এজিদের রক্ত বংশের অনুসারীদের খুশি উৎযাপনের মাস মহরম। পর্ব-৩/৩
=========================================================
ফকির উয়ায়ছী:
১০ই মহরম এর দিন যারা ভাল ভাল খেয়ে খুশী উৎযাপন করেন তারা এক কথায় এজিদের রক্ত বংশের অনুসারী। এই শোকের দিনে কোন অবস্থাতেই খুশী পালন করার সুযোগ নেই। আজ থেকে ৪০/৫০ বৎসর আগেও আশুরার দিনে বিয়ের তারিখ বা কোন উৎসব পালন করেন নাই। আর না বুঝে যারা আশুরা অর্থাৎ ১০ই মহরমে খুশি উৎযাপন করছেন তাদেরও অধিকাংশই জানেন না যে কেন তারা রোযা রাখছেন এবং কেন ভাল ভাল খাচ্ছেন? যারা খাচ্ছেন তাদের দোষ কি তারা সঠিক ঘটনাটা শুনেন নাই জানার চেষ্টাও করেন না। মুহাম্মদ সা. বংশ যারা নিধন করেছেন তারা প্রচার করেছে এই বলে যে আজকের দিনে মুসা আ. ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন সেই খুশীতে খাবেন এবং তাদেরও খাওয়াবেন। সত্য ধামা চাপা দেওয়ার জন্যই এই প্রচারনা। সাধারন ভাবেই চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন সাড়াদিন কষ্ট করে ভাল খেতে হবে কেন? ঈদুল আযহা ত্যাজ্ঞের দিনে তো রোযা রেখে ভাল খেতে হয় না। এমনিতে সকলেই আমরা ভাল খাই। তবে কেন রাছুল সা. যেদিন ফরয রোজা হিসাবে পালন করেছেন মেরাজের আগ পর্যন্ত সেদিন কেন খুশি পালন করবেন? এই দিনটিতে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ শোক পালন করার উদ্দেশ্যে রোযা রাখেন। মাছ গোস্ত খায় না। শুধু শরীরের জীবন ধারনের প্রয়োজনে আহার করে তাদেরকে ইয়াজিদের অনুসারীরা অবুঝের মতন শিয়া নামে ডাকে। আর যারা নিজেদের শিয়া দ্বাবী করে তারা রীতিমত হিন্দুদের মতন কাজকর্ম করে মহরম উপলক্ষে।
এই শিয়া নামের খেতাবটি বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সা. এর এবং নবীজীর বার্তা বাহক জিব্রাইল আ. এর জানা ছিল না। এমনকি আল্লা কথাকথিত মুসলমানদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেন নাই। যদি মনে করতেন তবে অবশ্যই কোরআনের কোথাও শিয়া হওয়ার জন্য মানুষকে বলতেন। কোরানের একটি আয়াতে ইব্রাহিম নবীকে অনুস্মরণের কথা বলেছেন। কিন্তু তথাকথিত সুন্নি এবং শিয়ারা কেউ এদিকে দৃষ্টি দেন না। এমনকি চিন্তাও করেন না আল্লার এই হুকুমের কথা। যারা শিয়া নাম করণ করেছেন তারা আল্লা এবং রাছুলের চেয়েও বড় ইমানদার হওয়ার চেষ্টায় আছেন বলেই মনে হয়।(নাউজুবিল্লাহ্)। এই কথা মনে হওয়ার কারণ নবী পরিবারের পক্ষে কেউ কোন মন্তব্য করলেই ইয়াজিদের অনুসারীরা এক কথায় শিয়া বলে অবহিত করে।
১০ই মহরহ এই দিনটিতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আলোচনা করলেই বিচক্ষন ব্যক্তিগন সত্য উদঘাটন করতে সুবিধা হবে এবং সেই মতে এই বৎসর আশুরা পালন করতে সুবিধা হবে। ইসলামের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়। যদিও অনেক মতভেদ আছে তবুও উল্লেখ করছি ১০ই মহরম তারিখে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা প্রবাহ নিম্নে:
১/ এই দিন আদম আ. কে আল্লা সৃষ্টি করলেন এবং এরকম মহরমের এই দিনে ‘মা’ হাওয়ার সঙ্গে মিলিত হন আদম আ. এবং এইরকম একটি দিনেই আল্লা আদম আ. এর তওবা কবুল করেছিলেন।
২/ এই দিনেই নূহ আ. এর জাহাজ জুদি পর্বতে (কারবালা প্রান্তরে) এসে থেমে যায়।
৩/ এই দিনেই ইব্রাহিম আ.কে নমরুদ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেন এবং ইব্রাহিম আ. রক্ষা পায়।
৪/ এই দিনেই মুসা আ. বনি ইসরাইল বাসীদের নিয়ে নীল নদী পাড়ি দেন এবং মুসা আ.কে তারা করা ফেরাউন দল বল সহ নীল নদীতে ডুবে মরে।
৫/ এই দিনেই নবী পরিবারের আখেরী নিশান হযরত হুসাইন আ. তার দুধের শিশু সহ এজিদের হাতে নিমর্মভাবে শহীদ হন।
৬/ ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
৭/ হাদিসে এরকমও শুনা যায় যে ১০ই মহরমেই এই দুনিয়া ধ্বংস হবে।
উক্ত ঘটনাগুলি সবই ১০ই মহরম তারিখেই সংঘঠিত হয়েছে এবং এমন আরো কত কিনা ঘটেছে এবং ঘটবে।
ভালভাবে চিন্তা করে এখন থেকে সামনের বছর গুলিতে বেহেস্তর সর্দারদের উদ্দেশ্যে পালন করে বেহেস্তের অংশীদার হতে চেষ্টা করবেন নাকি তাঁদের রৌশানলে পরার মত করে দিনটি পালন করবেন।
আল্লা কোরআনে “মুসলমান না হয়ে মরতে নিষেধ করেছেন” একাধিক আয়াতে। সুন্নি বা শিয়া হওয়ার কথা বলেন নাই। যে বা যারা স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যক্তিগত গরজে শিয়া সুন্নী ভাগ করে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন হাশরের ময়দানে তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি তাদের অনুসারীরাও রেহাই পাবেন না। বিশ্বনবীকে অনুস্মরণ করে যে বা যারাই ইসলামের জন্য সত্য সঠিক কাজ করবেন সেটাই মুসলমানের কাজ হবে। সুন্নি বা শিয়া হওয়ায় কিছু যায় আসবে না আল্লা বা রাছুল সা. এর দরবারে। কারণ আবারও বলছি আল্লা রাছুল শিয়া সুন্নি ভাগ করেন নাই।
একজন ঘুষখোর সুন্নি আর একজন নির্অপরাধ শিয়া বা বিধর্মী জ্ঞানীদের বিচারে কে উত্তম? ভুলে গেলে চলবে না হাশরের ময়দানে স্বার্থনেশীদের ফতোয়া কারোরই কোন কাজে আসবে না। যার যার হাত পা এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গই স্বাক্ষী দিবে। এবং যারা নামায পড়েন তাদেরও মনে রাখা উচিৎ যখন নামায পড়েন তখন রাছুল সা. এর পরিবারের উপর দরুদ সালাম এবং ইব্রাহিম আ. এর উপর দরুদ সালাম পেশ না করলে নামাযই হয় না। এমনকি আল্লার হুকুম ইব্রাহিমের মিল্লাতের উপর কায়েম থাকতে বলেছেন। সেখানে ১০ই মহরম এইসব পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে মুসা আ. জন্য খুশী পালন করেন। এই সকল কর্মকান্ডের জন্য মানুষ মুনাফেকে পরিনত হয়। এইসব বিভ্রান্ত কর্ম করে তারা আবার বেহেস্ত আশা করে নোংরা স্বজনপ্রীতি করে বেহেস্তে যেতে চান। তারা ভুলে যান সেই বেহেস্তের সর্দারদের অনুমতি ব্যতীত ঢুকবেন কিভাবে? তাও মনে শান্তি হতো যদি মানুষ মুসা আ. এর কথা না বলে খুশির জন্য বলত দুনিয়া সৃষ্টি বা আদম আ. এর জন্মের খুশিতে মহরম পালন করছেন অথবা ইব্রাহিম আ. এর অগ্নি হতে রক্ষা পাওয়ার খুশী পালন করছেন তাতেও মনকে প্রবোধ দেওয়া যেতো। যেহেতু ইব্রাহিম আ. এর প্রদি দরূদ ব্যতীত নামায হয় না। এমনকি ইব্রাহিম আ. মুসলমানের জাতির পিতা। এবং আল্লা আদেশ করেছেন ২২:৭৮#“তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক”। আমার ধারনা মুসা আ. নবীর কোন বংশধর যদি থাকতো তবে আমাদের আখেরী নবীর বংশধরের শোকেই শোক পালন করতেন।
উক্ত বিশেষ দিনে ঘটে যাওয়া বেদনা দায়ক কর্মটি বিবেচনায় নিয়ে মুহাম্মদ সা. এর বংশ নিধনের দিনটিকে “ইসলামের কালো দিবস” নামে ঘোষনা দেওয়া হোউক সরকারী ভাবে দাবী জানিয়ে শেষ করছি।