শুরুতে বলছি আমার লেখা ৩৮:২৯ আয়াতের অন্তর্গতের জন্য।
৩৮:২৯# “এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।”
লাইলাতুল কদর- আরবী, শবে কদর- ফারর্সী, মহিমাম্বিত রাত- বাংলা।
লাইলাতুল কদর এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত অথবা পবিত্র রজনী। আল্লা নাকি কদরের মহিমমাম্বিত রাত্রিতে সম্মানীত কোরআনকে সপ্তম আসমান থেকে চতুর্থ আসমানে নাজিল করেছেন। এই রাত্রটিকে রমজানের শেষ ১০ দিনে বেজোর রাত্রি খুজে নিতে হয়। আমার মন মানে না এজন্য আল্লা নাকি লিখেছি। কারণ সুরা কদরে আল্লা উল্লেখ করেছেন নিশ্চয়ই নাজিল করেছি। এখানে আমি/ আমরা কোরান শব্দগুলি ফিট করেছেন নিজেদের আপন গরজে। যেমন শুন্যস্থান পুরন করার মতন। মন গড়া আমি যদি বলি কদরের রাত্রিতে আমাকে/আপনাকে নাজিল করা হয়েছে। নিশ্চয়ই সেটা মানবেন না। আমিও পান্ডিত্যদের কাতারে নাম লিখানোর জন্য “আমাকে/আপনাকে” শব্দের একটা বসিয়ে দিলাম। মানার জন্য বলছি না। আমি সব সময়ই মানা করি আমার কথা না মেনে যাচাই করুণ। তদ্রুপ সবার কথাই মেনে নেওয়ার আগে যাচাই করা উচিৎ।
একটা কথা না বললেই নয় কদর কি শুধু পুরুষের জন্যই? আল্লা পক্ষ থেকে যা কিছু সৃষ্টি সেটা তো শুধু পুরুষের জন্য নয়। এজন্য নয় আল্লা তো পুরুষ/মহিলা নন। আল্লার কোন লিঙ্গ নাই সেটা তো ধর্মের বাণী। যারা এতেকাফ করছেন না। তারাও যে কদর বুঝলো না।
সকলেরই জানেন কদর হতেও পারে ২১,২৩,৩৫,২৭ এবং ২৯ তারিখে। কিন্তু এতেকাফ পালনকারী আলেম সাহেবগন মসজিদে বসে খায় ঘুমায় ৭দিন ব্যাপিয়া ঠিক পায় সকলেই ২৭ তারিখেই গিয়া। সাধারন মুসুল্লি কানে শুনে ঈমান আনা মুসলমান বুঝবে কি করে? তারা যে সোয়াবের জন্য বসেছেন আলেম সাহেবদের সাথে তাল মিলিয়ে। আলেম সাহেবগনই তো চিন্তা করে না কদরের রাত্রে কি নাজিল হয়েছে। সাতার পানিতে নেমে পানি খোজা। আর আলেম সাহেবগন রাত্রে বসে রাত্রী তালাশ করা মধ্যে একই পার্থক্য। চিন্তা করেননা কেন? আমরা বলি পূর্নিমার রাত্রী। এই রাত্রিতে বের হয়ে যদি কেউ রাত্র খোজে কতটা হাস্য কর শুনাবে। বিজ্ঞজনরা চাঁদের সৌন্দর্য্যই উপভোগ করবে।
কদরের রাত্রিটা কেন এত আলাদা এবং মহিমাম্বিত। আল্লা স্পেশাল কিছু সৃষ্টি করেছেন বলে এই রাত্র মহিমাম্বিত হয়েছে। উদাহরণ দিচ্ছি বুঝার সুবিদ্ধার্থে। যেমন ১২ই রবিউল আউয়াল দিনটা উম্মতে মুহাম্মদির কাছে একটি শ্রেষ্ঠ দিন। সে দিনটি মানুষের কাছে তাতপর্যপূর্ণ এজন্য যে রাছুল সা. নির্ধারিত দিনে ধরায় এসেছিলেন। আলো অন্ধকারের আলাদা কোন তাতপর্য নাই এটা চলমা প্রকৃয়া।
২৪:৪৪# “আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে অর্ন্তদৃষ্টি-সম্পন্নগণের জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।”
উপরোক্ত আয়াতটির প্রথম অংশ সোজা সাপ্টা কথা গতানুগতিক। পরের অংশে চিন্তা করার মতন আছে আল্লার কথা অনুযায়ী। গতানুগতিক পরিবর্তন তো নিত্য দিনের বিষয়। পৃথিবী ঘুরনায়ন এর জন্য দিন রাত্র এটা খুজার কিছু নাই।
সুরা কদর প্রথম আয়াতটিতে আল্লা বলছেন নিশ্চয়ই নাজিল করেছি কদরের রাত্রে। বুঝলাম আল্লা নাজিল করেছেন রাত্রে। আমার মনে অনেক প্রশ্ন আল্লা রাত্রে কি নাজিল করেছেন? আমি মসজিদে বসে রাত্রি জাগরন করে রাত খুজবো? নাকি এই রাত্রিতে আল্লা যেটা নাজিল করেছেন সেটা খুজবো? রাত্রিতে বসে রাত্রি খোজা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় না! দিনের বেলা বসে রাত্রি খোজ করলে তবুও কিছুটা মানানসই হতো কথাটা।
চিন্তাশীল কেন একটা বাচ্চা মানুষের সামনে আমি যদি বলি “ রাত্রে পাঠিয়েছি………….।” “ রাত্রে দিয়েছি………..।” “ রাত্রে প্ররণ করেছি………….।” সকলের প্রথম প্রশ্ন হবে কি সে বস্তু? যেটা প্রেরন করেছি, দিয়েছি বা পাঠিয়েছি। কিন্তু আল্লা যেটা বলছে সেটার খোজ কেন করছেন না? মওলানা জালালুদ্দিন রুম শরিয়তের এত বড় বিজ্ঞ আলেম হওয়া সত্বেও পথ ধরেছিলেন সামছ তাবরেজ। এমনি এমনি নয় কঠিন চিন্তার বিষয়।
ভাবনা যাদের রাত্র নিয়েই তাদের ব্যপারে বলার কিছু নাই। জন্মান্ধ রাত্র দিনের ফারাক বুঝে না সে খুজতে পারে। আমি চক্ষুষ্মান রাত্রি অন্ধকারে রাত্র খুজবো কেন? আমি তো উন্মাদ নই।
আরও চিন্তা করতে বলছি আপনী আর জন্মান্ধ আলেম সাহেব হয়তো তো সাথে বসেছেন এতেকাফ করতে। কি দেখেছেন এতেকাফে বসে জানতে চাইলে তার আর আপনার উত্তরে তো পার্থক্য হবে না। জন্মান্ধ আলেম যে নিজেই দেখে না। তার নসিয়তে চক্ষুষ্মানগন কি দেখবে? আল্লা তো কোরানে ভুল বলেন নাই। আপনারা চিন্তা করেন না।
১৩:১৬# বলুনঃ “অন্ধ চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়।”
সময় থাকতে আল্লা কি বলেছে সেটা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুণ। আমি কি বলি সেটা না মেনে আলেম সাহেবগন কি বলেন অন্ধভাবে না মেনে আল্লা কি বলেছে সেটা বুঝার চেষ্টা করুণ। কদর সুরাটা তো এ রাত্রে কত কতবার করে পাঠ করেন। অর্থটা পড়ে অনুধাবন করার চেষ্টা কেন করেন না? কোরান ঠিক মতন পড়েন না বিধায় তো মাথায় চিন্তার উদয় হয় না। ইমান শুধু কান কথায় আনলে চলবে না। কান, চোখ বিবেক দিয়ে অনুধাবন করতে যারা পারে না। তাদের তো চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন আল্লা।-৭:১৭৯। কাজেই নিজের অবস্থান ভাবা দরকার সময় থাকতে।
*** সূরা কদর***
===========
(1) নিশ্চয় নাযিল করেছি কদরের রাত্রিতে।
(2) শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?
(3) শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
(4) এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।
(5) এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
১ নং “ইন্না আংঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কদর।”
আমরা মুসলমান জাতি কত হতভাগা আলেম সমাজের কথা শুনে আমরা আল্লার কথা চিন্তা করা বাদ দিয়েছি। এই রাত্রির ফজিলত থেকে বিচুত্য হয়ে যাচ্ছি। জানিনা কাদের ভাগ্যে আছে এই রাত্রি। রাছুল সা. প্রস্থান হয়েছেন প্রায় ১৪৬০ বৎসর হয়ে গেল আজও এক আসমানের খবর পাওয়া গেলো না? কোটি কোটি মানুষ মরে গেল ইবাদত করেই চলছে আসমানের খবর নিতে চেষ্টা করেন না। হযরত আলী আ. তিঁনার নাহজুল বালাগা কিতাবে লিখেছেন ‘আমি তোমাদের সামনে থাকতে থাকতে প্রশ্ন করে জেনে নাও; আমি জমিন থেকে আসমানের খবর বেশী রাখি।’ আপনারা দাম্ভিক মাথা নত করবেন না। যা করে নাই মকরম ফেরেস্তা আপনারা কেন করবেন?
এই চিন্তা চেতনা থেকেই এ বিষয়ে লেখার চেষ্টা। পাঠকদের মনে যদি আমার মত চেতনার উদয় হয় কোনটা সঠিক বা কি সঠিক?
আল্লার পবিত্র কোরআন অনুযায়ী রমজান মাস একই সাথে শুরু হয় সমস্ত বান্দাদের জন্য। চাঁদ যেহেতু দিন সময় নির্ধারনের জন্য। চাঁদের উদয় উপস্থিতির জন্য বিভিন্ন দেশে কিছু সময় আগে পরে রোজা শুরু হয়। এটাতে দ্বিমত করার উপায় নাই এটা হবেই। যে দেশের সাথে আমাদের দিন তারিখের মিল আছে তাদের সাথে আমাদের দ্বিমত হওয়ার সুযোগ নাই। এবং বাংলাদেশের সাথে তো নাই-ই। ভিন্ন দেশের কথা বাদ দিয়ে যদি নিজের দেশেই খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাবো কিছু কিছু মানুষ একদিন আগে থেকে রোজা শুরু করে। সেমতে তাদের কদরের রাত্রিটিও একদিন আগে সংঘটিত হয়। আর যারা আমরা একদিন পর থেকে রোযা শুরু করেছি আমাদের কদরও একদিন পরই হচ্ছে। পর পর দুইদিন আমাদের দেশে কদর পালিত হচ্ছে। পরপর দুইদিন তো বেজোড় রাত্রি হতে পারে না। কথা হচ্ছে যেকোন এক দল এই পবিত্র রাত্রির ফজিলত পায় অন্য দলের ইবাদত বিফলে যাচ্ছে। যেহেতু কদরের উদেশ্য করেই পালন করা হচ্ছে ইবাদত; এমনকি এতেকাফ পালন করে ঘর ছেড়ে বাইরে থেকে যে ত্যাগ করছেন সেটাও বিফল। যারা কদরের উদেশ্য করে ইবাদত করে কিন্তু তা সঠিক হয় না তারা তো ‘কুলুর বলদ’ (সাড়াদিন কাজ করে মায়না না পাওয়ার মত) ব্যতীত অন্য কিছুই নয়! পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত এখানে উল্লেখ করতে চাই সূরা বাকারা
২:১৮৯# “তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম।”
উপরোক্ত আয়াতটিতে আল্লা চাঁদ দেখে দিন নির্ধারন করার নির্দেশ দিলেও বছরে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দিন ব্যতীত সাড়া বছর কি আমরা আল্লার এই কথা মানি? মানি না। সূর্যের দিকেই তাকিয়ে থাকি।
কদর বিষয়টা আলোচনা করলে একটু অন্য বিষয় আলোচনা চলেই আসে। যারা বাংলাদেশে অবস্থান করেও ভিন্ন দেশের রীতি রেওয়াজ মেনে তাদের সাথে রোযা ঈদ পালন করেন তাদের কি এটা চিন্তায় আসে না? শুধু রোযা একসাথে করলেই মুসলমানের করণীয় সব হক আদায় হয়? পাড়া পর্শির হক নষ্ট করে খুশি নষ্ট করছেন নিকট আত্মীয় পরিবার পরিজনের হক নষ্ট করছেন? যে পাড়াপর্শি আপনাদের যানাজা না পড়ে, মাটি না দিলে লাশ পরে থাকবে। কিভাবে তাদের বঞ্চিত করেন? আপনাদের একটা অসিয়ত রেখে যাওয়া জরুরী। আপনারা যদি অসুস্থ হন বা মারা যায় তাহলে যেন আপনাদের কওমের মানুষ এসে কাফন দাফহ করে। আপনারা যাদের সাথে খুশি পালন করে চলছেন। পাড়াপর্শি নিকট আত্মীয় পরিজন দু:খের বোঝা বহন কেন করবে? পাড়া পর্শি মাটি দিলে তো আপনারা যাদের সাথে ঈদ/খুশি উৎযাপন করেছেন তারা কষ্ট পাবেন। কাজেই সময় থাকতে চিন্তা করে বিচক্ষনতার পরিচয় দিন।
একটি চিন্তার কথা মাথায় ঘুরছে এটার সঠিক বিশ্লেষন খুজতে হবে সেটা শেয়ার করছি আপনাদের সকলের মাঝে। যেহেতু আপনারা বলছেন শবে কদরের রাত্রিতে আল্লা কোরআন নাজিল করেছেন। কদর-৯৭:০১। পূর্ণ কোরআন নাজিল হতে সময় লেগেছে ২৩ বৎসরের অধিক। তবে প্রথম আয়াত নাজিলকৃত কদরের রাত্রিটিতে কোরআনের ৯৬ নাম্বার সূরা আলাকের ৫টি আয়াত নাজিল হয়েছিল। আমার চিন্তার বিষয়বস্তু হচ্ছে হিজরী কোন সালের কদরের রাত্রিটিতে সূরা কদর নাজিল হয়েছিল। এই সূরা নাজিল হওয়ার আগে কত বৎসর কদর পালন হয় নাই? পাঠকদের জানা থাকলে রেফারেন্স সহ লিখার অনুরোধ রইলো।
—ফকির উয়ায়ছী