মুসলমান হওয়ার জন্য কলেমা চেনা জানা জরুরী
ফকির উয়ায়ছী:
কিছু কিছু হাদিস মানুষের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন। কারণ, এই সব হাদিস গুলি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতই চাপা দেওয়ার চেষ্টায় রত আছে হাজার বছর ধরে। বিপথগামী কিছু সাহাবারা এবং তাদের অনুসারীদের দলবদ্ধ ভাবে কাজ করে চলছে দীর্ঘকাল থেকে। রাছুল সা. জীবিত থাকা কালীন একদিন আবু হোরায়রা রা. ডেকে উনার জুতা জোড়া (প্রমান স্বরুপ) দিয়ে বললেন প্রচার করার উদ্দেশ্যে; অন্তরে দৃঢ়বিশ্বাসের সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই। তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দিবে”। বাইরে বের হয়েই প্রথম দেখা হলো ওমরের সাথে ওমর রা. হোরায়রাকে জিজ্ঞাসা করলেন মুহাম্মদের জুতা হাতে নিয়ে কোথায় যাও? হোরায়রা ব্যক্ত করলেন রাছুল সা. এর কথা তখনই ওমর রা. হোরায়রা বুকে ঘুষি মেরে ফেলে দিলেন এবং ধরে নিয়ে আসলেন মুহাম্মদ সা. এর কাছে এসে নবী সা.কে বললেন আপনার কথা শুনলে মানুষ এই কথার উপর ভরসা করে বসে থাকবে। (মুসলিম এবং মেশকাত-৩৫)
সূরা হুজরাতের ৪৯:২ আয়াত (“হে মু’মিনগন! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল তাঁর সাথে সেই রূপ উচ্চস্বরে কথা বলো না; এতে তোমাদের কর্ম নষ্ট হয়ে যাবে তোমাদের অজান্তে”) রাগের বসে দ্বিতীয় খলিফা সাহেব এই আয়াতের কথা হয়তো স্মরণই হয় নাই। না হয়, এই কাজটা তিনি করতেন না।
এই হাদিসের অনুরূপ (বুখারী+ মুসলিম) “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই।” বলে স্বীকৃতি দিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। “হযরত আবুযর গিফারী রা. এই হাদিসটি শুনে রাছুল সা.কে জিজ্ঞাসা করলেন হুজুর কেউ যদি ব্যভিচার করে, রাছুল সা. বললেন তবুও। আবার প্রশ্ন করলেন যদি চুরি করে? রাছুল সা. বললেন তবুও। সে যদি জেনা করে? রাছুল সা. বলেন তবুও। এই ভাবে তিনবার প্রশ্ন করার পর নবীজি একই উত্তর দেন। চতুর্থবার আবুযর মুখ খুলার আগেই রাছুল সা. বললেন আবুযরের নাক কাটা গেলেও।(মেশকাত-২৪) এতে বুঝাযায় এই হাদিসের মর্তবা কতটুকু। যেহেতু সাহাবারা সহ আমরা সবাই মুহাম্মদ সা. এরই উম্মত।
মু’আয বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; আমাকে রাছুল সা. বলেছেন জান্নাতের চাবি হচ্ছে এ সাক্ষ্য প্রমান করা যে, আল্লাহ্ ভিন্ন কোন ইলা বা উপাস্য নেই। -হাদিস: মুসনাদে আহমদ #২৯)
যদি ইয়াকীনের সাথে কলেমা পড়া না হয় কেউতো মুসলমানই হয় না। মুসলমান না হইয়া নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত আদায় করলে ফায়দা কি? এই হাদিস গুলি কিতাবে থাকা সত্ত্বেও আলেম সাহেবদের কোন দিন বলতে শুনি না! তারা বলেন নামায বেহেস্তের চাবি। অবুঝের দল আমরা এমনকি আলেম সাহেবগন সাড়া জীবন নামায পরলেও তো কেউ বলতে পারেন না যে, ২ রাকাত নামায কবুল হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে বলে ‘আল্লাই ভালো জানেন’। আল্লাই যদি ভাল জানবেন তাহলে আপনার (আলেম) পিছনে নামায পরে আমার কি লাভ? তা থেকে মুহাম্মদ সা. কথা কিভাবে মানা যায় সে চেষ্টা করলেই তো ফায়দা। চোখে দেখা বস্তুর উপর বিশ্বাস থাকে। দেখলে তো আর বলা লাগে না আল্লাই জানেন। বলতেন আমি দেখেছি আমিও জানি। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ইয়াকীন (বিশ্বাস) সেটা দেখার মাধ্যমেই সম্ভব এবং সম্পূর্ণ হয়; না দেখে কোন মতেই বিশ্বাস নয়।
কলেমা তাইয়্যিবা যে দেখারই বস্তু সূরা ইব্রাহিম এর ২৪-২৬ আয়াত পড়লেই পরিষ্কার হয়। আয়াত গুলি বাংলা অনুবাদ দিচ্ছি “১৪:২৪# তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তা’আলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেনঃ পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। ১৪:২৫#সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণণা করেন-যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।”
আল্লা উপমা দিয়েছেন আমাদের বুঝানোর জন্য কলেমা ফল দানকারী। এই ব্যপারে চিন্তা করেন কয়জনে? এইসব নিয়ে চিন্তাকারীর সংখ্যা এতই নগন্য যে কেউ যদি চিন্তা করেও সকলে মিলে গালাগালি দিয়ে হলেও থামানোটাই জরুরী মনে করে। আপনারা সবাই তো জ্ঞানী তবে কেন চিন্তা করছেন না? এটা যদি পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায় তবে অন্য ধর্মের মানুষও মুসলমান ধর্মে আকৃষ্ট হবে। না বুঝে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়লেই কি মুসলাম হয়ে যাবে? একদিন এক বাসায় বসা শুনছি একটি ময়না পাখী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলছে। সবাই বলছে পাখিটা কি সুন্দর কলেমা পড়ে। কেউ কেউ বলছে কোন হিন্দুর পুনর্জন্ম হয়েছে। মানুষটা হয়তো মুসলমান হতে চেয়েছিল তাই তার আত্মা পাখি হয়ে মুসলমান হয়েছে। হ্যায় কপাল! এখন কলেমা বলার জন্য পাখিও মুসলমান হওয়ার দাবী। কি আর করা? অধিকাংশ মানুষদেরও ঐ ময়না পাখির মতই অবস্থা আমরা কলেমা শুধু মুখে বলেই যাচ্ছি। আর সোয়াব গুনছি।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লা” পবিত্র কোরআনের কোন আয়াতে বা কোন কোন আয়াতে আছে সেটা অধিকাংশ মানুষেরই জানা নাই।
ছোট বেলায় গল্প শুনেছি বোকা ছেলে শশুর বাড়ি যাবে মা টাকা দিয়ে বলেছেন বাবা অসুস্থ শশুরকে দেখতে যাচ্ছো বাজার থেকে মজার কিছু নিয়ে যাও। ছেলে সাড়া বাজার ঘুরে মজা আর পায় না। এক চতুর লোক ছেলেটাকে বলছে তুমি মজা কিনবে আমার কাছে আছে এই নাও। বলে বড় একটা কচু ধরিয়ে দিয়েছে। যা হোউক শশুর বাড়িতে যাওয়ার পর ছেলেকে যখন শুধু মজাই খেতে দিয়েছে। খেয়ে গলায় চুলকানি শুরু হওয়ার পরই মজাটা টের পেয়েছে বাছাধন। মজা কাকে বলে!
সে ছেলের কাছে মজা যেমন; আমাদের কাছে সোয়াবও তেমন। রেজাল্ট পাওয়ার পরই বুঝা যাবে। আল্লা এ জন্যই হয়তো আদম আ.কে বলেছেন প্রতি হাজারে ৯৯৯ জনকে জাহান্নামে দিতে। হাদিস তিরমিজি-৩১০৭। আল্লার এত সখের আদম হাজারে স্থান হবে ১জনের জান্নাতে।
কোরআন ঘেটে দেখা যায় কলেমার দুই প্রকার
১/ কলেমাতান তাইয়েবাতান অর্থাৎ উত্তম বাক্য উত্তম বৃক্ষ যেটা আমরা জানি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লা”
২/ কলেমাতান খাবিছাতান অর্থাৎ নোংরা বাক্য নোংরা বৃক্ষ। এটার কোন টেক্স (বাক্য) পাওয়া যায় না।
যেমন উত্তম বাক্যটি হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহ”। তবে তো নোংড়া বাক্যটিও কিছু থাকতে হবে। সে প্রশ্নটা আমার মাথায় খুব পীরা দেয়। অনেকের কাছে জিজ্ঞাসা করেও কোন সদ উত্তর পাই নাই। আমার মনে হয় দুইটা বাক্য যদি পাশাপাশি রাখা যেত বিবেচনার জন্য অন্য সব জিনিষের মত তবে কতই না ভাল হতো। আপনারা আমাকে ভুল বুঝলে কষ্ট পাবো আল্লাই নোংড়া বাক্য অর্থাৎ খবিছা কলেমার কথা বলেছেন। আমি চাই শুধু জানতে এবং দেখতে।
১৪:২৬#“এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই।”
কলেমা তাইয়্যিব উত্তম বৃক্ষ বা গাছ দেখেই যারা বিশ্বাস করে তাদের কাছে গেলে এই কালেমাতান খাবিছাও চিনা যাবে। কারণ ইয়াকিন বিশ্বাস নামক জিনিষটি দেখলেই সঠিক ভাবে হয়। আপনাদের মধ্যে যারা এই পোষ্টটির লেখককে দেখেছেন তারা যেমন কোন দিনও ভুলবেন না মরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। ঠিক তেমনি করে কলেমা যদি দেখে শিখা বা চেনা যায়। তার বিশ্বাস কোন দিন নষ্ট হবে না। আর এই জন্যই মুহাম্মদ সা. বলেছেন। “মান কানা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহ ইয়াকীনান ফাদাকাল্লাল জান্নাতা” অর্থাৎ যে ব্যক্তি একবার ইয়াকীন (বিশ্বাস) এর সহিত কলেমা পাঠ করবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিতে। কাজেই চিন্তা করার জন্য আহবান রইল।