ফকির উয়ায়ছী: মক্কায় যখন ইসলাম বিজয় ঘোষিত হয় অতঃপর নবী করিম (সা.) তায়েফ গমন প্রাক্কালে হুনায়েন প্রান্তরে পৌছলে ইসলামের শত্রুরা নবী করিম (সা.)-কে আক্রমন করে বসে। এ সময় অনেক সাহাবী নবীজীকে একাকী ফেলে নিজ জীবন বাঁচাতে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যান। হযরত আলী কতিপয় ত্যাগী মোমিন সাহাবী দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নবীজীকে উদ্ধার করেন। খুবই সংকটের মধ্যে যুদ্ধজয় শেষে রাসূলূল্লাহ (সা.) সন্ধ্যার সময় উটে চড়ে তায়েফ শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। হজরত হুজায়ফা (রা.) উটের রশি ধরে টেনে নিচ্ছিলেন। একটি পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় হঠাৎ আল্লাহর ফেরেশতা নবীজীকে জানিয়ে দিলেন যে, সামনে শত্রুরা পাথর নিয়ে বসে আছে আপনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। আরও একটু অগ্রসর হলে পাহাড়ের উপরে সন্ধ্যার হালকা অন্ধকারে একটু সামনে কয়েকটি মনুষ্য মূর্তি দেখতে পান। এমন সময় হঠাৎ করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ওঠে। বিদ্যুতের আলোতে নবীজী পাঁচজনের একটি দলকে স্পষ্ট দেখতে পান এবং চিনে ফেলেন। তারা পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যে মাত্র নবীজী তাদের টার্গেটের মধ্যে আসবেন এমনি তারা উপর থেকে বড় বড় পাথর নবীজীর উপরে ছেড়ে দেবে। এ ধরনের হত্যার পরিকল্পনা করে তারা বসে আছে।
হযরত হুজায়ফাও বিদ্যুতের আলোতে সকল শত্রুদের চেহারা দেখে চিনে ফেলেন এবং চিৎকার করে বলে উঠলেন: হুজুর, অমুক অমুক। নবীজী হুজায়ফাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, তুমিও চিনেছ আমিও চিনেছি আর বলতে হবে না। হজরত হুজায়ফার ভীতিজনক চিৎকারে সবাই সরে পড়ে। পরের দিন প্রকাশ্য দরবারে নবী করিম (সা.) বলেন, মুনাফিকদের তিনিও চিনেছেন। আবু হুজায়ফাও চিনেছেন। পরের দিন মুনাফেকদের একজন আবু হুজায়ফা (রা.)-কে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমার নাম কি ঐ মুনাফেকদের নামের সাথে আছে? আবু হুজায়ফা (রা.) বলেন, নবীজী আমাকে নিষেধ করেছেন নাম বলার জন্য। সেদিন তিনি চলে যান। কয়েকদিন পর আবার এসে আবু হুযায়ফা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমার নামও কি ঐ মুনাফেকদের তালিকায় আছে? দ্বিতীয়বারও তিনি বলেন, আমাকে নবীজী নিষেধ করেছেন বলার জন্য। তখন তিনি (হযরত ওমর) বলেন, তুমি বলো আর না বলো, আমার নাম ঐ তালিকায় আছে।
তৃতীয়বার হযরত ওমর আবু হুজায়ফাকে একই কথা জিজ্ঞেস করলেন, তার বাড়ি গিয়ে। তখন আবু হুজায়ফা (রা.) বলেন, তুমি নিজে জান না, তুমি আছো কি নাই এ তালিকায়? কেন বারবার এক কথা আমাকে জিজ্ঞেস করতে এসো। আবু হুজায়ফা (রা.) নবীজীর অত্যান্ত কাছের এবং বিশ্বস্ত ও অত্যধিক উচ্চ মানের সাহাবা ছিলেন। তিনি অনেক মুনাফেকদের জানতেন, চিনতেন যারা নবীজীর সাথে ঘোরাফেরা করতো। -(সত্য সন্ধানী সাহাবী পুস্তকের ৫৩-৫৪ পৃষ্ঠা হইতে গৃহীত।)