মারেফতের পথে অনসন্ধানী আমার এক সন্তানতুল্য মানুষ নাম সেলিম রেজা তার অনুরোধে এই সম্পর্কে আমি লিখার চেষ্ঠা করছি। আমার এই বিষয়ে লেখার পর যদি উত্তম কোন পরামর্শ থাকে পাঠকগনের কাছে জানার আগ্রহ রাখছি। তবে অবশ্যই সে পরামর্শ যেন হয় কোরআন হাদিস সম্মত।
শুরুতেই সেজদা সম্পর্কে বলতে চাই যেটা আমরা ধর্মীয় ভাবে ইসলামের জন্য ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করার জন্য পালন করি। সে সেজদা অধিকাংশ মানুষই দেই আল্লাকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু সেজদা করার সঠিক নিয়ম অনেকেই পালন করি না। এই কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সঠিকভাবে নিয়ম পালন করে সেজদা দিলে কপালের মধ্যে ঠোয়া (কালো দাগ) পরার প্রশ্নই আসে না। কারণ ওয়াক্তিয়া নামাজের সেজদা দেওয়ার সময় শরীরের আটটি অঙ্গ মাটির সাথে স্পর্শ (ঠেকিয়ে) করেই সেজদা দিতে হয়। যেমন দুই পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল, দুই হাটু, দুই হাতের তালু, নাক এবং কপাল। নাক আর কপাল এক সাথে ঠেকিয়ে যারা সেজদা দেয় নামাজ আদায় করে তাদের শুধু কপালে ঠোয়া (কালো দাগ) পরতে পারে না। আমার কথায় বিশ্বাস না হলে। সেজদা দেওয়ার সময় লক্ষ করবেন। আমার মুরশিদ কিবলা জানের বয়স ৮৮ পার হয়েছে আল্লার অশেষ রহমতে। তিঁনি ওয়াক্তিয়া নামায ক্বাজা করেছেন আমি দেখি নাই। তবে তিঁনার কপালটি দেখে কেউ বুঝতে পারবেন না। অথচ আমার মুরশিদ চেয়ারে বা বসে নামায আদায়েও সন্তুষ্ট নন। এটা শরিয়তের নামাযের সেজদা মারেফতের অনুসারীরা তাজিমি (সম্মানের) সেজদার কথা বলেন। এই সেজদার জন্য মাথা মাটি বা পায়ের উপর লাগানোর প্রয়োজন নাই। আপনারা যারা আমার লেখা পরবেন তাদের প্রায় সকলেরই জানা মার্শাল আর্ট (জুডো/ কারাটে) খেলার সময় শুরুতেই ওস্তাদ এবং প্রতিদন্দিকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য বো করে অর্থাৎ মাথা নিচু করে। এমনকি চীন, জাপান, কোরিয়ার সালাম প্রদর্শনের এটাই রীতি। তারা তো তাজিম (সম্মান) করার সময় মাথা কোথাও স্পর্শ করে না? তাতেও তো তাদের সম্মানে কোন ঘাটতি হয় না।
বাংলাদেশের কিছু সেজদা প্রত্যাশী পির সাহেবরা মুরিদের সেজদা নিয়েই বড় পির সাজতে চান। এমনিই একজন পির তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন তা হুবহু উদৃত্তি করছি নিম্নে ২য় বন্ধনীতে:
{যারা সবসময় তৌহিদে বাস করছে তারা কোন মতেই শেরেক করতে পারে না। যেহেতু পশু প্রাণীরা তৌহিদে বাস করছে সেহেতু তাদের পক্ষে শেরেক করার কথাটি অসম্ভব এবং অবান্তর। আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে যদি সেজদা দেওয়া শেরেক বলে ধরে নেই, তাহলে মহানবীকে পশু প্রাণীরা কেন সেজদা করলো?}
এই লেখক প্রশ্ন করেছেন নবীকে দেজদা করলো কেন? পশুরা যে সেজদাই করেছে এই বিজ্ঞ লোকটি বা নিশ্চিত হলেন কেমন করে? আল্লা শ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি লেখক পশুকেই সবচেয়ে বেশী তাওহিদবাদী মনে করেন। তাকে কি বলার কিছুই থাকেন না। চিন্তা করে দেখা দরকার বাঘ যদি এতই তাওহিদবাদী থাকতে পারতো হরিণের ঘাড়ে কামড় বসাতে হতো না। অযথা মন গড়া মুখে তাক লাগানো কথা বলে মানুষকে বিপথগামীই করা হবে। তিনার বই যদি সবচেয়ে বেশী তাওহিদবাদীরা পড়তো প্রশ্ন যেহেতু লেখক করেছেন উত্তর মিলতো আশা করি। কপাল খারাপ লেখক প্রশ্ন কর্তার পশুরা তিনার মনোনীত তাওহিদবাদীরা কিতাব পড়ে না। যেহেতু তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ (আল্লার একত্ববাদ) তবে তো হিংস্র পশু নিরিহ পশুকে ধরে খাওয়ার প্রশ্নই উঠতো না। আল্লার অপেক্ষায় থাকতো যতই ক্ষুধার্থ হোউক।
অন্যদিকে এই দলেরই কিছু অনুসারীরা বলে সেজদা না দিয়েই তো ইবলিশ হয়েছে আজাজীল! তাদের মাথায় ধরে না আজাজীল ছিল ফেরেস্তা। ফেরেস্তাদের প্রতি আল্লার হুকুম ছিল আদমকে সেজদা করার। এটা কোরআনের একাধিক আয়াতেই পাওয়া যায়।
৭:১১#“আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।”
২০:১১৬#“যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ তোমরা আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করল।”
১৫:৩০-৩১# “ফেরেশতারা সবাই মিলে সেজদা করল। কিন্তু ইবলীস-সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হল না।”
ফেরেস্তারা আদমকে সৃষ্টির শুরু থেকেই সেজদা করেছে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত করেতেই থাকবেন। কিন্তু আদম তারই মতন আর এক আদমকে সেজদা করবে এটা তো কোরআনে উল্লেখ নাই। এই ব্যপারেও কোরআনের একটি আয়াত দেখিয়ে ভ্রান্তপিরগন বলে সেজদা করা জায়েজ সূরা ইউসুফ
১২:১০০# “তিনি পিতা-মাতাকে সিংহাসনের উপর বসালেন এবং তারা সবাই তাঁর সামনে সেজদাবনত হল। তিনি বললেনঃ পিতা এ হচ্ছে আমার ইতিপূর্বেকার স্বপ্নের বর্ণনা আমার পালনকর্তা একে সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আমাকে জেল থেকে বের করেছেন এবং আপনাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করে দেয়ার পর। আমার পালনকর্তা যা চান, কৌশলে সম্পন্ন করেন। নিশ্চয় তিনি বিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”
ইউসুফ আ. যে নবী ছিলেন তার বাবা সেটা ইউসুফ আ. এর শিশু বয়স থেকেই জানতে পেরেছিলেন তার ছোট সন্তান নবী। ইউসুফ আ. নবীকে তার পরিবারের সকলেই সেজদা করেছেন। আল্লা পবিত্র কোরআনের আয়াতে তাঁর প্রিয় হাবীব রাছুল সা. এর প্রতি নির্দেশ করেছেন
৭৬:২৬#“ রাত্রির কিছু অংশে তাঁর (আল্লার) উদ্দেশে সিজদা করুন এবং রাত্রির দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করুন।”
আর আদমের জন্য আল্লার হুকুম তো ৫৩:৬২#“অতএব আল্লাহকে সেজদা কর এবং তাঁর এবাদত কর।”
সেজদা সম্পর্কে রাছুল সা. এর একটি হাদিস উল্লেখ করছি। চিন্তা করে দেখার অনুরোধ এই হাদিস সেজদার পক্ষে নাকি বিপক্ষে যায়? সে বিবেচনার ভার আপনাদের উপরই রইল।
“হযরত মুয়াজ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যদি আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সেজদা দিতেন”। আল্লা যদি আদমকে তারই মতন এক আদমকে সিজদা করার অনুমতিই দিতেন তবে রাছুল সা. এই হাদিসটি বলতেন বলে আমি বিশ্বাস করতে পারি না। কাজেই কেউ যদি কাউকে সেজদা (সর্বচ্চ) সম্মান দিতে চায় তবে তাকে অবশ্যই জানতে হবে সেজদা দেওয়ার আগে সে ব্যক্তিটি পাপের উর্দ্ধে উপতে পেরেছেন কি না। যদি তা জেনে সেজদা দেওয়া হয় তবে সেটা বিফলে যাবে না।