ফকির উয়ায়ছী-Fokir:
আমার প্রিয় পাঠকগন আস-সালামু আলাইকুম……।
আপনাদের প্রায় সকলেরই কানে শুনা অতি পরিচিত একটি শব্দ নিয়ে চিন্তা করার অনুরোধ করবো। আপনারা অন্তত্য রেডিও টেলিভীশনে প্রত্যহই শুনে থাকেন আযানের দোয়াটি। দোয়াটিও আমি উল্লেখ করছি: “এই পূর্ণাঙ্গ আহবান ও শাশ্বত নামাযের তুমিই প্রভু । মহানবী (সা:) কে তুমি দান করো সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান এবং সীমাহীন মর্যাদা ,তাকে অধিষ্ঠিত করো যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাকে দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করো না।” দোয়ায় ব্যবহিৃত শব্দটি হচ্ছে “শাশ্বত নামায” ।
এই শব্দটি আমি যখনই শুনি এবং মানুষকে পড়তে দেখি আযানের সময় তখন আশ্চর্য্য হই। মনে প্রশ্ন হয় আমাদের মতন অধম পাপীদের দোয়ার জন্য আল্লা তাঁর প্রিয় হাবিবকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছেন। রাছুল সা.কে সম্মানীত স্থানে এখনো দেওয়া হয় নাই। অবলীলায় পড়ে যাচ্ছে চিন্তাও করছেন না। হাতে গোনা দু-একজন হয়তো চিন্তা করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই যে এই শব্দটির উপর আমল করে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। এই শব্দটির মর্ম খুজে দেখলে সহজেই বুঝা যাবে এটা কিছু সময় নামায আদায় করলেই “শাশ্বত নামায” আল্লার হুকুম অনুযায়ী পরিপূর্ণ ভাবে পালন হয় না কিছু সময় ব্যয় করে পালন হওয়ার উপায়ও নাই। আমি শাশ্বত নামায বাক্য দুটির মধ্যে ‘শাশ্বত’ শব্দটির সমার্থক শব্দগুলি খুজে বের করে আপনাদের জন্য উপস্থাপন করছি নিন্মে।
“শাশ্বত”
অনন্ত, চিরস্থায়ী, চিরন্তন, সনাতন, অমর, চির, নিত্য, অজর, স্থায়ী, অবিরাম, নিয়ত, অপরিবর্তনীয়, অনস্ত, অনবরত, নিরন্তর, অবিনশ্বর, অক্ষয়, অমৃত, অবিকার্য, চিরজীবী, অদূষ্য ইত্যাদী এমন আরও অনেক শব্দ আছে।
আমি শাশ্বত শব্দটির ব্যাখ্যায় অল্প কথায় বলতে চাই আল্লার সমস্ত সৃষ্টি জীবের যতক্ষন শ্বাস (দম) থাকবে সেটাই শাশ্বত। দম ফুরানোর আগ পর্যন্ত শাশ্বত সালাত অনবরত সকল জীবেরই চালু থাকে। আর শ্বাস (দম, নি:শ্বাস-প্রশ্বাস) যেহেতু হুসে-বেহুশে, পাক-নাপাকে, ঘুমে-জাগ্রত অবস্থায় চালু থাকেই। সেহেতু শাশ্বত সালাত কায়েমে ওযু গোশলের বাঞ্ছনীয়তা পরিলোক্ষিত হয় না। পবিত্র কোরআনে বলা আছে আল্লার সমস্ত সৃষ্টি তিঁনার প্রতি সেজদারত। এখানে চিন্তার বিষয় হচ্ছে সিজদা কিভাবে দেয় গাছ, মাছ, পাখি, হাতি ইত্যাদি জীব জন্তু? যারা বুঝে নিতে পারে যারা জানে তাদের থেকে তারাই শুধু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হতে পারে। পাঠকগন যদি মনে করেন আমি ওযু ছাড়া ওয়াক্তিয়া সালাত আদায়ের কথা বলছি সেটা মস্ত ভুল চিন্তা হবে। আমি শুধু শাশ্বত সালাতের কথাই বলছি। ওয়াক্তিয়া সালাত আদায়ের পূর্বে ওযু গোশলের শর্ত আল্লা কোরআনের সূরা মায়িদা ৫:৬ মাঝে বাধ্যতামূলক করেছেন। এই ব্যপারে কারো কোন মন্তব্য থাকতেই পারেনা। আমার বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে শাশ্বত সালাতের আহবান করে মাত্র কিছু সময় আল্লার নামে ব্যয় করলেই যে আল্লার হুকুম মান্য হয় না সেটাই বুঝানো। এই কার্যটি মসজিদে গিয়ে সম্পাদন করা অধিকাংশ শরিয়তের অনুসারীগন। কিন্তু মারেফতের অনুসারীদেরও চিন্তা করা দরকার আপনারা যারা আপনাদের পিরের স্মরণকেই সালাত মনে করছেন বা শাশ্বত সালাত মনে করে পিরের ধ্যান (শেরেকি) করছেন সেটা কি সঠিক? সেটাও তো খুব সীমিত সময়ই করছেন দিনের কোন এক সময় বা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। তবে আপনাদের শাশ্বত সালাতটাই বা কিভাবে পূর্ণ হবে? শাশ্বত শব্দগুলির দিকে আবারো দৃষ্টি দেওয়ার আহবান করছি। শাশ্বত সালাত অবিরত,সর্বসময়, সর্বক্ষণ, অবধারিত ভাবেই পালন হয়েই চলছে ইচ্ছায় অনিচ্ছায়। সমস্ত সৃষ্টির কথা যেহেতু আল্লা বলেছেন কোরআনে বৃক্ষ, পাখি, মৎস, জন্তু, জানোয়ার যেভাবে পালন করছে আপনিও তাদের দলভূক্ত হয়ে কায়েম করেই চলছেন। তবে আপনি যখন বুঝে সে জিকির করবেন তখনই শ্রেষ্ঠের তালিকায় মনোনীত করবেন নিজেকে। অন্যথায় শ্রেষ্ঠ হওয়ার কোন উপায় নাই বস্ত্র পরিহিত প্রাণী ব্যতিত। যখন বুঝতে পারবেন সকল জীবের জিকির আর আপনার জিকিরে ভীন্নতা নাই তখন বুঝবেন সঠিক পথ পেয়েছেন।