আজঃ বৃহস্পতিবার | ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
Home / দরবার / যাকাত / যাকাত সম্পর্কিত আলোচনা পর্ব-২

যাকাত সম্পর্কিত আলোচনা পর্ব-২

ফকির উয়ায়ছী:

যাকাত আদায় করার দায়িত্ব: 
ইসলামী রাষ্ট্রের যাকাত আদায় করার দায়িত্ত্ব সরকারের । সমকালীন দুনিয়ায় ইসলামী অনুশাসন না থাকায় যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি চালু নেই। যার কারণে সরকারীভাবে তো বটেই ব্যক্তি পর্যায়েও যাকাত আদায়ের ব্যপারে উদাসীনতা দেখা যায়। কিয়ামতের কঠিন বিপদের দিনে আল্লা পাকড়াও করতেই পারেন যাকাত না দেওয়ার কারণে। মহাশক্তিশালী বিচারকের সামনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে।আল্লার কোরআনের আয়াত অনুযায়ী রাছুল সা. এর উপর দ্বায়ীত্ত্ব ছিল বানী পৌচ্ছে দেওয়া জোর জবদস্তীর কোন সুযোগ নাই। রাছুল সা. এর ওফাতের পর যাকাত আদায়ের প্রথাটা চালু রাখতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ততকালীন রাষ্ট্র প্রধানকে।একটি হাদিস উল্লেখ করলেই বুঝতে পারবেন। তাজ প্রকাশনার বুখারী শরিফ থেকে হাদীস নং-১৩০৮ এবং ওয়েব সাইটে বাংলা হাদীসের ১৩১৮ নং বুখারী “আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু নাফি রাহ. আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর আবূ বকর রা. এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন ‘উমর (রাঃ) [আবূ বকর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে] বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরূদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে মাত্র)? অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ লা ইলাহা ইলল্লাহু বলার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ আমাকে দেয়া হয়েছে, যে কেউ তা বলল, সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লংঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পাপ লুকানো থাকলে এর)হিসাব-নিকাশ আল্লাহর যিম্মায়। আবূ বকর রা. বললেন, আল্লাহর কসম, তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয় আমি যুদ্ধ করবো যারা সালাত (নামায/নামাজ) ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লার কসম, যদি তারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করবো।”

ইসলামের ইতিহাস থেকে জানাযায় নবীজির এক প্রিয় সাহাবা নবীকে একটি করে ছাগলের বাচ্চা পাঠাতেন খেলাফত নির্ধারনের প্রথা এবং খলিফা তার মনপুত না হওয়ায় সেই সাহাবা যাকাত প্রদান বন্ধ করেন। এই সাহাবা হচ্ছেন তামিম গোত্রের প্রধান ছিলেন মালেক বিন নাওয়ার। এই সাহাবার কাছে পাঠানো হয়েছিল যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদকে। খালিদ বিন ওয়ালিদের মাথা এতই গরম হয়ে যায় মালেকের ঘরেই মালেককে হত্যা করে। উল্লেখ মালেক বিন নাওয়ার স্ত্রী ছিল তৎকালিন সবচেয়ে সুন্দরী নাম ছিল নাইলা মালেকের বিছানাতে তার স্ত্রীর সাথে জেনা করে খালিদ বিন ওয়ালিদ। লোক সকল খলিফা আবু বকরকে কাছে এই বিচার দেওয়া হলেও খলিফা সাহেব তার কোন বিচার করেন নাই। সূত্র: খেলাফতের ইতিহাস ইসলামী ফাউন্ডেশ হইতে প্রকাশিত। এই ঘটনাটা যেদিন পড়ে জানতে পারলাম তখন বুঝতে পারলাম যাকাত আদায়ের প্রয়োজনে কতটা কঠিন হওয়া যায়। তবে ২য় খলিফা সাহেব ক্ষমতায় এসেই খালিদ বিন ওয়ালিদকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। এই রকম আরোও একটা বিচার আসার কারণে।

আমি আগেই উল্লেখ করেছি যাকাত সংক্রান্ত ৩২ আয়াতের মধ্যে অল্প সংখ্যক আয়াতই অর্থ সংক্রান্ত। অধিকাংশ আয়াতই “সালাত কায়েম কর যাকাত প্রদান কর”। আর কোরআন অনুযায়ী আল্লা ব্যয় করতে বলেছেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা তাহাই ব্যয় করতে হবে। গচ্ছিত করণের কোন সুযোগ নাই। সালাত এবং যাকাতের মধ্যে যারা পার্থক্য করবে ১ম খলিফা সাহেবের কর্ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে উপরোক্ত হাদিসে তাই দেখা যায়। প্রশ্ন হলো দৈনিক ৫বার সালাত আদায় করছেন আর বছরে একবার যাকাত দিচ্ছেন। এটাতে কি পার্থক্য হয় না? আপনার পাশের বাড়ি এক লোক অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল যাকে আমি আপনি যাকাতের অর্থ দিলে লোকটা বিনা চিকিৎসায় অন্তত্য মারা যেত না। সেটার জন্য আল্লা কি কৈফিয়ত চাইবেন না আমার আপনার কাছে? আমার বিশ্বাস আল্লা অবশ্যই আমাদের ধরবেন। একটি কথা আর্থিক সামর্থবানগন ভুলেই যান আল্লা যাকাত প্রতিবার সালাত কায়েম করার সাথে সাথেই যাকাত দেওয়ার কথা বলেছেন। সালাত যাকাতটো একটা হুকুমের অংশ। যেমন ‘হাত ধুয়ে ভাত খাও’ অথবা ‘ভাত খেয়ে হাত ধৌও’। উভয় ভাবেই ভাত খাওয়ার সাথে হাত ধৌয়াটা জড়িত। আল্লা তো বলেছেন “আকিমুস সালাত ওয়াতুজ যাকাত”। অর্থাৎ ‘সালাত কায়েম কর যাকাত প্রদান কর’ যখনই সালাত কায়েম করবে তখনই যাকাত প্রদান করার কথা। কিন্তু কই মুসলমানদের জন্য সালাম দিনে পাঁচবার হলেও যাকাত বছরে একবার। চিন্তা করবেন আল্লার হুকুম কি তাই ছিল নাকি আমরা অধিকাংশই বুঝতে পারছি না।

যাকাত পাবার হক রাখে প্রথমে রক্ত সম্পর্কের আত্মীদের এরপর বংশীয় স্বজনদের তারপর প্রতিবেশীদের। রক্ত সম্পর্কে নিকট আত্মীয় যদি যাকাত নিতে মনে কষ্ট বা লজ্জা বোধ করে তবে তাকে যাকাত এর কথা উল্লেখ করে যাকাতের অর্থ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। মেয়ে তার স্বামীর টাকা মেয়ের মা বাবাকে যাকাত হিসাবে দিতে পারে যদি যাকাত নেওয়ার মত উপযোগী হয়। কিন্তু ছেলে তার বাবা মাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করতে পারবে না। কারণ ছেলে সন্তানের উপর বাবা মায়ের হক আছে। সন্তানদের মধ্যে ছেলেরা কামাইদার হয়ে নিজেকে স্বাধীন মনে করলেই স্বাধীন। আর মেয়েরা বিবাহের আগে বাবার অধিন এবং বিবাহের পর স্বামীর অধিন। উভয় ক্ষেত্রেই পরাধিন।

কোরআন আয়াত অনুযায়ী ব্যয় বা দান যদি যাকাত উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে পরের বেলার অর্থাৎ দুপুরে খেয়ে রাত্রের জন্য জমিয়ে রাখার কোন উপায় নাই। ২:২১৯#“তারা আপনার কছে জিজ্ঞাসা করে কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে”। পবিত্র কোরআনে অর্থের যাকাতের কথা শতকরা ২.৫% বা ৪০ ভাগের একভাগ কোথাও উল্লেখ নাই। যাকাতের এই নিয়ম ধার্য্য করা হয়েছে হাদিস থেকে। ইসলামের ইতিহাস ঘেটে যতটুকু জানাযায় রাছুল সা. আর্থিক অবস্থা যাকাত দেওয়ার মতন ছিল না কোন সময়ই। রাছুল সা. বিত্তবানদের যাকাত দিতে বলেছেন যাতে করে তিঁনার উম্মতদের মধ্যে কারো কষ্ট না হয়।

যাকাত দেওয়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যদি কেউ ঋণদার হয়ে থাকে তাকে ঋনমুক্ত করে দেওয়া। আর আমার মতে যাকাত লোক দেখানো যাকাত না দিয়ে নিজ আত্মীয় স্বজন বা গ্রামবাসীদের মধ্যে যাকাতের অর্থ এমন করে প্রদান করা, যাতে করে পরের বছর সে লোকটি যেন যাকাত দেওয়ার মত সামর্থ না হলেও যেন সে যাকাত নেওয়ার হক হারায়। সম্ভব হলে যেন একটি লোকের যাকাতের অর্থে একটি পরিবার সচ্ছলতার মুখ দেখে। যাকাতের ব্যপারে ফকির উয়ায়ছী কয় কবিতা আকারে

যাকাত

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে কয়
সালাত যাকাত একই সাথে রয়
আকিমুস সালাত শুধুই করিবা
যাকাত কি করে ফালাইয়া রাখিবা?

যাকাত দেওয়া ফরজ সবার তরে
পয়সা ওয়ালা যাকাত দিবে
গরীবেরা শুধুই যে খাবে
গরীবের যে যাকাত নাই
কোরআনে কোথাও উল্লেখ নাই
কে দিলো যে এই বিধান
কোরআন খুজে উয়ায়ছী পেরেশান।।

নামাজ যাকাত সঠিক হবে
বায়াতে যেদিন দাখিল হবে
আমি কই নাগো এমন কথা
হাদিস বুখারীতে আছে গাথা-৪৯৯ ই.ফা
আনুগত্য করিবা তুমি যাহারে
সব শিখাইব সেই তোমারে
আল্লার ফরজ ছাড়িয়া দিলে
ধরা খাইবা হাশরের কালে।।

About Fokir Owaisi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *