আজঃ বৃহস্পতিবার | ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
Home / ফকির উয়ায়ছী / প্রবন্ধ / ধর্ম শিক্ষা শরিয়ত মারেফত উভয় জ্ঞাণেই পূর্ণ হয়

ধর্ম শিক্ষা শরিয়ত মারেফত উভয় জ্ঞাণেই পূর্ণ হয়

ধ‌র্মের প্রকৃত সাধ পে‌তে হ‌লে জা‌হের এবং বা‌তেনী বিদ্যা গ্রহন কর‌তে হ‌বেই। শ‌রিয়‌তের জ্ঞান হ‌চ্ছে জা‌হেরী বিদ্যা যা পু‌ঁথিগত বিদ্যা‌নগন পুস্তক পঠ‌নে রপ্ত কর‌তে সক্ষম। বা‌তেনী বিদ্যা অর্জ‌নের জন্য পুস্ত‌কের সাহায্য কামনা যারা কর‌বে তাদের বু‌দ্ধিমান বলা যায় না। বা‌তেনী বিদ্যা অর্থাৎ মা‌রেফতের জ্ঞান। বাতেন আরবী শব্দটির বাংলা গোপন। গোপন জিনিষ পুস্ত‌কে প্রকা‌শ হ‌লে সেটা যে মা‌রেফত থা‌কেনা এটা তো খুব সহজ কথা। কা‌জেই পুস্তক পাঠে ভাল একজন পাঠক হ‌তে পা‌রেন, ভাল পড়ুয়া হ‌তে পা‌রেন কিন্তু লিখ‌কের লেখার উ‌দ্দেশ্য স‌ঠিক ভা‌বে নিরুপন করা দুরহ। আল্লার কোরান সক‌লেই পাঠ ক‌রে। অর্থ করেন বুঝেন নানানজনে নানান রকমভাবে। কাজেই জ্ঞান চর্চা করার ইচ্ছা থাকলে বিষয় ভিত্তিক বিজ্ঞজনের সার্নিদ্ধে যেতেই হবে। এটা আমার কথা নয় আল্লা কোরানে বলেছেন। ধরুণ আপনী একজন বিজ্ঞ পন্ডিত ব্যক্তি। জানার আগ্রহ আপনার অনেক কোরান ভালই পড়তে জানেন কিন্তু যেখানে (আয়াতে) গিয়ে মস্তিষ্ক সাথ দেয় না। সেখানটা তৃপ্তি নিতে চেষ্টা করেন আল্লা সুবহানুতায়ালাই ভাল জানেন এটা ভেবে।
“আল্লা সুবহানুতায়ালাই ভাল জানেন।” আমিও মানি এই কথাটা সে সাথে বিজ্ঞ পাঠকদের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয় আল্লা কোনটা জানেন না? এমন একটা কিছু আমায় বলে দেন যে আল্লা এটা জানেন না। আমার/আপনার জানা বিষয়ে কেউ যদি কিছু বলতে শুরু করে তখন আপনাদের কেউ কেউ হয়তো চুপ করে শুনবেন। কেউ অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুনবে। আমি খারাপ মানুষ হয়তো বলেই ফেলবো ঘটনাটা আমি জানি/শুনেছি। আমার জানা সেটা বার বার মনে করিয়ে দেওয়াটা বিবেকশূণ্য লোকেরই কর্ম বলে আমার ধরনা।
আমাদের ছোট বেলা থেকে শিক্ষা পেয়ে এসেছি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। জ্ঞান চর্চা তো বাড়াবাড়ি হওয়ার কথা নয়। আমার মনে যদি কোন প্রশ্ন আসে সেটার উত্তর আমি খুজবো। মনের সাথে যৌক্তিক উত্তর না মিললে মানবো কেন? অনেক আলেম সাহেবের সাথে আলোচনায় মস্তিষ্ক অচল হয় তাদের অজ্ঞতা সামনে চলে আসে তখন তাদের উত্তর হয় “আল্লা সুবহানুতায়ালাই ভাল জানেন” বলে এড়িয়ে যায়। তখন এক বাক্যে বলে দেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ইমান থাকবে না। অথচ আমি প্রশ্ন রোগে আক্রান্ত রোগী আমার ঔষধ( সঠিক উত্তর) না দিয়ে বলে দিচ্ছে মেনে নিতে। আমার মনে হয় আমি যেটা ভাল করে জানবো সেটার উপরই আমি অধিক বিশ্বাস (ঈমান) আনতে পারবো। কান কথায় যারা ইমান আনে তাদের ঈমান তো নরবরা হবেই। আমার ঈমান কঠিন মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত এমনটাই থাকবে আল্লার দরবারে আরজ করি সব সময়।
যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নাই সে বিষয়ে আল্লার হুকুম হচ্ছে যে জানে তার কাছে যাও। আল্লার কথার মর্ম বুঝতে হবে সঠিক ভাবেই। আল্লা তো অযথা কথা বলেন নাই। আল্লা বিজ্ঞজনের কাছে যেতে বলেছেন তার উসিলায় জ্ঞান প্রাপ্তির জন্য। অথচ কান কথায় ঈমান আনা নামধারী মুসলমানরা শিক্ষার শুরুতেই বলেন উসিলা ধরা যাবে না। একথাটা যে আপনার কাছে শুনছি এটাও তো আপনার উসিলায় আমার কানে পৌচ্ছালো। আল্লা কোরান নাজিল হয় নাই উসিলা ছাড়া। আল্লা নিজেও মুহাম্মদ সা.কে উসিলা আল্লার মুখপাত্র হিসাবে ব্যবহার করে কোরান প্রচার করেছেন। উসিলা ছাড়া যে কিছুই হয় না সেটা মানতে নারাজ তারা যারা মেরুদন্ড নুয়াতে অভস্ত নয়। মকরম ফেরেস্তা আল্লার অবাধ্য হয়েছিলো মেরুদন্ড বাকা করে নাই। আমি সব সময় বলি আমি যেনো জানতে জানতেই মৃত্যু বরণ করতে পারি। সবজানতা (মওলানা) আল্লা এবং শয়তান কোনটাই হতে চাই না। আমার জ্ঞানের পরিধী প্রসারিত নয়। আমার অজানা কিছু সামনে এলে জানতে চেষ্টা করি। কেউ প্রশ্ন করলে বলতে দিধা করি না এটা আমার জানা নাই। সে সাথে এও বলি আপনী খুজে দেখুন আমি জেনে জানাতে চেষ্টা করবো আপনী পেলে আমাকে জানাবেন যাতে আমার সময় বাচে।
আমি বাঁশের বেতি দিয়ে খাঁচা বানানো কামলা। আমার কাছে যদি কেউ হেলিকপ্টারের পাখা বানানোর জ্ঞান চায় আমি তো বাঁশের বেতি দিয়ে পাখা লাগিয়ে পরিক্ষা করতে বলবো। আমার মাথায় বাশ ব্যতিত কিছু নাই। শুধু আরবী ভাষার দক্ষতার জন্য আলেম (জ্ঞাণী), মওলানা(সবজান্তা) বলায় এসব লোকগুলি নিজেদের বাচানোর হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে “আল্লা সুবহানুতায়ালাই ভাল জানেন”। ভাব ধরেন পন্ডিতের। হুজুর হুজুর বললে তারা খুশি হন। আমাদের টাকায় তাদের বেতন দেওয়া হয় আবার তোশামোদী শব্দ (হুজুর) বলে আহবান করি। এজন্যই এসব লোক (হুজুর) শিক্ষা গ্রহনের জন্য কারো আনুগত্য নিজেও করে না, অন্যকে আনুগত্য করতেও বাধা দেয়। কারণ তাদের ঝুলির খবর বের হয়ে যাবে।
জমিদারী আমলে আজ্ঞে হুজুর, জ্বী হুজুর, সম্মত্তি সূচক শব্দের সাথে রাজার অধিনস্ত এবং প্রজারা রাজাকে খুশি করার জন্যই বলতেন। এটা সনাতনি ধর্ম প্রথার অনুসারী থেকে বেতনভুক্ত লেবাসীদের দখলে এসেছে শব্দটা। কি আশ্চর্য বেতন নেওয়া কর্মচারীকে হুজুর বললে তো কর্মচারী লজ্জায় লাল হওয়ারই কথা। কিন্তু লজ্জাবোধ হওয়ার জন্য যে শিক্ষা সাধারন জ্ঞাণ থাকা দরকার সেটা তো অধিকাংশ লেবাসধারীর নাই। জানে শুধু আরবী।
“আল্লা সুবহানুতায়ালাই ভাল জানেন”- আমার অন্তরের ক্ষুধা থেকে বাক্যটা খুজেছি কোরান হাদিসে পাই নাই। অথচ আলেম সাহেবদের বড় হাতিয়ার আল্লা ভাল জানেন। এ কথা তখন তারা ভুলে যায় তারা নিজেরা আবার মওলানা দাবি করে। মওলানা আরবী শব্দটার অর্থ সবজান্তা। তবে আপনী সবজান্তা টাইটেল লাগিয়ে আল্লার দায় দিয়ে পার পেতে চাইলে আপনী কিকরে সবজান্তা প্রশ্নটা মওলানাদের কাছে রইল।
আমার লিষ্টে অনেক আছে যারা নামের সাথে মওলানা ব্যবহার করছেন। তাদের অনেকেই আমাকে নানান প্রশ্ন করে, আমার অবাক লাগে। পাঠকগন বলেন তো কি করে মানি তাদের মওলানা। মওলানা সবজান্তার কাছেই তো প্রশ্ন করবো! যাক মওলানা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা নাই। তবে একটি কথা না বললেই নয়। “ধর্ম চর্চায় নবিস যারা তারাই তর্কের মধ্য দিয়েই পান্ডিত্য প্রকাশ করে। বিশ্বাস তাদের অন্তরে নাই আছে কর্ণে।”
আমি আজকের পোষ্টে কোন আয়াত ব্যবহার করবো না। তবে কোরানের কোন আয়াতের সাথে আমার পোষ্ট সাংঘর্ষিক হবে না আশা রাখি। তবুও কারো কাছে মনে হলে জানাবেন আমি সেটার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করবো।
একটা কথা মনে রাখি সব সময় আমি দাস ভুলের উর্দ্ধে নই। যেহেতু বলেছি আমি আয়াত উল্লেখ করবো না এই পোষ্টে কিন্তু শুরুতেই আলোচনা করেছি জাহের বাতেন নিয়ে আলোচনা করতেই হবে। আমি রমযান মাস কদর নিয়ে লিখেছি শবে বরাত নিয়ে লিখেছি শবে মেরাজ নিয়ে লিখেছি এ বিষয়গুলি নিয়ে ওয়াজিনগন ওয়াজ ব্যবসা করেই যাবেন গুজামিল দিয়ে বলে যাবেন আমল বিষয়ক কথা। মানুষ কপালে কালো দাগ করে যাবেন ফলাফল আপনী বুঝমান হওয়ার পর প্রথম কদর,বরাত, মেরাজ আর বৃদ্ধ বয়সের উক্ত দিবসগুলিতে কোন তফাৎ পান নাই। বলতে পারেন আমি তৃপ্তি পেয়েছি। এমন আমিও বলতে পারি দুধের স্বাধ ঘোল দিয়ে মিটিয়েছি। যদি প্রশ্ন করি কি পেয়েছেন ফল তো শূণ্যই রইলো।
আপনী আমি পরিক্ষা দিলাম আপনী খাতা ভরে ভুল লিখলেন, আর আমি কিছুই লিখলাম না। আমি তো ফেল জানি আপনী ফেল করলেও বলবেন আমি তো কিছু লিখেছি। কিন্তু ফলাফলে কোন তারতম্য নাই দুজনেই অকৃতকার্য।
উক্ত যে দিবসগুলির কথা উল্লেখ করেছি জাহেরী বিদ্যা দিয়ে এগুলির সমাধান জীবনে মিলাতে পারবেন না। মুসা এত বড় নবী হওয়া সত্বেও আল্লার বান্দা খিজিরের কাছে যে শিক্ষার জন্য গিয়েছিলো সে শিক্ষা কোরান পড়েই শিখতে পারলে আল্লা হয়তো মুসার হায়াত বাড়িয়ে দিয়ে মুহাম্মদের উম্মত করতেন অবশ্য মুসা তাতে খুশিও হতেন। খিজিরের কাছে যে শিক্ষা অর্জনের জন্য গিয়েছিলো সেটা শরিয়তের জাহেরী শিক্ষার অন্তর্গত নয় সহজেই অনুমেয়।
আমি কদর সম্পর্কে নানান প্রশ্ন উত্থাপনের পর আমার এবং আপনারদের অনেকের প্রিয় বাংলাদেশ চলচিত্র জগতের কিংবদন্তি মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা Md Masud Parvez দাদাভাই ফোন করে বললেন আমি যেসব প্রশ্ন উত্থাপন করছি সেগুলি উনাকে গভীর চিন্তায় ফেলছে। কোথায় গেলে উত্তর পাবেন সেটা আমি কেন বলছি না। আর আমি কেন বলছি না। যে আমার কাছে এলে উত্তর পাবে। সোহেল রানা দাদাভাই আমার বাসায় অনেকদিন আসতে চেয়েছেন আমি নিরুৎসাহিত করেছি। আসলে সত্য কথা তাকে আমার বাসায় এনে সমাদর করা আমার সাধ্যের বাইরে। এমনকি উনার শারীরিক কষ্টও হবে। দাদা বললেন আমি কেন বলি না মানুষকে দাওয়াত দেই না? আমার লেখালেখি ১০ বৎসরে পরলো মে /২০২০ আজও কোন আহবান মুলক পোষ্ট করি নাই। তবুও ভন্ড পীর ব্যবসায়ী নানান মানুষ নানান কথা বলে। অবশ্য আমায় না দেখে না জেনে গালি দেওয়া আর ভালবাসা উভয়ই আমার কাছে সমান। তারপরও আমি দাদাভাইকে বললাম আমি যে বিষয়গুলি উত্থাপন করি সেগুলি যৌক্তিক হলে অবশ্যই উত্তর আছে। আর আমি যেটাতে অবগত নই সেটা নিয়ে আমি লিখি না। আর যা লিখি দলিল ব্যতীত নয়।
আজকের লেখাটায় নানান কিছু চলে আসছে যেহেতু লেখাটা চেতনার বহিঃপ্রকাশ। আমি আল্লা দাস রাছুলের দাসানুদাস নিজ থেকে লেখার মতন জ্ঞান নাই। যা কিছু বলি মালিকের পক্ষে থেকেই বলি। আজকের লেখায় ভুল থাকলে আগাম ক্ষমাপ্রার্থী হবো যদি ভুল প্রমান সহ ধরিয়ে দেন।
#ফকির_উয়ায়ছী

About Fokir Owaisi

আরও দেখুন

ফানা ফিশ শাইখ অর্থাৎ পীরের হয়ে যাও

ফানা ফিশ শাইখ অর্থাৎ পীরের হয়ে যাও ফকির উয়ায়ছী: মারেফতের মুরুব্বি বুজুর্গদের থেকে শুনা একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *