হাজার বৎসরের বন্ধ চোখ, কান খুলতে চেষ্টা করতে হবে
==============================
ফকির উয়ায়ছী:
আমি একাধিকবার আমার অবস্থানের কথা লিখেছি। আমি কাউকে ব্যক্তিগত বা আমার আদর্শের মানার দাওয়াত দেই না। আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছে উয়ায়ছী তরিকত যে ভাল সেটা কেন মানবো? আমার একটাই কথা উয়ায়ছী তরিকত, কাদেরীয়া, চিশতীয়া, বাসরীয়া, জোনায়েদিয়া কোনটারই দোষ নাই। তরিকত তো একটা গোত্র / দলের নাম। কোন বিশিষ্ট্য ব্যক্তির নাম অনুসারে। দলের তো কোন দোষ ত্রুটি নেই। দোষ হচ্ছে দলের ভিতরে থাকা মানুষ গুলির। আমি উয়ায়ছী তরিকতের বা আপনী মুহাম্মদি তরিকতের দলে অন্তর্ভূক্ত হলেই কি আপনী/ আমি জান্নাতী হয়ে যাবো? এমন ধারনা করতে পারে মূর্খ লোকে। আল্লা তো কোরানে বলেছেন:
২:৬২# “নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।”
ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈনদেরও জান্নাতে দিবেন। এরা যদি মরনের আগেও ঈমান আনে তবুও তাদের ভয় নেই। তারা তো কোন তরিকত নেয় নাই ধরে নাই পীর। কিন্তু ঈমানটা কি? নামায আদায় করলেই ঈমানদার। পীরকে বাবা বাবা করলেই ঈমানদার? সেটা বুঝা দরকার। যুগ যুগ ধরে মারেফতের কিছু অনুসারীদের মধ্যে প্রচলন আছে বাবায় পার করবো। আমি বলছি কারো বাবার সাধ্য নাই দেখাতে পারবে কোরান হাদিস থেকে বাবায় পার করতে পারার দলিল। বাবায় যে নিজে যেতে পারবে জান্নাতে সেটারই নাই ঠিক!!
ফকির শব্দটির ভীন্ন ভীন্ন অর্থ যারা করছে তারা নিজেরা ফকির বলে না। তারা সেজেছে সূফী। আমি বলি সূফীগন হচ্ছে ফকির শব্দটির মর্ডান ভার্সন। কারণ ফকির আর সূফীতে ব্যপক ব্যবধান লক্ষণীয়। আপনারা খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন। যেহেতু ভীন্ন ভীন্ন অর্থ দেখতে পাবেন ফকির (ফা, ক্বফ, ইয়া, র) শব্দটির অক্ষর দিয়ে তাই এ বিষয়ে কিছু লিখছি না। তবে উয়ায়ছী তরিকত মোতাবেক ফকির শব্দটির অর্থ বুঝি বাদশা/ত্যাজ্ঞী। বাদশা এই অর্থে, ফকির কারো কাছে যায় না। ফকিরের কাছেই মানুষ যায়। ফকির কারো কাছে কিছু চায়ও না। বরং ফকিরের কাছেই মানুষ চায়। এটা, ওটা নানান সমস্যার হাল ইত্যাদি।
মানুষের ধারনা ফকিরের স্বভাব হবে কারো সাথে বিবাদ থাকবে না। সবার সাথে মিলে থাকবে যেমনটা আগে পূর্ব থেকেই প্রচলিত আছে। সবার সাথে তাল দিয়ে যারা থাকে তারা তো মুনাফিক। রাছুল সা. যদি পারতেন সবার সাথে তাল দিয়ে তবে কেন এতগুলি যুদ্ধ করেছেন। সূফীদের মাথায় এটা ঢুকে না। মুড়ি, মুরকি সব এক সাথে। এরা করে মানব ধর্ম। এরা আল্লার চেয়েও বড় পন্ডিত। যদি তাই না হবে আল্লা একাধিক সম্প্রদায়কে ধ্বংশ করে কোরানে ঘোষনা দিয়েছেন। আল্লারও যদি পয়সার দরকার হতো তবে ধ্বংশ করতো না। বর্তমান পীর ব্যবসায়ীদের মতন মানব ধর্ম করতেন সব ধর্মের লোক নিয়ে হাদিয়া নজর, ওশর (১০ এর ১ ভাগ) খাইতেন পীর সাহেবদের মতন। যারা ৪০ এর ১ভাগ ফসল উঠাচ্ছেন পীরদেরকে তারা প্রদান কারীরা আল্লা মনে করেই দিচ্ছেন। এ হিসাব তাদের মনোনীত পীর আল্লার। আমার আল্লার হিসাব যেটা রাছুল বলে গেছেন উশর হচ্ছে ১০ ভাগের এক ভাগ। উশর হচ্ছে ফসলের যাকাত। এটার হিসাব ভীন্ন ভীন্ন। সব সময়ই ১০ এর অংশ নয়। এব্যাপারে মসজিদের হুজুররা হিসাবটা ভাল জানেন।
আমি যেহেতু নিজের নাম ফকির লিখি সে আমারও তেমন হওয়া উচিৎ। কিন্তু পূর্ববর্তী ফকির যারা ছিলেন ফকিরীটা ইচ্ছা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পেশা বানিয়ে নিয়েছিলেন অধিকাংশই। আবার অনেকে জঙ্গলেও বাস করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমার জঙ্গলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পারা যাবে না। জঙ্গলের ফল ছিড়ে খেলেও ফরেষ্ট পুলিশ বেধে নিয়ে যাবে। ফকিরিকে পেশা হিসাবে গ্রহন করার ইচ্ছা আমার নাই। এটা যদি থাকতো তবে আমিও মিলে মিশেই থাকতাম। এটাকে আমি নিয়েছি নেশা হিসাবে।
আমি ফকির নাম ধারন করেছি আল্লা, রাছুলের মুখ পাত্র হয়ে আল্লা, রাছুল সা. এর বিধানের পক্ষে কথা বলার জন্য। সত্য তিক্ত এটা মানা কঠিন তবে ফলটা মিষ্ট। সত্য বললে সমাজের অধিকাংশ মানুষের বিপক্ষে যাবে। এটা আমি মেনে নিয়েছি। যারা পীরগিরি নামে ব্যবসা করছে তারা একে অপরের কথা বলবে না। চোরে চোরে মাসতুত ভাই। গ্রাম্য প্রবাদ আছে “চোরে চোরে হালি এক চোরে বিয়ে করে আর এক চোরের শালি।” শালি বিয়ে করলেও স্বার্থে যখন বেঘাত ঘটে তখন সম্পর্ক হয় কাঠ কুড়াল। বাংলাদেশের মশহুর দুই খানকা আছে শশুর/শালার সাথে কাঠ কুড়ালে সম্পর্ক। নাম বলছি না খোজ করলেই পাবেন যাদের জানা নাই।
হাজার বৎসর ধরে চলে আসছে ভাগে যোগে খাওয়া। যে যেভাবে পারছে লুটে পুটে খেয়ে যাচ্ছে স্বশিক্ষিতদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে। গরীবের হক মালের যাকাত এখন পীর সাহেবরা খেয়ে যাচ্ছে। একাধিক দরবারে খোজ নিয়ে দেখবেন কৃষকের ঘাম ঝড়ানো ফসল ৪০ সেরে ১কেজি করে উঠাচ্ছে। মনে হয় আল্লার এজেন্ট তারা ভাব খানা এমন। এলাকায় এলাকায় ট্রাক পাঠিয়ে ফসল নিয়ে আসেন দরবারে।
আমি ব্যক্তির বিরোধীতা করে এযাবৎ একটি পোষ্ট করেছিলাম বাচ্চু কবিরাজ নামে। অনেকে অনুরোধ করেছিলো লিখতে কারণ সে উয়ায়ছী তরিকতের মানক্ষুন্ন করছিলো।
আমি আল্লা এবং পাকপাঞ্জতন পক্ষে কথা বলি। পাকপাঞ্জতনের বিরোধীদের বিপক্ষে কথা বলি। আমার আল্লা এবং রাছুলে বিধানের বিরোধীদের বিপক্ষে কথা বলি। আমি মানুষের সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য কিছু বলি না করিও না। আমি ধৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি আমি যেটা সন্তুষ্টি নিয়ে করবো সেটাতে আমার আল্লাও সন্তুষ্ট হবেন। কে আমাকে কি বললো সেটার চিন্তা করি না। মারেফত এবং আহলে বায়াতগনের নামে অতিভক্তি প্রদর্শনকারীরা আদৌ পাকপাঞ্জতনের অনুসারী মধ্যে পরিগনীত নয়। আমি যতটুকু বলি তাতেই ধর্ম ব্যবসায়ী, পীর ব্যবসায়ী, শিয়া, ওহাবীরা কেউই ভালবাসে না।