ফকির উয়ায়ছী-Fokir:
আলোচনার শুরুতেই বলতে চাই আলেম আরবী শব্দটির বাংলা হচ্ছে জ্ঞানী। আলেম শব্দটি এখন আর আরবী শব্দ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে না। শব্দটি এখন বাংলা বাক্যের সাথে মিলে বাংলা শব্দেই পরিনত হয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য। আল্লা পবিত্র কোরআনে এবং রাসূল সা. হাদিসে আলেম (জ্ঞানী)দের সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন। যেমন:
১৩:১৬# বলুনঃ “অন্ধ চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়।”
৩৯:৯#“বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।”
৩৫:২৮# “আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়।”
উপরোক্ত সবগুলি আয়াত এবং এমন অনেক আয়াতে কোরআনে বিদ্যমান আলেম(জ্ঞানী) সম্পর্কে। এমনকি কিতাবাদিতে ওয়াজ মাহফিলে বিজ্ঞ আলেম সাহেবদের মুখেও শুনা যায় আলেম সম্পর্কে হাদিসগুলি। তারা প্রমান করেন যেকোন ভাবেই। মাদ্রাসা বিনা অধ্যায়নে আলেম হওয়ার কোন উপায় নাই। কাজেই তারাই প্রকৃত আলেম। আর আমাদের সমাজের শিক্ষিত অর্বাচীনগন এটা মেনে নিয়েছে এবং এই পদবী তাদের নামেই রেজিষ্ট্রী করে দিয়েছে।
নেট থেকে সংগৃহিত:
{(ইন্নাল উলামউ ওয়া রাসাতুল আম্বিয়া-আল হাদিস)
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আলেমগণ হলো নবীর ওয়ারিশ।” এই হাদিস শরীফ হতে বোঝা যায় যে, নবীজির ওয়ারিশ সকলে নয়, একমাত্র আলেমগণ। হাদিস শরীফে আল্লাহর নবী আরও বলেন,
ﺨﻳﺭﺍﻠﺧﻳﺎﺮ ﺨﻴﺎﺮﺍﻠﻌﻟﻤﺎﺀ ﻮﺸﺮ ﺍﻠﺸﺮﺍﺮ ﺷﺮﺍﺭ ﺍﻠﻌﻟﻤﺎﺀ
(খায়রুল খেয়ারি খেয়ারুল উলামা ওয়াশাররুশ শেরারি শেরারুল উলামা-আল হাদিস)
অর্থাৎ “ভালোর চেয়ে ভাল হলো আলেম এবং খারাপের চেয়ে খারাপ হলো আলেম।” এ হাদিস শরীফ হতে বোঝা যায় যে, আলেম দুই প্রকার। যথা উলামায়ে হক্কানী বা প্রকৃত আলেম এবং উলামায়ে ছু অর্থাৎ অসৎ আলেম। আর উলামায়ে হক্কানীগণ হলেন নবীজির ওয়ারিশ বা নায়েবে নবী।
রাসুল (সঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আলেমগন নবীদের ওয়ারিশ| আর নবিদের মিরাশ সম্পদ নয়; বরং তাদের মিরাশ হলো ইলম| (তারা একমাএ ইলমকেই মিরাশ হিসাবে রেখে গেছেন)”__(তিরমিজি,আবূ দাউদ)
হাদিসে কুদসির মাধ্যমে এরশাদ করেছেন- ‘আল আউলিয়াউ তাহতা কাবাই লাইয়ারিফহুম গায়রি’ অর্থ- ‘আউলিয়াগণ আমার জুব্বার আড়ালে অর্থাৎ অতিশয় নিকটতম স্থানে অবস্থান করে। তাহাদিগকে আমি ব্যতীত অপর কেউই চিনিতে পারে না।’}
‘বুশেক আঁইইয়া’তি আ‘লান্নাছি জামানুল লা ইয়াবকা ফিল ইসলামি ইল্লা ইছমুহু ওয়ালা ইয়াবকা ফিল্ কুরআনি আল্লা রাছমুহু মাছাজ্বিদুহুম আ’মিরাতুঁউ ওয়া হুয়া খারাবুম মিনাল হুদা উ’লামাউহুম শাররু মান্ তাহ্তা আদীমিছ ছামায়ি মিন্ ইনদিহিম্ তাখরুজুল ফিতনাতু ওয়া ফীহিম তাউদু’।
অর্থাৎ: শীঘ্রই মানুষের উপর এক জামানা (সময়) আসবে যখন নাম ব্যতীত ইসলামের আর কিছুই বাকী থাকবে না, এবং কুরআনের রীত-রছুম ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। মসজিদ সমূহ আবাদ হবে কিন্তু আবাদকারীরা হবে হেদায়াত শূন্য (বিপথগামী) তাদের আলেমগন হবে আকাশের নীচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি, তাদের নিকট থেকে ফেৎনা ফাছাদ সৃষ্টি হবে এবং তাদের মধ্যে উহা ফিরে যাবে।
প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাব ‘মুয়াত্তা মালিক’ এর প্রনেতা হযরত ইমাম মালেক রাহ. শরিয়ত এবং মারেফত জ্ঞান সম্পর্কে বলেছেন “যে ব্যক্তি ইলমে শরিয়তের জ্ঞান হাসিল করলো কিন্তু মারেফত পরিত্যাজ্ঞ করলো সে ফাসেক। আর যে ব্যক্তি ইলমে মারেফতের জ্ঞান হাসিল করলো কিন্তু শরিয়ত মানলো না সে জিন্দিক(কাফের)। উভয় জ্ঞানে জ্ঞানীরাই হচ্ছে প্রকৃত আলেম”।
হাদিস থেকেই পাওয়া যাচ্ছে আলেম দুই প্রকার উলামায়ে হক্কানী বা প্রকৃত আলেম এবং উলামায়ে ছু অর্থাৎ অসৎ আলেম। আর উলামায়ে হক্কানীগণ হলেন নবীজির ওয়ারিশ বা নায়েবে নবী। এবং এও পাওয়া যায় আলেমগন হবে আকাশের নীচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি।
বর্ৎমান যা জানতে পারছি আলেম মানেই হচ্ছে মাদ্রাসায় পড়ুয়া দাড়ি, টুপি, জুব্বা, পাগড়ী লেবাসধারী হতে হবে টাইটেল পাস হতে হবে। আমার মনে প্রশ্ন জাগে প্রকৃত আলেম কি শুধু তারাই? এই প্রশ্ন জাগার কারণ হচ্ছে রাছুল সা. যখন হাদিস বর্নণা করেছেন। তখন তো কোন মাদ্রাসা ছিল না। আর আল্লা যদি এই আরবী পড়ুযা মানুষদেরই আলেম বলে উল্লেখ করে থাকেন তবে কেন তাঁর (আল্লার) প্রান প্রিয় হাবীবকে উম্মি করে রাখবেন। আমার মনে হয় আল্লা যে আলেম (জ্ঞানী) সম্পর্কে বলেছেন তারা কোন একটি বিশেষ দলের লোক নয়। আলেম (জ্ঞানী) অর্থাৎ যেকোন বিষয়ের উপর এক্সপার্ট অর্থাৎ বিজ্ঞ ব্যক্তিকে সে বিষয়ের আলেম(জ্ঞানী) বলা যেতে পারে।
যেহেতু আলেম সকলেই ভাল নয় সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিরাও আলেম শ্রেনীর অন্তর্গত হাদিস দ্বারাই প্রমান। তবে আল্লার রাছুল সা. আলেমদেরকে কেন রাছুল সা. ওয়ারিস বলবেন আমার চিন্তায় আসে না? আজ ঘুম থেকে জাগার পরই হঠাৎ আমার মাথায় এলো একটি বাক্য সেটির কোন দলিল আমার কাছে নেই। সেটি হচ্ছে “ইন্নাল আউলিয়ায়ে ওয়া রাসাতুল আম্বিয়া” অর্থাৎ-‘নিশ্চয়ই আউলিয়াগন (জ্ঞানী) হলো নবীর ওয়ারিশ।”
উপরোক্ত বাক্যটি যে হাদিস কিনা আমার জানা নাই এমনকি আমি হাদিস হিসাবে উল্লেখ করছি না। আমার কাছে “ইন্নাল উলামউ ওয়া রাসাতুল আম্বিয়া ” থেকে “ইন্নাল আউলিয়ায়ে ওয়া রাসাতুল আম্বিয়া” কথাটাই যুক্তিযুক্ত বেশী মনে হচ্ছে। কারণ আল্লা আউলিয়াগনকে নির্ভীক / তাঁর বন্ধু বলে উল্লেখ করছেন কিন্তু আলেমগনদের ব্যপারে এমন কিছুই বলেন নাই।
১০:৬২#“মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে”।
অন্য আয়াতে আল্লা বলছেন ২৫:১#“পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবর্তীণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হয়।” আরও বলেছেন ৩:১৬১# “কোন বিষয় গোপন করে রাখা নবীর কাজ নয়।” সে মতে আলেমগন অন্তত্য কোরআনের কোন আয়াত গোপন করার কথা নয়।
যে আলেমগন যারা নায়েবে নবী দ্বাবী করছেন তারা কি নিন্মের আয়াতগুলি কোথাও প্রকাশ করছেন গোপন করছেন না?
৪২:২৩#“বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কেবল আত্নীয়তাজনিত সৌহার্দ চাই”।
৩৬:২১#“অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত”।
২:১৭৪#“নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব”।
পবিত্র কোরআনে দাওয়াতের বিনিময় নেওয়ার কথা নিষেধ থাকার এবং গ্রন্থ (কোরআন) ফয়সালার বানী থাকতেও হাদিস কিয়াস দিয়ে দাওয়াতের বিনিময় গ্রহন করে সেটা কি আল্লার আদেশ অবমাননা করা নয়? যারা বিনিময় গ্রহন করে তাদের অনুস্মরণ করা আল্লার আয়াত ৩৬:২১ নিষেধ থাকার পরও আল্লার অবাধ্য হলে আল্লা খুশি হবে কি? আমার মনে হয় দল যত বড়ই হোউক আল্লার অবাধ্য হয়ে যাই করুন আল্লা খুশি হবেন না। এই জন্য আল্লা পবিত্র কোরআনে বলেছেন। “অধিকাংশ জ্বীন এবং ইনসান দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করব”-৭:১৭৯। জান্নাতের কথা বলেন নাই। এবং রাছুল সা. বলেছেন ৭৩ ফেরকার মধ্যে ৭২ ফেরকাই জাহান্নামী। এখনো চিন্তা করার সময় আছে।
বিনীত অনুরোধ:
আমি ব্যক্তি স্বার্থর জন্য কোন লেখা–লেখি করি না। আল্লা আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তিঁনার সৃষ্টির কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমার লিখা। আমার কোন পোষ্টে যদি আল্লার কোরআন এবং সহিহ হাদিস বিরোধী কিছু থাকে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ হবো। তবে লোক সংখ্যায় বড় দলের মতামত দিয়ে সত্য যাচাই করতে চাইলে সে সত্য আল্লার দরবারে গৃহিত হবে কিনা সেটা বিবেচনা করেই বিরোধীতা করবেন আশা রাখি।