লাইলাতুল কদর মহিমাম্বিত রাত্র।
আজকে পবিত্র কোরানের একটি আয়াত নিয়ে আলোচনা করবো। আলেম সাহেবগন মসজিদে এতেকাফ করবেন রাত্রিতে বসে রাত্র খুজবেন যারা এতেকাফে বসেন নাই তাদের সোয়াব হবে কি করে? রাত্রে বসে রাত্র তালাশ করা আর ঢাকায় বসে ঢাকা তালাশ করার মতন।
আমাদের দেশে আলেম সাহেবগনদের বলতে শুনি নাই মহিলারা এতকাফ করার কথা। আমি দেখিও নাই মহিলারা এতেকাফ করেছেন বলে। মহিলারা কদরের সোয়াব পাবে কি করে? নাকি কদরের নেকী মহিলাদের জন্য নয়। আল্লা বলেছেন কোরানে যার যার বুঝা তাকেই বহন করতে হবে। এই আয়াতে সঠিক আমার কোন সন্দেহ নাই। তবে যারা জীবনে একবার এতেকাফে বসেনি তারা কদর পাবে কি করে? সঠিক জেনে জীবনে একবার অন্তত্য কদর তালাশ করা উচিৎ। আর যে কদর পেয়ে গেলো তার দ্বিতীয়বার বসার দরকার পরে না। আপনার চেনা বস্তু তো বার বার চেনানোর দরকার নাই। সে মতে বার বার খোজার কিছু নাই।
যাই হোউক আয়াতটা উল্লেখ করছি সাথে কিছু নামকরা অনুবাদকের তর্জমা দিচ্ছি আপনাদের বিবেচনার জন্য সে সাথে নিরপেক্ষ কিছু আলোচনা। ভুল আমারও হতে পারে ধুরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ হবো।
সূরাঃ আল-ক্বাদর 97:1
إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْرِ
ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।
এই আয়াতটাতে আমার দৃষ্টি মুখ্য হচ্ছে নাজেল। নাজেল একটি পূর্ণাঙ্গ শব্দ আংশিক নয়। নাজেল অবতরন ল্যান্ডেড। শব্দটা সম্পর্কে আক্কল দিয়ে বিবেচনা করা জরুরী।
প্রথম অনুবাদ বাংলা তর্জমা
১/ “নিশ্চয় আমি তাহাকে (কোরআনকে) শবে কদর রজনীতে অবতারন করিয়াছি।” ( অনুবাদ- ভাই গিরীশচন্দ্র সেন) এক আলেম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছি অনুবাদ নিয়ে বলে হিন্দু মানুষ যা খুশি লিখেছেন। আমার কিছু বলার নাই।
২/ “আমি তো এ (কুরআন) নাজেল করেছি সম্মানের রাত্রে।”
(অনুবাদক- শামছুর রহমান ভূইঞা একজন সাইনটিস নাসাতেও চাকরী করেছেন ভদ্রলোক একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। সেখান থেকে ফিরে তিনি পুনরায় মুসলমান হয়ে তার পেনশনের টাকা দিয়ে বাংলা ইংরেজি তর্জমা করে কিতাবটির উপরে লিখেছেন “বিনা দামে বিলান”। বয়স্ক মানুষ আমি উনার বাসায় গিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি আমাকে বাংলা তর্জমাটা দিয়েছিলেন।
৩/ “আমি একে নাযিল করেছি শবে- কদরে”। (মারেফুল কোরআন সৌদি প্রিন্ট হাজ্জিদের যেটা দেওয়া হয়। হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী’ (রহঃ)। অনুবাদক- মাওলানা মুহিউদ্দীন খান।
৪/ “We have indeed revealed this [Message] in the Night of Power:”
(ইংরেজি অনুবাদক আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী। এই ভদ্রলোকের ইংরেজি অনুবাদ অধিকাংশ লোকের কাছেই গ্রহন যোগ্য।)
আমি চারটি তর্জমা থেকে উল্লেখ করলাম আমার মতামত আমি লিখছি আমার চিন্তা থেকে। আপনারাও পড়ে দেখবেন আমার চিন্তায় কি ভুল আছে?
কদরের রাত্রিতে এই সূরাটা দিয়েই নফল নামায আদায় করা হয়ে থাকে। আবার অনেকেই বাংলায় অর্থ পড়ে থাকেন। ইংরেজিতে অর্থ পড়া মানুষ যে একদম নাই তাও বলা যাবে না। আল্লা কারটা কবুল করবেন সেটা তিঁনার উপরই ন্যস্ত।
আয়াতে আল্লা যা বলেছেন সেটাই যদি বলা হতো কতই না উত্তম এবং তৃপ্তি দায়ক হতো। তা না করে মনগড়া ভাবে যার যার খুশি মতন তর্জমা করে আমাদের দিধায় ফেলে দিয়েছেন।
উক্ত আয়াতটিতে আল্লার মতন না রেখে নিজস্ব গরজে পরিবর্তন করা হয়েছে। বিধর্মী লোকে যদি এটা খেয়াল করে বলতে পারে আপন গরজে সংযোজন করে আল্লার ভুল ধরার চেষ্টা করেছেন তর্জমাকারীরা কথাটা ভুল হবে না।
আল্লার ভুল ধরার সাহস আল্লা বিশ্বাসী মানুষ করবে, সেটা আমি মানি না। কিন্তু প্রশ্ন আসে বাংলা অনুবাদে আমি কিন্তু ইংরেজি অনুবাদে WE ব্যবহার করা হয়েছে। আয়াতটাতে আমি/WE ব্যবহার হওয়ার মত আরবী আনা/ নাহনু শব্দ দুটি আয়াতে উল্লেখ নাই। শুধু তাই নয় আয়াতের তর্জমায় কোরআন শব্দটা ব্যবহার হয়েছে। আয়াতে কারীমায় কোরআন শব্দটা অনুবাদকগন স্বগরজেই বসিয়েছেন। আবার ইংরেজি অনুবাদের Night of Power শক্তিশালী রাত্র বলা হয়েছে। রাত্র শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ নাই। আলো বিহীন রাত্রে এক চিলতে আলোকে শক্তিশালী বলা যেতে পারে। কিন্তু রাত্রি অন্ধকার শক্তিশালী হয় না। জন্মান্ধ এর নিকট প্রশ্ন করুণ। কি তফাৎ আছে অন্যান্য রাত্রের সাথে? বলবে আমার চোখ নাই সবই তো এক।
ইংরেজি অনুবাদ দেখে যারা বাংলা অনুবাদ করেছেন নিজের পান্ডিত্য অর্জনের জন্য তাদের একজন হচ্ছে সদর উদ্দিন চিশতী সাহেব উনি কয়েক গুন বেশী বিভ্রান্ত করেছেন। উনার অনুবাদটা দিয়ে পরে চিন্তা করতে বলবো
“নিশ্চয় আমরা ইহাকে উদয় করিয়া দেই শক্তিশালী রাত্রিতে।” (সদর উদ্দিন চিশতী)
তিনি লিখেছেন ভাববাদী অনুবাদ। হায় মানুষের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খাওয়া সহজ যদি কেউ মাথা পেতে দেয়। লোকটি ব্যাখ্যা করেছেন শব্দ দিয়ে
১/ নাজেল শব্দ অর্থ করেছেন উদয়।
২/ হু শব্দটার ব্যাখ্যা লিখেছেন [নিজের ভিতর পুরুষ সত্তা বা আপন প্রভু তথা আপন আল কোরান।]
৩/ রুহ অর্থ প্রজ্ঞাবান সত্তা।
এ তিনটি শব্দ নিয়ে একটু লিখছি আপনারা বিবেচনা করবেন।
১/ প্রথমেই বলতে হয় নাজেল আরবী শব্দটির বাংলা অনুবাদ উদয় ব্যবহার করা যায় না।
২/ নিজের ভিতর পুরুষ সত্তা। হায় আমার জানা মতে সদর সাহেবের মহিলা মুরিদ ছিলো। আপন প্রভু তথা আপন আল কোরান।- তিনি কোরান দর্শনে লিখেছেন রব অর্থ প্রকৃত গুরু। এখানে লিখেছেন আপন প্রভুই কোরান। খিচুরী পাকাইছেন ইচ্ছা মত। মোটা মাথা ওয়ালারা শুধু দয়াল, প্রভু, মহাপ্রভু, মওলা বাবাই হক বলেছেন। সদর সাহেব বুঝেছেন এগুলির মাথা কি আছে। তিনিও যখন যেটা মনে হয়েছে খিচুড়িতে এড করেছেন। প্রশ্ন করা তো তাদের কাছে বেয়াদবি। নিজেই কোরান, নিজেই আল্লা, নিজেই রাছুল, নিজেই সব। যে শশ্য দানা গুলি উনার জীবদ্দশায় খেয়েছেন তার একটি সৃষ্টি করার মতন শক্তি তার ছিলো না। মুহাম্মদ সা. যে দাবী করার সাহস করে নাই তেমন দাবী নিজে করেছেন তার লেখা বিশ্লেষনে পাওয়া যায়।
৩/ রুহ অর্থ প্রজ্ঞাবান সত্তা। সদর সাহেব কোন কিছুর প্রভাবে এমন উল্টা পাল্টা লিখেছেন আমার মাথায় ধরে না। রুহে নাবাদাত, রুহে হায়ানাত, রুহে জামাদাত, রুহে ইনসানিয়াত। শরিয়তের লোক সকল না মানলেও মারেফতের বিজ্ঞ লোকজন অস্বীকার করার উপায় নাই। রুহ বলতেই যদি প্রজ্ঞাবান বলা যায় রুহে হায়নাত কি বিষ্ঠা খাবে কেন? যারা সদর সাহেবকে মওলা মহা প্রভু মনে করেন তারা আমার উপর বিরক্ত না হয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করার অনুরোধ করছি। তার বিভ্রান্ততা যদি তুলে ধরার মতন অনেক রসদ আমার হাতে ইচ্ছা করে না। সুরা কদরের প্রথম আয়াতটার অনুবাদে লিখেছেন আমরা উদয় করেছি। সে মারা যাওয়ার আগে ৭বৎসর ঘর বন্দি ছিলো কোথাও উদয় হতে পারে নাই। বিছানা পত্র দিয়ে মাটি দেওয়ার পর উদয় হয় নাই। আপনাদের আল্লো যে মারা গেছেন আপনারা বিছনা পাতি দিয়ে মাটি দিয়েছেন। কোরান যেটার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন সে সেটা তো তার লেখা আয়াত নয়। সে কেমন প্রভু? সে একাই যেহেতু আল্লা এবং কোরান প্রভু। সে আমার বলে কাকে সাথে নিলেন? চিন্তার ভার আপনাদের উপরই রইল। আমার কথা পরিষ্কার ইনাদের মতন মতলববাজ লোকদের জন্যই পীরদের মানুষ গাল দেওয়ার সুযোগ পায়।
ফকির উয়ায়ছী
বি.দ্র: পোষ্টের সাথে ছবিটা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন রাত্র/অন্ধারের চেয়ে একটু আলো অনেক বেশী শক্তিশালী। মুহুর্তে অন্ধকার দুর করতে সক্ষম। আমি মনে করি রাত্রকে শক্তিশালী মনে করা নাদানের কর্ম বৈ নয়।