন চাউল দিলেন। আমি সেটা মোটা চাউল দিয়ে পরিশোধ করলেও আপনী মানবেন না। আর গম যদি দেই তো মাথায় বারি দিতেও দিধা করবেন না। মুয়াবিয়া বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে তখন প্রতিবাদ করলে হয়তো জীবন যেতো সেখানের রাছুল প্রেমিকদের।
রাছুল সা. এর সুন্নত হিসাবে পালনে সাড়ে তিন কেজি পরিমান আদায় করাই সঠিক বলে মনে করি। আর যারা আর্থিক অবস্থা সচ্ছল থাকা সত্ত্বেও অর্থহীনদের মতন শুধু পৌনে দুই কেজি গম বা সমমূল্য দিয়েই পার পেতে চান তারা আল্লার দরবারে জিজ্ঞাসীত হবেন। রাছুল সা. এর সুন্নত পালন না করার দ্বায়ে। চিন্তাশীলদের কাছে হাস্যকর বিষয় হবে চিন্তা করলে। কেউ যদি জবের পরিবর্তে গম দেন তবে দিতে পারবেন পৌনে ২ কেজি ফিৎরা আদায় করতে পারবেন। যদিও গমের মূল্য যবের চেয়ে কম। আর যদি কেউ খেজুর, কিসমিস বা পনির দেন তবে দিতে হবে ৩কেজি ৩০০ গ্রাম পরিমানে। যদি কম দিয়েই ইসলামের বিধান পালন করা যায় তবে বোকার মত বেশী দিতে যাবে কেন মানুষ?
এখন একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়। জলিলুল কদর সাহাবা কাতেবে ওহি আমীরে মুয়াবিয়া পরিবর্তন ঘটিয়েছে প্রথম ৫ নাম্বার আইটেম গম বানিয়ে। বর্ৎমান ইমাম সাহেবগন আলাদা অভিমত চালাচ্ছেন রাছুল সা. এর নির্ধারিত জিনিষ এবং পরিমানের তোয়াক্কা না করে। আমার ব্যক্তি অভিমত যার যার আর্থিক সচ্ছলতা অনুযায়ী ফিৎরা নির্ধারন করাটা উচিৎ ছিল। হাজার প্রতি, লক্ষ পতি এবং কোটি পতি মানুষদের ফিৎরা হবে শ্রেনীভেদে। এক রকম হবার কোন কারণ নাই।
বর্তমানে খেজুর ১০০ টাকা থেকে ৩০০০ কেজি টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। ১০০ টাকা মূলের খেজুর যারা খাবেন তারা ১০০ টাকা মুল্য মানের খেজুর বা সমমান টাকা দিয়ে ফিৎরা আদায় করবেন। কিন্তু যারা ৩০০০ টাকার খেজুর খাচ্ছেন তারা ১০০ টাকা দামের খেজুর বা সমমান টাকা দিয়ে ফিৎরা আদায় করলে সেটা কবুল হওয়ার কোন কারণ নাই। নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুণ। দান করা কথা তো উত্তম বস্তু।
এই ব্যপারে ইসলামী ফাউন্ডেশন ফতোয়া দেওয়া উচিৎ ছিল বলে মনে করি। যেহেতু ফিৎরা ধনী গরীব সকলের জন্যই প্রযোজ্য সেহেতু যারা বড়লোক মানুষের ফিৎরা নিবে তারা সহজেই সর্বনিম্ন ফিৎরা আদায়ে কষ্ট হবে না। ধরুন ১০০০ টাকার সাড়ে তিন কেজি x ১০০০=৩৫০০ টাকা একজন পেল সে অবলীলায় ১০০ টাকা সর্বনিম্ন ফিৎরা প্রদান করতে পারবে। তাদের কষ্ট হবে না ফিৎরার বিধান পালন করতে। এই ব্যপারে আমাদের দেশের ইসলামী ফতোয়াবাদী সংগঠনের বিবেচনার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর সে সাথে পাঠকগনদের প্রতি অনুরোধ করছি আপনারা আপনাদের বিবেক অনুযায়ী চিন্তা করে ফিৎরা প্রদান করলে গরীবেরা বেশী উপকৃত হবে এবং সেমতে আপনাদের সোয়াবও বৃদ্ধি হবে।
আমার তরিকতের মানুষের জন্য আদেশ তারা যেনো ৬৫ টাকা না দিয়ে সামর্থ অনুযায়ী ফিৎরা দেয়। একান্ত অপারগ যারা হয় তবুও যেনো একদিন কম খেয়ে হলেও ৩.৩০০গ্রাম চাউল বা সমমূল্য টাকা প্রতি জনের ফিৎরা আদায় করবে। এবং আমাকে যারা পছন্দ করেন তাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা আপনাদের বিবেচনা অনুযায়ী ফিৎরা আদায় করবেন। তবে ৬৫ টাকা হলে সেটা হবে মুয়াবিয়ার সুন্নত ফেৎরা হবে আমার রাছুলের সুন্নত নয়। যারা সহমত হবেন; এতদিন না বুঝে গরীবের প্রকৃত হক আদায়ে কার্পণ্য হওয়ার জন্য আল্লার নিকট ক্ষমা চাইবেন। জেনে বুঝে অন্যায় করলে সে অন্যায় ক্ষমা আল্লা করবেন না।
দানে কার্পন্যকারী এবং অবিবেকবান দুরে থাকুন। আপনার মতামত আশা করছি।
বি.দ্র: যারা একমত হয়ে প্রদান করবেন কৃতজ্ঞতা এবং দোয়া সামিল থাকবেন তারা। অনুগ্রহ করে জানালে খুশি হবো।
