ফানা ফিশ শাইখ অর্থাৎ পীরের হয়ে যাও
ফকির উয়ায়ছী:
মারেফতের মুরুব্বি বুজুর্গদের থেকে শুনা একটি গল্প দিয়া শুরু করছি। মুসা আ. আল্লাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আল্লা, তুমি কি আমার সাথে সব সময় থাকো? আমি যখন স্ত্রী সহবাস করি তখনও কি তুমি থাকো? উত্তরে আল্লা বললেন হে মুসা আমি থাকি এবং সবসময়ই থাকি। মুসা আ. বললেন হে আল্লা তোমার লজ্জা করেনা? আজ যখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে যাবো তুমি আমার সাথে থাকবেনা এটা অনুরোধ। আল্লা বললেন মুসা ঠিক আছে আমি থাকবো না। মুসা আ. এই কথা তিনার স্ত্রীকে জানাইয়া শুইলেন এবং স্ত্রীকে বললেন তোমার কাজ শেষে শুয়ে আমাকে ডাক দিও। ঘরের সকল কর্ম শেষ করে স্ত্রী, স্বামী মুসা আ. এর পাশে শুইলেন। মুসা নবী এর কোন চেতনা না পাওয়ায় রাত্রে স্ত্রী একাধিক বার ডাকা-ডাকি করলেন। শত ডাকেও মুসা আ.কে ভাঙ্গাতে পারলেন না মহিলা ঘুমিয়ে পরলেন। সকাল বেলা যখন ঘুম ভাঙ্গলো মুসা আ. তো স্ত্রীর উপর রাগ। কেন তাকে ডাকা হলো না। মুসা নবী আল্লা থেকে কথা নিয়েছিলে আজ স্ত্রী সহবাসের সময় আল্লা সাথে থাকবেন না। মুসা নবীর রাগ থামার পর স্ত্রী রাত্রে জাগাতে না পারার সব ঘটনা বলল তখন মুসা আ. বুঝতে পারলো এবং সাথে সাথে আল্লার কাছে ক্ষমা চাইলেন। কিন্তু মারেফতের পথিকগন আপনাদের চোখ খুলবে এই আশা নিয়ে আজকের এই পোষ্ট।
আল্লা কোরআনে বলেছেন উপমা দিতে তিঁনি লজ্জা বোধ করেন না। আমিও আজ একটি সত্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো কথা গুলি বিবেচনা করে দেখবেন। বর্তমানে পীর সাহেবরা মারফতকে যে নোংড়া অবস্থায় নিয়া দাড় করিয়েছে বিশেষ করে দুইটি তরিকত; তাদেরকে কোরআনের ভাষায় যে কি বলা যায় আমার মাথায় আসে না। মারেফতের প্রথম ছবক (শিক্ষা) হলো “ফানাফিশ শায়েখ”: অর্থাৎ পীরের সাথে বিলিন (মিলিয়া) হইয়া যাও।
সঠিক ব্যাখ্যাটা হলো আল্লা এবং রাছুলকে যেভাবে মানবেন ঠিক একই ভাবে পীরকেও মানতে হবে। পীরের হুকুমকে আল্লার হুকুমের মত প্রাধান্য দিয়ে মানতে হবে। যদি না পীর কোরআন বিরুধী কিছু বলে। কোরআন বিরুধী হলে তাকে আর মানা যাবে না। সোজা কথায় আল্লা, রাসূল এবং পীর (উলিল আমর) এক বরাবর হবে। কিন্তু ভিন্ন তিন আলাদা সত্ত্বা হিসাবে। কারণ আল্লা কোরআনে ৫:৭৩ নং আয়াতে বলেছেন তিনকে যারা এক বলে তারা কাফের। এই পীরের সাথে ফানা (মিলিয়া) হয়ে যাওয়াকে কত বিকৃত করে উপস্থাপন করছেন তার কোন অন্ত নাই! পীর শিক্ষা দেয় মুরিদ যখন ফানা হবে মুরিদের নিজের বলে কিছু থাকবে না। যেমন মুরিদ যে কোন কাজ করবে সেটা যেন পীরই করলেন। এই জন্য কিছু কিছু পীরের মুরিদ স্ত্রী সহবাস বন্ধ রাখতে বলেন। কারণ মুরিদ সহবাস করলে সেটা হবে যেন তার পীর সহবাস করলো মুরিদের স্ত্রীর সাথে। এই কারণে যখন (জাকের ভাই বোন) অর্থাৎ পীর ভাই পীর বোনদের সাথে লাইলি মজনুর অবৈধ খেলা খেলে। সেখানে তাদের কোন গুনা থাকে না তিনারা যা করছেন সেকাজ তার পীরই করছেন। সে কারণে কিছু তরিকতের পীররা সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে ছাড়েন না। পীর (আল্লা)কে খুশি করার জন্য মুরিদরা তাদের স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেয় পীরের কাছে। (নাউজুবিল্লাহ)।
এই সব বিকৃত মগজের মানুষগুলি চিন্তাও করেনা। একটা কঠিন কথা বলতে হয় অনেক পীরের মেয়ের জামাই শশুরের কাছে মুরিদ; সে জামাই যখন স্ত্রী সহবাস করবে আর তখন যদি তার পীরের সাথে ফানা হইয়া থাকে তবে সম্পর্কটা কোথায় গিয়া দাড়ায়!-নাউজুবিল্লাহ।
এখনও সময় আছে নিজেদের ভুল ভেঙ্গে নিয়ে সঠিক রাস্তা খুজে বের করুন। কোরআনের সূরা এখলাস দিয়া যাচাই করে নিতে হবে পীর সাহেব সঠিক কিনা। আল্লা কোরআনের সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে বলেছেন “আল্লাকে মান এবং রাসূলকে মান এবং তোমাদের মধ্যকার বিচারের অধিকারীকে মান (বিচারের অধীকারী হচ্ছেন পীর ওস্তাদ, কোরআন হাদীস বিষয়ক শিক্ষক, ইমাম, বাবা এবং মা) অর্থাৎ আপনি যাকে মানবেন সেই আপনার উলিল আমর বা নেতা। আল্লা এবং রাসূল নিয়ে কোন মতভেদ হওয়ার কারণ নাই। বিপত্তিটা ঘটে সেখানে যেহেতু আল্লা একক কোন ব্যক্তিকে উলিল আমর মনোনিত করেন নাই উলিল আমর একটা বিশেষ শ্রেনীর মানুষদেরকে বুঝিয়েছেন। এই জন্যই মতভেদ হওয়ার কথাও আল্লা বলে দিয়েছেন। অত:পর তোমাদের মধ্যে (পীর এবং তালেবের মধ্যে) যদি মতভেদ হয় সেটা আল্লাহ্ এবং রাসুলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। এই “তোমাদের মধ্যেকার” বলতে বুঝিয়েছেন আপনি এবং আপনার বিচারের অধীকারী অর্থাৎ আপনার পীর এবং আপনি। আপনার পীর যদি আপনাদের সাথে কোরআন বিরোধী কথা বলে সেই কথা অন্ধ বোবার মত ‘না’ মেনে, আল্লা এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। জাহাঙ্গীর বা ঈমান আল সুরেশরী সাহেবের এক খলিফার সাথে আলোচনা কালে জানতে চাইলাম যখন আপনি ফানা হইলেন তখন কি আপনার খেতে হয় নাই ঘুমাতে হয় নাই ইত্যাদি—। আর আপনি যখন ফানা হয়েছেন তখন তো আপনিও পীরের সাথে ছিলেন; আপনার পীর যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছেন সেখানেও তো আপনি ছিলেন। আপনার পীর তো আপনার জন্য নায়েবে রাসূল। আর কোরআনের আয়াত আল্লা বলেছেন “নবীর স্ত্রী সকল মুমিনের ‘মা’-” তবে ফানা হয়ে কি করলেন আপনার পীর মা’র সাথে? আস্তাগফিরুল্লাহ। সে লোকটি জ্ঞানবান এবং তিনি চিন্তায় আদিষ্ট হলেন বললেন তবে তো মায়ের সাথে জেনা করা হলো। আর আমার স্ত্রী সহবাসের সময় যখন পীর ফানা ছিলো সে সন্তান আমার একার নয় বরং জারজ হলো। আমি বললাম একটু সতর্ক হলেই তো বৈধ করতে পারতেন সন্তানকে। পীর সাহেবকে জানিয়ে নিতেন যে বাবা আমি আপনার মেয়ে কাছে যাচ্ছি এখন আপনী ফানা থেকে আজাদ করেন। লোকটি নিরুত্তর। কেন আপনাদের মাথায় আসে না? যতই ভাবেন ফানা হইছেন আত্মসত্ত্বা কখনোও এক হবার নয়; যেহেতু নিজের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য অনেক কিছুই করা লাগে।
ফানাফিশ শাইখ মারেফতের সব তরিকতে প্রথম শিক্ষা হলেও উয়ায়ছী তরিকতে প্রথম শিক্ষা হচ্ছে ‘ফানাফিল আফাল’ অর্থাৎ অন্তরে যা আছে মুখে তার প্রকাশ। ফানাফিশ শাইখ কিভাবে হবে যদি মনে একটা মুখে ভীন্ন কথা থাকে। কাজেই মন আগে ঠিক করে মুখে তা (সত্য) প্রকাশ করতে হবে। মুখ দিয়ে মিথ্যা বললে বা মনে একটা ভেবে মুখে ভীন্ন প্রকাশ করলে সে কি করে ফানা হবে? আর যদি মনে করে ফানা হয়েছে। তবে তো পীরের সাথে মিথ্যাবাদীর মিশ্রন ঘটলো অথবা তার ঠিক উল্টাটাও হতে পারে। পীর মিথ্যাবাদী হলে সত্যবাদী মুরিদের সাথে মিথ্যার মিশ্রন ঘটলো। দুধের মধ্যে তেতুল পরলে দুধ নষ্ট হবে ঠিক তেমনি তেতুলের রসে দুধ ঢাকলেও দুধটাই নষ্ট হবে। উভয়ই পীর মুরিদ সত্যবাদি এবং অন্তরে যা মুখে তার প্রকাশ ঘটাতে না পারলে মারেফত শিক্ষা কোন লাভই হবে না।
উয়ায়ছী তরিকতের সঠিক অনুসারীদের কাছে মারফতের শিক্ষা যাহা বিদ্যমান তাহা কোরআনের সাথে কোনভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। কিন্তু বর্তমানে একাধিক বিপথগামী পীর যে উয়ায়ছী তরিকতেও বিদ্যমান। কাজেই আপনারা যদি কেউ উয়ায়ছী তরিকতের দিকে বিচরন করার ইচ্ছা পৌষন কখনো করেন তবে একটা প্রশ্ন করে অবশ্যই জেনে নিতে চেষ্টা করবেন। পীরের চেহারা ধ্যান শিক্ষা করতে হয় নাকি? যদি দেখেন তা করতে হয় সেটা কোন ক্রমেই সঠিক উয়ায়ছী তরিকত নয়। বাস্তবত উয়ায়ছী তরিকতে এই শিক্ষা নাই। হিন্দুদের মূর্তি পুজা আল্লার বিধান অনুযায়ী বৈধ নয়। এটা মুসলমান ধর্মের সব মাযহাবের লোক সকল মেনে নিবেন। আমিও তাই মানি শুধু মূর্তি নয় কোন কিছুর ধ্যান করাই আল্লার সমকক্ষ করা সেটা শতভাগ শেরেকি। আর আল্লা কোরআনে বলেছেন শেরেকি গুনাহ আল্লা ক্ষমা করবেন না। কিন্তু আমার বিশ্বাস পীরের চেহারা ধ্যান হতে মূর্তি পুজা বেশী উত্তম। কারণ পীর নিজে মন্দ কাজে লিপ্ত হতে পারে এবং মুরিদদের দিয়েও মন্দ কাজ করাতে পারে। চিন্তার জন্য বলছি আল্লা বলেছেন “লাইসা কামিসলিহি শাইয়ুন” অর্থাৎ আল্লার কোন মেসাল (উপমা/বর্ণনা) নাই। এতে সহজেই বুঝা যায় আল্লাকে চেনানোর জন্য এমন কোন প্রতিছবি হয় না বা নাই। যে সেটা দেখলে আল্লাকে চেনা যাবে। পীরের ধ্যানকারীদের চিন্তা করার অনুরোধ করছি আমার আপনার পীরকে চিনানোর জন্য সাধারন একটা ছবিই তো যথেষ্ট। একবার ছবি দেখলেই লক্ষ মানুষের মধ্যেও সনাক্ত করতে পারবে যে দেখেছে। তবে কি করে আল্লার মত মনে করে ধ্যান বা স্মরণ করবেন? আর হিন্দুদের পুজা এই কারণেই উত্তম মনে করি মূর্তির কোন ক্ষমতা নাই পাপ করার এবং পাপ করানোর। মনে রাখা জরুরী আল্লা একক সত্ত্বা। যত বড় পীর আউলিয়া যাই কিছু বলুক না কেন আল্লার কোরআনের চেয়ে বেশী মূল্যায়ন পেতে পারে না। কাজেই পীর যদি কোরআন এর বাইরে কিছু বলেন তাকে মানা অর্থাৎ আল্লাকে অবমাননা করা। আর আল্লা অবমাননাকারী জাহান্নামের অধিবাসী সে কথা কাউকে বুঝিয়ে বলার দরকার নাই আমার মত পাপী ব্যক্তির।
আর একটি কথা বলতেই হয় যেটা অর্বাচিনদের মাথায় ধরে না এরা বলে পীরকে দেখলেই আল্লা দেখা হয়। একবারও চিন্তা করে না পীর যখন আঘাত প্রাপ্ত হয়, খুধা লাগে, বা ওফাৎ প্রাপ্ত হয়। তখন তো তাদের বলা উচিৎ আমাদের আল্লা ওফাৎ প্রাপ্ত হইছে। নাউজুবিল্লা। যেটা মারেফতে খুব প্রচলিত কথা ব্যবহার হয় “গুরুই সত্য” “পীরই সত্য” “পীরই পুজনীয়” “পীরই আল্লা” “পীরই সব” “বাবার দয়ায় বেচে আছি” কিন্তু পূর্বে ওলিআল্লাগন বলেছে “আনাল হক” অর্থাৎ আমি সত্য। মনসুর হাল্লাজ এর এই কথাটা মারেফতের সকলেই জানা সত্ত্বেও এই ধরনের কথাগুলি পীর সাহেবগন কিভাবে সমর্থন করেন সেটা বোধগম্য নয়। আমার লেখায় যদি কোন অযুক্তিক কিছু থাকে যাহা কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক আলোচনা করলে কৃতজ্ঞ হবো। আর আল্লা ব্যতিত যে কোন ইনসানের খেলাফ গেলে সেটা নিয়ে কোন আলোচনায় যেতেই আমি অপারগ।
বিনীত অনুরোধ:
আমি ব্যক্তি স্বার্থর জন্য কোন লেখা-লেখি করি না। আল্লা আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তিঁনার সৃষ্টির কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য লিখা। আমার কোন পোষ্টে যদি আল্লার কোরআন এবং সহিহ হাদিস বিরোধী কিছু থাকে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ হবো। তবে লোক সংখ্যায় বড় দলের মতামত দিয়ে সত্য যাচাই করতে চাইলে সে সত্য আল্লার দরবারে গৃহিত হবে কিনা সেটা বিবেচনা করেই বিরোধীতা করবেন আশা রাখি।
