ইদানীং প্রায়ই দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে প্লেন করে একটি গ্রুপের অধিকাংশরাই শেয়ার করছে। অমুক লোকটি শিয়া হয়েছে। এই সমস্ত বিভ্রান্তসৃষ্টিকারী লোকদের কাছে জানাতে ইচ্ছে করে শিয়া হয়ে লোকটি কি ইসলাম ধর্মের অন্তর্গত হলো নাকি ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে গেলো! যে লোকটি নব্য শিয়া বা কনভার্টেড শিয়া হলো সে কোন ধর্মের ছিলো? এই দলটি সম্প্রতি কয়েক বৎসর যাবৎ বাংলাদেশে খুব সোচ্চার হয়েছে দেখা যায়। ইতিমধ্যে এজেন্টের কাজেও নিয়োজিত আছে অনেকেই শিয়া মাজহাবে রূপান্তরিত করার জন্য। কিছুদিন আগে আমাদের কিছু লেখা পড়ে আমাদের শিয়া ভেবে বাসায় এসেছে একাধিক শিয়া নামধারী তবে সবার পরিবারই সুন্নি সে শিয়া হয়েছে। এদের সাথে কথা বলে বুঝা যায় তারা পরিবারের কাছে ঘৃনীত। এমনকি একজন আমাকে বলেছে তার বাবা/মা সহ পরিবারের সকলেই ঘৃনা করে। অন্য একজনের সাথে কথা হয়েছে তিনি বলেছেন আমি শিয়া হয়েছি কিন্তু আমার স্ত্রী শিয়া হতে চায় না। কিছুদিন আগে শিয়া বিষয়ে একটি পোষ্ট করায় ফোনে উল্টাপাল্টা গালাগালি করেছে আমাকে। অযাচিত এই লোকগুলির কারণে বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এই কনভার্টেড শিয়া গুলি ইসলামের পূর্বের ইতিহাসের দু-চারটি কথা শুনে বলে আমি আজ থেকে শিয়া হয়ে গেলাম। সত্য সবার কাছেই সত্য এটার জন্য সুন্নি শিয়া আলাদা হওয়ার প্রয়োজন পরে না। যেহেতু ইসলাম শব্দটি অর্থ হচ্ছে শান্তি। যারা মুসলমানদের মধ্যে শিয়া বা সুন্নি ডিভিশন করে তারা আর যাই হোউক ইসলামের নয়। যখনই ডিভিশন (বিভেদ) করবে তখনই শান্তি নামক ইসলাম বিনষ্ট হবে। আর ইসলাম বিনষ্ট করলে তারা মুসলামদের কাতার থেকে বাদ হয়ে যায় খারেজিতে রূপান্তরিত হয়।
শিয়া হওয়ার কারণ:
শিয়া হওয়ার মেইন কারণ দেখা যাচ্ছে কারবালার ময়দানে ঘটনা বলি সুন্নি মাজহাবের অনুসারী ইমাম সাহেবগন কোন সময়ই মুসল্লিদের মাঝে আলোচনা করে না জানা থাকা সত্ত্বেও এমনকি ইসলামী ফাউন্ডেশনের কোন কিতাবেও পাওয়া যায় না। একটা বই আল্লার অশেষ রহমতে প্রকাশ হয়েছিলো “খেলাফতের ইতিহাস”- মূল লেখক- মুহাম্মদ আহসানউল্লাহ। অনুবাদক: মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার সিদ্দিকী। ইসলামী ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ, ঢাকা। ই,ফা, প্রকাশনা:১৭৫। ই,ফা গ্রন্থাগার: ২৯৭.০৯ আহ- খি। প্রথম প্রকাশকাল-১৯৮০। এবং দ্বিতীয় মুদ্রন ১৯৮৩ইং। কিন্তু এই বইটি যথেষ্ট সত্য প্রকাশ হয়েছিল বলেই মনে হয় সেটা আর পাওয়া যায় না বাজারে। অথচ ইসলামের সঠিক ইতিহাস মুসলমানদের জানার জন্য এই কিতাবটি বেশী বেশী বাজারে বিতরন করা আবশ্যক। কিন্তু এই কিতাবটির মতনই শিয়া মাজহাব একটি বই বেশী বেশী প্রচার করছেন। সে কিতাবটির নাম “অবশেষে আমি সত্য পেলাম” লেখক: ড: মুহাম্মদ আল তিজানী আল সামাভী। এই কিতাবটি পড়ে খলিফাদের সহ ইয়াজিদ মুয়াবিয়ার কর্ম কান্ডকে দেখিয়ে উঠতি বয়সের মানুষদের বুঝানো হচ্ছে। সুন্নি আলেমগন এই সব লুকিয়ে রাখে। বিধায় তারা মনে করছে এই সত্যগুলি শিয়ারা ছাড়া কেউ জানে না। এই কিতাবটি প্রকৃত নাম আমার মতে “অবশেষে আমি শিয়া হলাম” হলেই কিতাবটি স্বার্থকতা হতো। কারণ অনেক মানুষ এই কিতাবটি পড়ে কনভার্টেড শিয়া বলছে নিজেদেরকে।
সুন্নি পরিবার থেকে যারা নব্য শিয়া হচ্ছে। তারা যেহেতু শিয়া হয়ে নিজেদের আলাদা করছে এদের মধ্যে অনেকেই বিবাহিত। মেয়ের বাবা সুন্নি জেনে বিয়ে দিচ্ছে পরে যখন তারা শিয়া হচ্ছে কিন্তু তাদের স্ত্রীগন সুন্নি থেকে যাচ্ছে। একটা প্রশ্ন দাড়ায় সুন্নি মহিলা এবং শিয়া পুরুষের ঔরশজাত সন্তানরা তো শিয়া+সুন্নির মিশ্রনে ভিন্ন কিছু একটা হবে। এটা কি কনভার্টেড শিয়াদের মাথায় আসে না। যারা নিজেরা নব্য শিয়া হয়ে নিজেদের আলাদা করছে তাদের সুন্নি স্ত্রীদের সংস্পর্শে যাওয়াও তো অবৈধ হয়ে যায়। এই নব্য শিয়া লোকগুলি তাদের পরিবার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবে যখন তারা মারা যাবে। তাদের পরিবার পরিজন তো জানাযা পড়াতে নিয়ে যাবে সুন্নি আলেমদের কাছে এমনকি অনেক আত্মীয় স্বজন এই কনভার্টেড শিয়াদের জানাযাতেও দাড়াবে অনিচ্ছা সত্ত্বে কেউ কেউ হয়তো জানাযায় সামিলই হবে না। কাজেই এখনো চিন্তা করার সময় আছে। চিন্তা করে দেখুন সত্য জানা বুঝার জন্য ইসলাম এবং মাজহাব বদল করে ইসলাম নামক শান্তি বিনষ্ট করার কোন প্রয়োজন নাই। একটি কথা না বললেই নয় সত্য তিক্ত। এবং সত্য মেনে নেওয়ার মানুষের সংখ্যা বেশী হবে না। কারণ হিসাবে একটি হাদিস উল্লেখ করবো। হাদিসে পাওয়া যায় আল্লা বলে “প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামে যাবে ১জন জান্নাতে। কাজেই সত্য ইতিহাস মেনে নেওয়ার মানুষের সংখ্যা প্রতি হাজারে এক জনের বেশী হবে না। আর যদি সত্য কোন এক সভায় একের অধিক ব্যক্তি সত্য মেনে নেয় তবে বুঝে নিতে হবে পরবর্তি হাজারের একজন আগাম পেয়ে গেছেন। এই দুনিয়ার বিচারে যে দল বড় সে দলকেই সঠিক মনে করলেও আল্লার দরবারে সেটা গৃহিত হবে না। আল্লা কোরআনে এই সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন।৬:১১৬#“যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে”।
পরিশেষে সত্য সন্ধানী মানুষদের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি ইসলামের সঠিক ইতিহাস জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্যই জরুরী তবে এর জন্য সমাজ সংসার পরিত্যাজ্ঞ করে বাপ দাদা জন্মগত পরিচয় প্রত্যাক্ষান করে মাজবাহ পরিবর্তনে বিভ্রান্ততা ছাড়া কিছুই মিলবে না।
বিনীত অনুরোধ:
আমি ব্যক্তি স্বার্থর জন্য কোন লেখা-লেখি করি না। আল্লা আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তিঁনার সৃষ্টির কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য লিখা। আমার কোন পোষ্টে যদি আল্লার কোরআন এবং সহিহ হাদিস বিরোধী কিছু থাকে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ হবো। তবে লোক সংখ্যায় বড় দলের মতামত দিয়ে সত্য যাচাই করতে চাইলে সে সত্য আল্লার দরবারে গৃহিত হবে কিনা সেটা বিবেচনা করেই বিরোধীতা করবেন আশা রাখি।
