মিথ্যাচার এবং বহুল প্রচারে বিদায় হজ্জের সঠিক ভাষন বিলুপ্তির পথে
ফকির উয়ায়ছী:
বিদায় হজ্জের শেষ ভাষণ নিয়ে মিথ্যাচার বহুল প্রচারে সত্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। লোক মুখে শুনা কথায় চিন্তা না করে মেনে নেওয়া যে নির্বোধের কর্ম এটা চিন্তাশীলগন বুঝতে পারবেন। এই দিনটি নামধারী মুসলমানদের মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এবং এই দিনে রাছুল সা. এর বলা কথা গুলি সত্য গুটি কয় প্রকৃত মুসলমানদের মধ্যেই শুধু বিদ্যমান। আরবী ১০ম হিজরির ১৮ই জিলহাজ্ব দিনে নবীর শেষ ভাষণের দিন আল্লা একটু অসন্তুষ্ট হয়েই রাছুল সা. এর উপর সূরা মায়িদার ৬৭ নং আয়াত নাজিল করেন।
৫:৬৭#“হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” আল্লার নাজিলকৃত এই আয়াতটি পড়ে আমি তিঁনার অসন্তুষ্টি বুঝতে পেরেছি। রাছুল সা. সকল হাজীদের ডেকে এক জায়গায় সমবেত করেন এবং তিঁনি ভাষণ দিলেন।
ভাষণের মাঝে রাছুল সা. সকলের কাছে থেকে স্বীকারোক্তি নিলেন। হাদিস- “হযরত বারা ইবনে আযেব রা. এবং যায়েদ ইবনে আরকাম রা. হতে বর্নিত রয়েছে, একদা রাসূলুল্লাহ সা. খোম নামক স্থানে ঝিলের নিকট সমস্ত হাজীদের ডেকে একত্র হতে বলেন। তোমরা কি জান না যে আমি মুমিনদের নিকট তাদের প্রানের চেয়েও প্রিয়। লোকগন বললেন, হ্যাঁ। তিঁনি আবার বললেন, তোমরা কি জান আমি প্রত্যেক মুমিনের নিকট তাদের প্রানের চেয়েও প্রিয়? তারা বললেন, হ্যাঁ। তখন তিঁনি তাঁর বাম হাত দিয়ে
হযরত আলী আ. এর ডান হাত উচু করে ধরে বললেন, হে আল্লাহ! আমি যার মওলা (প্রভু), আলীও তার মওলা (প্রভু)। হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আলীকে ভালবাসে, তুমি তাকে ভালবাস। আর যে ব্যক্তি তাকে শত্রু জানে তুমি তার সাথে শত্রুতা পোষণ কর। রাবী বললেন, তারপর যখন হযরত আলী রা. এর সাথে হযরত ওমর রা. এর সাক্ষাৎ হল, তখন ওমর রা. তাকে বললেন, ধন্যবাদ হে আবু তালিবের পুত্র! তুমি সর্বসময়ের জন্য প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের মওলা (প্রভু) হয়েছে।–মেশকাত হাদিস নং:৫৮৪৪।
সে সাথে আরো বলেছিলেন যা অন্য হাদিসে ‘মুনাফিক ব্যতীত আলীকে কেউ গালি দেয় না’। এবং ‘মুমিন ব্যতীত আলীকে কেউ ভালোবাসে না’।
এই কথা গুলি আমার মন গড়া কথা নয়। হাদিসের কথাগুলি আমি আমার মত করেই তুলে ধরলাম আপনাদের বিবেচনার জন্য। এমনকি আমার কথায় বিশ্বাস না আনার জন্যও অনুরোধ করছি। নিজ্ব চোখের সাহায্য নেওয়ার অনুরোধ করছি। বলছি শুধু কোরআন, হাদিস গুলি দেখে চিন্তা করতে এবং নিজেদের বিবেকটাকে কাজে লাগাতে। কারণ নিজস্ব জ্ঞান মানুষ মারা যাওয়ার পর কোন কাজে আসে না। অনেকেই ভাবেন আমি হয়তো শিয়া মাযহাবের মানুষ। না আমি শিয়া নই। আমার পূর্বপুরুষ, আমার বংশ পরিচয় আমার স্বজনরা সুন্নি বলেই পরিচয় দিতেন, দিচ্ছেন এবং আমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করলে সুন্নি বলেই গর্ভবোধ করি। আল্লা বলেছেন সূরা তওবার ১১৯ নং আয়াতে ‘সত্যবাদীদের সাথী হয়ে যাও’। বলেন নাই শিয়া বা সুন্নি হয়ে যাও। সত্য নিজস্ব স্থান থেকেই বলা সম্ভব। ছোট বেলা থেকেই বিভ্রান্ত বিদায় হজ্জের ভাষন এর হাদিসটি শুনতে শুনতে বড় হয়েছি এবং কত কত পূর্ব পরুষ দুনিয়া ছেড়ে চলেও গেছেন মনের মধ্যে ভুল ধারনা নিয়ে সঠিকটা খুজেন নাই। এমনকি জানতে চেষ্টা করেন নাই! কি আর করা তাদের দোষ দিবো কি করে? তারা বিজ্ঞ আলেম সাহেবদের কথাই বিশ্বাস করে তাদের চোখ, অন্তর কোন কাজেই লাগান নাই শুধু কানকেই প্রাধান্য দিতে দিতেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। এটা যে ঠিক করেন নাই তা বুঝাযায় কারণ আল্লা একাধিক বার পবিত্র কোরআনে বলেছেন যার যার বুঝা তাকেই বহন করতে হবে। কাউকে দোষী করে নিজে বাচার কোন উপায় নাই। হাদিসটি এমন পাওয়া যায় নানান পুস্তকে যে ‘রাছুল সা. বলেছেন তোমাদের জন্য ২টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি একটি আল্লার কোরআন আর অপরটি আমার সুন্নাহ অর্থাৎ আমার হাদিস’। আমি যতই চিন্তা করি সত্য হিসাবে ধরে নিবো কিন্তু বিবেক বাধা দেয়। কোন কারণে বিবেক বাধা দেয় সেটাই আজ শেয়ার করার ইচ্ছাতেই লিখছি। এখানে একটা কথা উল্লেখযোগ্য দিধাহীন ভাবে মানি। আমি আল্লার বান্দা রাছুল সা. এর উম্মত। হাশরের ময়দানে মাত্র ২টি দল থাকবে একটি দল হবে জ্বিন এবং ইনসানদের। এই দলের সবাই বলবে ইয়া নাফসি আর অপর দলটিতে থাকবেন রাছুল সা. একা তিঁনি বলবেন ইয়া উম্মাতী যা হাদিসে পাওয়া যায়। যেহেতু আল্লা পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন ‘রাছুল তোমাদের সাক্ষ্যদাতা’। বিধায় আমরা শুধুই রাছুল সা. কেই অনুস্মরণ করবো। আসলে আমিও অনেক ধর্মভীরু তাই খুজি বেশী জানার জন্য যখন উপরের হাদিসটি দেখি তখনই মনে হয় মুসলিম শরিফের-৪০৯০ নং হাদিসটি এটা কি মানা ঠিক হবে? দিধায় পরে যাই সত্য তো একটা হবে। আপনাদের সুবিধার জন্য হাদিসটি উল্লেখ তুলে ধরলাম নিম্নে:
“মুহাম্মদ ইবনে রাফে এবং আবদ ইবনে হুমাইদ (রাহ.) বর্ণনা করিয়াছে; হুযুরে পাক (সা.) মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন ঘরে বহুলোকের উপস্থিত ছিলেন। তাহাদের মধ্যে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব অন্যতম। হুজুর সা. বলিলেন, আমি তোমাদিগকে একটি লিপিকা লিখিয়া দিয়ে যাই যাহাতে তোমরা পথ হারাইবে না। তখন হযরত ওমর বলিলেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর কুরআন বর্তমান আছে। উহাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।” -মুসলিম শরীফ হাদিস নং- ৪০৯০।
উক্ত হাদিসটিতে বুঝাযায় প্রতাপশালী এই সাহাবা বলতে চাচ্ছেন কোরআন ব্যতীত অন্য কিছুর দরকার নাই। এবং এটাই রাছুল সা. এর সামনে শেষ কথা। যেহেতু গাদিরে খুম এর ৭৭ দিন পরের ঘটনা এইটি। কোন আইনের ধারা যখন এমেন্ডমেন্ট (সংশোধন) হয় তখন পূর্বে আইনের ধারা বাতিল হয় স্বাভাবিক ভাবেই। প্রতাপশালী সাহাবা রাছুল সা. এর সামনেই বলেছেন কোরআনই যথেষ্ট। রাছুল সা. ওফাতের ঠিক মাত্র ৪ দিন আগে। কতই না ভাল হতো যদি প্রতাপশালী এই সাহাবার কথা মানা হতো। সমাজে হাদিস নিয়ে এত মতভেদ হতো না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তা মানা হলো না কোন কারণে। রাছল সা. শেষ ভাষণের বানী প্রতি বিদ্ধেষ পৌষণকারীরা আবার প্রতাপশালী সাহাবার কথাও না মেনে আবার হাদিস টেনে আনলেন। রাছুল সা. ওফাতের আগে বললেন কোরআনই যথেষ্ট আবার পূর্বের হাদিস টেনে আনা হয় কেন? এতে বুঝায়ই যায় সে হাদিসটি যথেষ্ট সন্দেহপূর্ণ।
সহিহ মুসলিম শরীফের অন্য এক হাদিসে পাওয়া যায় সেটাও আপনাদের জন্য নিম্নে উল্লেখ করে দিবো আপনাদের চিন্তা করার সুবিধার জন্য যেটা সঠিক মনে হয় বিবেচনা করে গ্রহন করা দরকার যেহেতু আপনাদের বিবেক জাগ্রতই আছে। আর কথায় আছে বিবেকহীন মানুষ পশুর সমান এবং কোরআনের আয়াতেও এই রকম দেখা যায় সূরা আরাফের ৭:১৭৯ নং আয়াতে।
“গাদিরে খুম এর শেষ ভাষনে নবী সা. বলে গিয়েছিলে: আমি তোমাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ বস্তু রাখিয়া যাইতেছি। তাহার প্রথমটি হইল আল্লাহর কিতাব। ইহাতে রহিয়াছে হেদায়েত এবং নূর; সুতরাং তোমরা ইহাকে মজবুত ভাবে ধরিয়া রাখিবে। তারপর বলিলেন, আর দ্বিতীয় বস্তু হইল আমার আহলে বাইত অর্থাৎ আমার পরিবারবর্গ। আহলে বাইতের ব্যপারে তোমাদিগকে আল্লাহর কথা স্মরণ করাইয়া দিতেছি- কথাটি তিনবার বলিলেন।” -মুসলিম শরীফ হাদিস নং- ৬০০৯
সবগুলি হাদিসই যেহেতু মুসলিম শরীফের কিভাবে কোনটাকে বাদ দিবো তবে চিন্তা করে সত্য গ্রহন করার অধিকার আমার আছে কারণ আল্লা বারং বারই বলেছেন যার যার বোঝা তাকেই বহন করতে হবে। আমার বিবেক আমার অধিকারের বস্তু। এখানে গাদিরে খুমে নাজিলকৃত কোরআনের আয়াতটি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই নিম্নে উল্লেখ করছি চিন্তা করে দেখার জন্য:
৫:৬৭# ‘হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবর্তীণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।’
এই আয়াতটিতে আল্লা তাঁর নবীকে সতর্ক করছেন এবং তাগাদা দিচ্ছেন বলেই বুঝাযায়। তারপরই আল্লার নবী গাদিরে খুমে মানুষদেরকে পিছন থেকে ডেকে থামিয়ে উল্লেখিত মুসলিম শরিফের-৬০০৯ হাদিসটি বললেন। আর এটাই মনে হয় গ্রহন যোগ্য কারণ সূরা আহযাবে ৩৩ নং আয়াতে নবীর আহলদের এ জন্যই আল্লা পুত-পবিত্র করে নিয়েছিলেন। যাদের নামগুলি কোরআন তাফসিরে এমনকি মুসলিম শরিফের একাধিক হাদিসেও পাওয়া যায়।
সেই হাদিসটিও আপনাদের জন্য নিম্নে উল্লেখ করবো কে কে পরিবারের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন মা আয়েশার রেওয়ায়েত করা হাদিসই তার প্রমান। ‘আহলে বাইত হচ্ছে; আলী, ফাতেমা, হাসান এবং হুসাইন (আ.)।’ -মুসলিম শরীফ হাদিস নং- ৬০০৪/৬০৪৫
আমার চিন্তা বা কথা আপনারা মেনে নেওয়ার কোন যুক্তি নাই তবে হাদিস গুলি দেখে চিন্তা করে যা আমি পেয়েছি সেটা তো আপনাদের সাথে শেয়ার করতেই পারি আর চিন্তা করে প্রমান করার জন্য হাদিসের সাথে নাম্বার গুলিও উল্লেখ করে দিয়েছি।
একটি কথা আমার মনে হয় যেখানে রাছুল সা. নিজেই থাকবেন সেখানে হাদিস নিয়ে যাওয়ার দরকার কি? আমার কাছে মনে হয় মুসলিম শরীফ নং-৬০০৯ হাদিসটি গাদিরে খুমের আসল বাণী রাছুল সা. হইতে। কারণ হাশরে রাছুল সা. যখন খোদ নিজেই হাজির থাকবেন সেহেতু সুন্নত এর কথা বলবেন কেন? দেখতেই তো পাবেন তিঁনি জ্বিন ইনসানদের আকিদা। রাছুল সা. এর প্রানপ্রিয় আহালদের আকিদা সাথে থাকলেই তো পূর্ণতা হবে। যেহেতু রাছুল সা. কথাটি তিন তিন বার করে বলেছিলেন আহলদের কথা তাতে বুঝা যায় আহলে বায়াত ঠিক মত ধরা থাকলে কোরআন ছাড়ার কোন উপায়ই থাকে না। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে তাই মনে হয়। আর নবীর জীবন দশায় তো হাদিস সংরক্ষন করতেই মানা করেছিলেন যাতে কোরআনের আয়াতের সাথে মিশ্রিত না হয়ে যায়। তবে শেষ সময়ে এটা কেন বলবেন? এই প্রশ্ন আমার মনে খুব বিচলিত করে! আপনারাও চিন্তা করবেন তা যদি না করেন তবে তো ঐ সূরা আরাফের আয়াতের অধিকারী হয়ে যাবেন। আপনাদের জন্য আয়াতটি উল্লেখ করে দিচ্ছি। ৭:১৭৯# “আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ”।
এই আয়াত সম্পর্কিত একটি হাদিস আছে প্রতি হাজারে একজন জান্নাতে যাবে বাকী ৯৯৯জন জাহান্নামে। তিরমিজি হাদিস নং-৩১০৭।