ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের সাথে ভেজাল জড়িৎ হয়েগেছে- ৫ম শেষ পর্ব
====================================================
ফকির উয়ায়ছী:
৫ নং হজ্ব:
ইসলামের শেষ স্তম্ভ পালনের আগে অবশ্যই আগের ৪টি স্তম্ভ পালন করেই শেষটা পালন করতে যাওয়া জরুরী। কিন্তু আগের চারটি পুরা না করে লাফ দিয়ে ৫নং পালন করতে যাওয়া বা পালনে উদ্ভুদ্ধ করা বোকামী ছাড়া কিছুই নয়। S.S.C পরিক্ষা দিতে যাওয়ার আগে আগের কোন শ্রেনী বাদ দিয়ে যেমন হবে না। ঠিক তেমনি যাকাতের রসম পালন না করে হজ্জ পালন করলেও কোন লাভ হওয়ার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে পারে না। অর্থবানদের জন্য হজ্জ করা ফরজ। রোজার মাস থেকেই মসজিদের ইমামগন লোভ দেখাতে থাকেন হজে গিয়ে ১ টাকা খরচ করলে ৪০০- ৭০০ থেকে গুন সোয়াব ঈমাম ভেদে বচন। এই লোভে গ্রামের অনেক মানুষ যারা কোনদিন যাকাত আদায় করে নাই। হজ্জ করতে চলে যায় কেউ জমি জিড়াত বিক্রি করে। কেউ আবার সাহায্য নিয়ে হজ্জ পালন করে এমনও দেখতে পাওয়া যায়। হজ্জ থেকে ফিরে এসেই নাম লাগায় হাজী। হাজী শব্দটি নামের সাথে দেখলে হাস্যকর লাগে। কারণ হজ্জ ইসলামের ৫টি স্তম্ভের একটি। কেন নামের সাথে আলহাজ্ব লাগাবেন? কেউ তো আল-সালাতি (নামাযী) বা আল-সিয়ামী (রোযাদার) নামের সাথে ব্যহার করেন না! নামের সাথে আলহাজ্ব লাগায় লোক দেখানোর জন্য। যাতে মানুষ বুঝে পয়সাওয়ালা মানুষ হজ্জ করে এসেছেন। নামের ওজনটার সাথে সম্মানও বারে। নাম যতবড় হয় সম্মান তত বেশী। মারেফতের পীর সাহেবগনের নাম যত বড় পীরও তত বড়। অনেকে হয়তো চিন্তাও করে না মনে করে হজ্জ করলেই নামের সাথে হাজ্বী লিখতে হবে। একবার হজ্ব করলেই যদি হাজী লেখা হয়। যারা প্রতি বৎসরই হজ্ব করে তাদের নামের সাথে তো আলহাজ শব্দটির পর টুদি পাওয়ার 3,4,5, 10-12 লিখাটাও বাঞ্ছণীয়। আমি এই কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে। আমার রাছুল সা. নামের সাথে আলহাজ/ হাজী লিখেন নাই। মনে রাখবেন রাছুল সা. ১বারই হজ্ব করেছেন। আপনারা লোক দেখানোর জন্য হাজ্বী লিখে অহংকারী সাজলে আল্লার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। মজবুত ঈমানদারের একবারের হজ্ব অবৈধ রোজগারীর একাধিকবার হজের চেয়েও উত্তম। একাধিকবার হজ্ব না করে আপনার নিকটাত্মীয় বা আশ-পাশের কন্যাদ্বায়গ্রস্ত পিতার কন্যা দানের ব্যবস্থা করুন তাতেও সোয়াব বেশী পাবেন।
আলেম সাহেবগন একবার বলেন না ইসলামের শেষ স্তম্ভ পালন করতে যাওয়ার আগে অবৈধ হারাম উপার্জন বন্ধ করুণ। বিশেষ করে সরকারী চাকুরীজীবি হজ্জ পালকারীদের কয়জনে অবৈধ টাকা ছাড়া হজ্জ করতে পারেন? আপনার নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করবেন। রোযার মাস শেষ হলেই অনেক অফিসারই হজ্জে যাওয়ার তৈরী করেন। বড় বড় স্যারদের এসিসেট্যান্টদের কাছে ফাইল নিয়ে গেলে স্যারদের প্রতি সদয় হয়ে এসিসেট্যান্টরা বলেন ফাইলের কাজ হবে তবে স্যার কিন্তু এইবার হজ্জে যাবেন। বুঝতেই তো পারেন স্যারের খরচ আছে অনেক। হজ্জের ময়দানেও এই অবৈধ টাকা দিয়ে হজ্জ করা নিষেধ এটাও মানা করে না হজ্জের খতিবগন। মানুষ তার নিত্যদিনের শয়তান সাথীকে সঙ্গে রেখে যখন ছোট, মাঝারি, বড় শয়তানের দিকে কঙ্কর নিক্ষেপ করে; সাথে থাকা শয়তানটা কতই না পুলকিত হয়। দোয়া পড়ে ছোট ছোট কঙ্করগুলি নিজের গায়ে মারা হতো তাতেও শয়তান বিতারিত হওয়ার কিছু সম্ভাবনা থাকতো। যদি হাজী সাহেবগন হজ্জ থেকে ফিরে এসে সে কথা মনে রাখতে পারেন। বিজ্ঞ ফতোয়াবাজগন যদি প্রতিবারই এই কথাটা বলে সতর্ক করেন যে “অবৈধ উপার্জনকারীরা হজ্জে আসবেন না।” তবে, অন্তত্য প্রতি লাখে এক জন হলেও অবৈধ রোজগার থেকে বিরত থাকতো। কোন আলেমের কাছে এটা বলার আশা ছেড়েই দিয়েছি। কিন্তু আশায় রয়েছি তবে মানুষের কাছে নয়। আল্লার পক্ষ থেকে কত আশ্চর্য ঘটনাই ঘটে! হজ্জের রছম কোরবানীর কোন পশু যদি বলে উঠে হালাল টাকা ছাড়া আমায় কিনবেন না। বা জবাই করার সময় পশুটি বলে উঠবে হারাম টাকায় ক্রয়কৃত হলে আমার গলায় ছুরি চালাবেন না। তখন যদি ভয়ে নিবৃত হয় কিছু মানুষ।
অনেক ঘুষ খোর অবৈধ রোজগারী মনে করে আমি হালাল টাকা দিয়েই ইসলামের কাজ গুলি করবো। অবৈধ টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করবো। এখানে একটা কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আপনার ৪০ কেজি খাটি দুধের সাথে আমার টক মিশ্রীত এক কেজি দুধ মিলালে যেমন সম্পূর্ণ দুধটুকুই নষ্ট (ছানা) পরিনত হয়ে যাবে। ঠিক সেরকম আপনার হালাল টাকার সাথে যখন অবৈধ আয় (টাকা) মিলে যায় তখন সমস্ত টাকাটাই অবৈধ হারাম টাকায় পরিনত হয়। সেই ৪০ কেজি দুধের মত। কাজেই কেউ যদি মনে করে আমি আমার হালাল টাকা দিয়েই দান করছি, রোযার ইফতার করছি, যাকাত দিচ্ছি, কোরবানী এবং হজ্জ করছি সেটা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। যেহেতু অবৈধ রোজগার টাকা দিয়ে তার অন্য প্রয়োজন মিটানো হচ্ছে। সংস্কারের সুবিধা পেলে মসজিদের খতিবদের হুকুম দিতাম হজ্জে যাওয়ার আহবান করার আগে অবশ্যই বলতে। হজ্বে যাওয়ার আগে অবৈধ আয় বন্ধ করতে এবং যাকাত প্রদান করতে। হালাল টাকায় হজ্ব করতে।
বি.দ্র:- আমি ব্যক্তি স্বার্থর জন্য কোন লেখা-লেখি করি না। আল্লা আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তিঁনার সৃষ্টির কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য লিখা। আমার কোন পোষ্টে যদি আল্লার কোরআন এবং সহিহ হাদিস বিরোধী কিছু থাকে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ হবো। তবে লোক সংখ্যায় বড় দলের মতামত দিয়ে সত্য যাচাই করতে চাইলে সে সত্য আল্লার দরবারে গৃহিত হবে কিনা সেটা বিবেচনা করেই বিরোধীতা করবেন আশা রাখি।